ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘অস্ত্র ব্যবহার ও প্রদর্শনকারীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা’

হাসান উল রাকিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১০, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘অস্ত্র ব্যবহার ও প্রদর্শনকারীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা’

নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে যে সমস্ত বৈধ-অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার ও প্রদর্শন হয়েছে, তা শনাক্ত করে ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মঈনুল হক। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপার তার কার্যালয়ে গণমাধ্যমের কর্মীদের এ কথা জানান। তিনি জানান, সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মেয়র আইভী বা সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সমর্থকদের পক্ষ থেকে মামলা হয়নি।

ফুটপাতে হকার বসানো নিয়ে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের দ্বন্দ্বে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গত মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।

সংঘর্ষে দুই পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হন, যার মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শহরের মুক্তি জেনারেল হাসপাতালের সামনে শামীম ওসমানের সমর্থক ও হকাররা মেয়র সমর্থকদের লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকে। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলতে থাকে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইট ছোড়াছুড়ি। সংঘর্ষে আহত পুলিশ-সাংবাদিকসহ অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এর মধ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতে উদ্যত হতে দেখা যায় কয়েকজনকে। যে দৃশ্যের ভিডিও এবং ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। 

সহিংস হামলার ঘটনার দিন পুলিশ পক্ষপাতিত্ব করেছে বলে শামীম ওসমান ও   আইভীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নাকচ করে পুলিশ সুপার দাবি করেন, পুলিশ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তিনি জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি জিডি করেছে।

বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও র‌্যাবের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দারকে আহ্বায়ক করে এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান, র‌্যাব-১১ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বাবুল আক্তারকে সদস্য করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

হকারদের ব্যাপারে পুলিশ সুপার জানান, নারায়ণগঞ্জ নগরীর প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়ক ব্যতিত কয়েকটি সড়কে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের বসতে দেওয়া হবে। বুধবার জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের এক বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন থেকে বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হকাররা বেচাকেনা করতে পারবে। তবে এ সিদ্ধান্ত সাময়িক সময়ের জন্য। পরবর্তীতে তাদের স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যাপারে মেয়র ও সংসদ সদস্যদের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি জানান, চলমান শীত মৌসুম হকারদের মজুদকৃত পোশাক ও মালামাল বিক্রি করে তারা যেন পুঁজি তুলে আনতে পারে, সেই দিক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হকার সংগঠনের নেতারা এই সিদ্ধান্ত আপাতত মেনে নিয়েছে। বর্তমানে এই নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।

এ ব্যাপারে হকারদের নেতা আসাদুল ইসলাম বলেন, ২৫ দিন আন্দোলনের পর জেলা প্রশাসন সিটি মেয়র আইভীর সঙ্গে বৈঠক করে বঙ্গবন্ধু সড়ক ব্যতিত শাখা সড়কে বসার অনুমতি দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মাত্র ২৫ শতাংশ সমস্যা সমাধান হয়েছে। কারণ বঙ্গবন্ধু সড়কে ৭৫ শতাংশ হকার বসে। আমাদের দাবি প্রশাসন যেন এই ৭৫ শতাংশ হকারের সমস্যা দ্রুত সমাধান করে।’’

সংঘর্ষের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘‘হাকাররা রুটি-রুজির আন্দোলন করছিল। তাদের আন্দোলনে কেউ ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করছে কি না- সেটা আমাদের দেখার বিষয় না।’’

তিনি বলেন, সংঘষের দিন যখন হকারদের চৌকি ভেঙে মারধর, তাদের মালামাল নিয়ে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, তখন হকাররা আত্মরক্ষার্থে পাল্টা ঢিল ছুড়েছে।



রাইজিংবিডি/নারায়ণগঞ্জ/১৮ জানুয়ারি ২০১৮/হাসান উল রাকিব/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়