ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

উন্নয়নের জন্য গাছগুলো কাটা আত্মধ্বংসী

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২২, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
উন্নয়নের জন্য গাছগুলো কাটা আত্মধ্বংসী

নিজস্ব প্রতিবেদক : যে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের আগে তার পরিবেশগত প্রভাব বিচার করা জরুরি। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি বারবার উপেক্ষিত হচ্ছে। উন্নয়নের জন্য যশোরে সড়কের গাছগুলো কাটা হবে আত্মধ্বংসী।

মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি গোলটেবিল কক্ষে ‘উন্নয়নের নামে যশোর রোডের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, প্রকৃতি ও ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী বৃক্ষ নিধণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে’ এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বক্তার বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেও যশোরের এ সড়কটির রয়েছে ঐতিহাসিক অবস্থান। লাখ লাখ শরণার্থী ভারতে গিয়েছিল এই সড়ক ধরে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ যুদ্ধ- এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। ফিরে গিয়ে তিনি লিখেছিলেন তার ঐতিহাসিক কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’। স্মৃতি বিজড়িত এই রাস্তাটি ৪ লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের শংকা হলো, চার লেন করার জন্য রাস্তার দুই পাশে থাকা ২ হাজার ৩১২টি গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। উন্নয়নের জন্য শতবর্ষী এই গাছগুলো কেটে ফেলা হবে একটি আত্মধ্বংসী উদ্যোগ।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, তরুপল্লব, ব্লু প্ল্যানেট ইনিশিয়েটিভ, নাগরিক উদ্যোগ, গ্রীন ভয়েস, যশোর জেলা সমিতি, ঢাকা-র উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

বাপা’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এতে পাওয়ার পয়েন্টে তথ্য উপস্থাপন করেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব ও লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তরুপল্লব-এর সাধারণ সম্পাদক মোকারম হোসেন।

বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক ও তরুপল্লব-এর সহসভাপতি মোঃ শাহজাহান মৃধা, বাপা’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিদুল হক খান, বাপা’র যুগ্মসম্পাদক মোঃ আলমগীর কবির, যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল আলম খান, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও বাপা ও আয়োজক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং যশোরের স্থানীয় সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

মিহির বিশ্বাস বলেন, ‘উন্নয়নের নামে বহু আত্মবিনাশী পরিকল্পনা কারণে একদিকে পৃথিবী মনুষ্য বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ কিন্তু দুর্নীতির বিস্তার ঘটিয়ে এক শ্রেণির মানুষ আপন স্বার্থ উদ্ধার করে। দেশে অর্থনৈতিক অন্তর্ঘাত লাগিয়ে দিয়ে অপকর্ম করে। এই প্রকল্পটিও অপরিকল্পিত ও অবিবেচনাপ্রসূত।’

মোঃ শাহজাহান মৃধা বলেন, ‘যশোর রোডের এই বৃক্ষের সঙ্গে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, ঐতিহ্য, আবেগ জড়িত ।’ তাই এই স্মৃতি যাতে কোন প্রকার বিনষ্ট না হয় সেজন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর আহবান জানান।

মহিদুল হক খান বলেন, ‘স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় পরিবেশবাদীদের বৃক্ষ রক্ষার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘পরিবেশগত বা সামাজিক অথবা অর্থনৈতিক প্রাক সমীক্ষা ছাড়া এধরণের প্রকল্প গ্রহণ আইনগতভাবে নীতিবিরুদ্ধ। তাছাড়া ২ লেনের পরিবর্তে ৪ লেন নয়, মাত্র ৫ মিটার সড়ক বর্ধিতকরণের নামে প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ স্কয়ার মিটার আচ্ছাদন দানকারী বৃক্ষরাজি নিধণের পরিকল্পনা ভয়ংকর ভাবে পরিবেশবিদ্বেষী। অন্যদিকে আমাদের বাংলাদেশের সাইডে যশোর রোডে যে পরিমান বৃক্ষ রয়েছে তা ২১০ একর বনভূমির সমান, যা মরুকরণের বিরুদ্ধে বিশাল ভূমিকা রেখে চলেছে।’

আমিরুল আলম খান প্রস্তাব রেখে বলেন, ‘গাছগুলো রেখেই সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব।’ এজন্য তিনি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি সমীক্ষা গ্রহণের আহবান জানান।

মোকারম হোসেন বলেন, ‘সীমান্তের ওপারে এই সড়কটি পরিচিত ‘যশোর রোড’ নামে। সীমান্তের ওপারেও রাস্তা চওড়া হয়েছে কিন্ত একটা গাছও কাটা হয়নি। গাছ না কেটেও রাস্তা চওড়া করা যায় তা সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীরা মনে করে। বৃক্ষ ও মানুষ একে অপরের পরিপূরক, বৃক্ষ ছাড়া পরিবেশ রক্ষা করা যায় না।’

আলমগীর কবির বলেন, ‘দুইপাশে শুধু ৫ মিটার প্রশস্ত করা হবে। অর্থাৎ যে রাস্তাটা এখন ৭.৩ মিটার আছে, সেটি দুই পাশে ৫ মিটার বেড়ে সর্বমোট ১২.৩ মিটার হবে। এর পুরোটা আবার রাস্তাও নয়। এক মিটার করে খালি জায়গা থাকবে। অর্থাৎ রাস্তা বাড়ছে মোট ৩ মিটার। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে মাত্র ৩ মিটার রাস্তা বাড়ানোর জন্য আমরা কতখানি ক্ষতি স্বীকার করতে প্রস্তুত। আমাদেরকে যেকোনো মূল্যে এই গাছ কাটা রুখে দিতে হবে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ জানুয়ারি ২০১৮/সাওন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়