ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম বন্ধে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি’

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২১, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম বন্ধে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি’

নিজস্ব প্রতিবেদক, সংসদ থেকে : ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম, দুর্ণীতি এবং লুটপাট বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সরকার ও বিরোধীদলের সদস্যরা। তারা ঋণখেলাপীদের তালিকা প্রকাশ এবং ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা অনিয়ম, দুর্ণীতি ও লুটপাটে সহায়তা করছেন তাদের নাম গণমাধ্যমে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের দশম অধিবেশনে ‘ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠনগুলোকে অনিয়ম ও ত্রুটিমুক্তভাবে পরিচালিত করার জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হউক’ শীর্ষক সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার এবং বিরোধীদলের সদস্যরা এই দাবি জানান।

সরকার ও বিরোধীদলের সদস্যরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। টানা নয় বছরে এদেশের ব্যাপক উন্নয়ন অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। কিন্তু ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম, দুর্ণীতি ও লুটপাট সরকারের সব অর্জন শেষ করে দিচ্ছে। তারা নতুন নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ারও বিরোধীতা করেন।

সরকারদলীয় সদস্য ইসরাফিল আলম (নওগা-৬ আসন) বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের আলোকে বিষয়টি উত্থাপন করেন। তার এই প্রস্তাবের অনুকূলে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার, বেগম দিলারা বেগম, বেগম ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি, বেগম নূরজাহান বেগম, মো. মনিরুল ইসলাম, বেগম উম্মে রাজিয়া কাজল এবং বিরোধীদল জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান।

পরে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তার (অর্থমন্ত্রীর) অনুরোধে ইসরাফিল আলম এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নেন। এর আগে প্রস্তাবটি উত্থাপন করার স্বপক্ষে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, আর্থিক খাত ও ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে সবসময় কোনো না কোনো বিতর্কে আমাদেরকে প্রায়ই বিব্রত, বাকরুদ্ধ ও হতাশ হতে হয়। যারা আইন প্রয়োগের দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের ব্যর্থতার কারণে ব্যাংকিং সেক্টর এই সংকটে পতিত হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগকেও বিব্রত হতে হচ্ছে। ব্যাংক খাতে এই বিশৃঙ্খলার কারণে দেশের আর্থিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে রাষ্ট্রের সুশাসন ব্যহত হয়। ব্যাংক থেকে নামে বেনামে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের পরিচালকসহ দায়িত্বপ্রাপ্তরা এর সঙ্গে জড়িত, এটা সাদা চোখেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথাযথ ছিল না। অনেক ব্যাংকের জন্য সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকা জোগান দিতে হচ্ছে। এই টাকা সাধারণ মানুষের ঘাম ঝরানো টাকা। সাধারণ মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে আস্থা পায় না, এই নজির বাংলাদেশে কম ছিল।’

ইসরাফিল আলম বলেন, ‘সরকারের সফলতা ম্লান করে দিচ্ছে ব্যাংকিং সেক্টরের এই ব্যর্থতা। কারা এই টাকা লুটপাট করেছে, কারা এর সঙ্গে জড়িত, এদের নাম তালিকা ওয়েব সাইডে প্রকাশ করতে হবে। সরকারের এতো সফলতা, এতো উন্নয়ন সব ম্লান করে দিচ্ছে ব্যাংক লুটপাট। মানুষ তার কস্টার্জিত অর্থ ব্যাংকে রাখে। সেই টাকা আর ফেরত পাওয়া যায়না। এর চাইতে দুর্ভাগ্য আর কি হতে পারে।’

ইসরাফিল আরো বলেন, ‘যেসব ব্যাংক শর্ত পূরণ করতে পারছেনা তাদের লাইসেন্স কেনো বাতিল করা হচ্ছেনা। শেয়ার বাজারের লুটপাট অনিয়ম নিয়ে ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত রিপোর্ট আজো প্রকাশিত হচ্ছেনা। এই রিপোর্ট প্রকাশ করা জরুরী।’

পরে ইসরাফিল আলমের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সমর্থন করে দেওয়া বক্তব্যে সরকারি দলের সদস্য অ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার বলেন, ‘ব্যাংক খাতে যে অনিয়ম হচ্ছে তা দূর করতে হবে। সরকারের সব সফলতা ম্লান করে দিচ্ছে ব্যাংক খাতের এই অনিয়ম।’

অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি বলেন, ‘সরকার জনগণের সেবক। জনগণের জানমাল ও অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি।’

উম্মে রাজিয়া কাজল বলেন, ‘ব্যাংক খাতে যা চলছে তা চলতে পারেনা। কঠোর হাতে ব্যাংক খাতের অনিয়ম ও লুটপাট বন্ধ করতে হবে।’

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন করে যাচ্ছে। আমরা ক্রমশ: অর্থনৈতিক সূচকে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ব্যাংকিং খাত আমাদের সব অর্জন ধ্বংস করে দিচ্ছে।’

নূরজাহান বেগম মুক্তা প্রস্তাবটি সমর্থন করে বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এদেশের অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। ব্যাংক খাতের অনিয়ম যে কোনও মূল্যে দূর করতে হবে।’

জাতীয় পার্টির সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, ‘ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম ও দুর্ণীতি বেড়ে বাড়ছে। ব্যাংকিং খাত এখন পারিবারিক ব্যাংকিং খাতে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থা চলতে পারেনা। তিনি বলেন, পুরো ব্যাংকিং খাতে সংস্কার প্রয়োজন। 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ জানুয়ারি ২০১৮/আসাদ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়