ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আজ নরসিংদী হানাদার মুক্ত দিবস

গাজী হানিফ মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১১, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আজ নরসিংদী হানাদার মুক্ত দিবস

নরসিংদী সংবাদদাতা : নরসিংদী হানাদার মুক্ত দিবস আজ। মুক্তি বাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে ৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর পরাজয় ও আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে নরসিংদী পাক হানাদার মুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে দিনটি নরসিংদীবাসীর কাছে অত্যন্ত গৌরবোজ্জল ও স্মরণীয়। দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক খন্ড যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এসব যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন ১১৬ জন বীর সন্তান। এর মধ্যে নরসিংদী সদরের ২৭, মনোহরদীর ১২, পলাশে ১১, শিবপুরের ১৩, রায়পুরায় ৩৭ ও বেলাব উপজেলার ১৬ জন। এছাড়া বহু মা-বোনের নিরব আত্মত্যাগের বিনিময়ে নরসিংদী হানাদার মুক্ত হয়।

একাত্তরের মার্চে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে নরসিংদীতে ইপিআর, আনসার ও পুলিশ বাহিনীর সাথে মিলিত হয়। নরসিংদীবাসী তাদের স্বাগত জানায়। তারা নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে শত শত যুবকদের প্রশিক্ষণ দেয়। শুরু হয় প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও চোরাগুপ্তা হামলা।

স্থলপথে মুক্তিবাহিনীর প্রবল প্রতিরোধে টিকতে না পেরে ৪ এপ্রিল পাক বাহিনীর বোমারু বিমান নরসিংদী শহরে বোমাবর্ষণ শুরু করে। এতে শহীদ হন আব্দুল হক ও নারায়ণ চন্দ্র সাহাসহ নাম না জানা আরো ৮ জন। ২৩ মে তৎকালীন মুসলীম লীগ নেতা মিয়া আব্দুল মজিদ মুক্তি সেনাদের গুলিতে নিহত হন। এর পরেই পাক বাহিনী নরসিংদী টেলিফোন ভবনে ঘাঁটি স্থাপন করে। স্থানীয় দালাল ও রাজাকারদের যোগসাজসে হানাদার বাহিনীরা প্রতিদিন চালায় ধর্ষণ, নরহত্যা ও লুটতরাজ।

অপরদিকে নরসিংদী সদর উপজেলায় নেহাব গ্রামের নেভাল সিরাজের নেতৃত্বে হানাদার প্রতিরোধ দূর্গ গড়ে তোলা হয়। ওই স্থান থেকে সমগ্র জেলায় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের তৎপরতা অব্যাহত রাখে।

নরসিংদীকে মুক্ত করতে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা যেসব স্থানে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন সেগুলো হচ্ছে- নরসিংদীর সদরের বাঘবাড়ি, পালবাড়ি, আলগী, পাঁচদোনা, পুটিয়া, চলনদীয়া। মনোহরদীর হাতিরদীয়া বাজার, রায়পুরা উপজেলার শ্রীরামপুর বাজার, রামনগর, মেথিকান্দা, হাটুভাঙ্গা, ভাঙালীনগর, খানাবাড়ি সাবেক নারায়ণপুর বর্তমানে বেলাব উপজেলার অন্তগর্ত ও বেলাব উপজেলার বেলাব বাজার, বড়িবাড়ি ও নীলকুঠি ।

এ সময় আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড়ে বেলাব বড়িবাড়ির নীলকুঠির যুদ্ধে হানাদারদের হাতে শহীদ হন সুবেদার আবুল বাশার, মমতাজ উদ্দিন, আব্দুস সালাম ও আব্দুল বারী।

পাক হানাদার বাহিনী বড়িবাড়ি বাজারের নিরীহ ৮/১০ জনকে ধরে এনে এক সাথে গুলি করে হত্যা করে এবং বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়।

স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য অবদানের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে খেতাব ভূষিত হয়েছেন নরসিংদীর ৬ জন। তারা হলেন- ফ্লাইট লেঃ শহীদ মতিউর রহমান বীরশ্রেষ্ঠ, নেভাল সিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ বীরপ্রতিক, লেঃ কর্ণেল আব্দুর রউফ বীর বিক্রম, সুবেদার খন্দকার মতিউর রহমান বীর বিক্রম,বিগ্রেডিয়ার (অবঃ) এ.এস.এম নুরুজ্জামান বীর বিক্রম ও লেঃ কর্ণেল (অবঃ) নুরুল ইসলাম ভূইয়া বীর বিক্রম।

এ জেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে সমুন্নত রাখতে স্বাধীনতার ৩৪ বছর পর ২০০৫ সালে নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিফলক নির্মিত হয়। এদিকে আজ নরসিংদী মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করা হয়েছে।



রাইজিংবিডি/নরসিংদী/১২ ডিসেম্বর ২০১৭/গাজী হানিফ মাহমুদ/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়