ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সহপাঠীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় রাজিনকে হত্যা

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৮, ২১ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সহপাঠীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় রাজিনকে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা : সহপাঠীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বখাটের ছুরিকাঘাতে জীবন দিতে হয়েছে খুলনা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ফাহমিদ তানভীর রাজিনকে (১৩)।

শনিবার রাত সোয়া ৯টায় কলেজ ক্যাম্পাসে কনসার্ট চলাকালে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। রাজিন হত্যাকাণ্ডে স্তম্ভিত তার শিক্ষক ও সহপাঠীরা। তারা হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার কলেজ ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যার পর জড়িত সন্দেহে পুলিশ শনিবার রাতেই অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা রাজিনের সহপাঠী ও বন্ধু। এ ঘটনায় রাজিনের বাবা শেখ জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে নগরীর খালিশপুর থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৮-১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।

কলেজ কর্তৃপক্ষ হত্যার কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। নিহত রাজিন খুলনা মহানগরীর বড় বয়রার পালপাড়া সড়কের শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও খুলনা মেট্রো পুলিশ লাইনস স্কুলের শিক্ষিকা রেহানা খাতুনের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, রাজিন, তার মার সহকর্মীর মেয়ে মৌমিতা ও তৃষা একসঙ্গে কোচিং সেন্টারে পড়তে যেত। কোচিংয়ে যাওয়া-আসার পথে মৌমিতা ও তৃষাকে একই এলাকার বখাটে ফাহিম ইসলাম মনি ও আসিফ প্রান্ত আলিফ উত্ত্যক্ত করত। এতে রাজিন প্রতিবাদ করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ গত শুক্রবার বখাটে মনির সঙ্গে রাজিনের বাগবিতণ্ডা হয়। যার জের ধরে পাবলিক কলেজের ৩১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও প্রাক্তন ছাত্রদের পুনর্মিলনী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষ দিন শনিবার রাত সোয়া ৯টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়।

বিকেল ৫টার দিকে রাজিনের বন্ধু ও সহপাঠী শাহিনুর রহমান সাগর ফোন দিয়ে রাজিনকে কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ডেকে নিয়ে যায়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে পূর্বপরিকল্পিতভাবে রাত সোয়া ৯টায় ফাহিম ইসলাম মনি, তার বন্ধু আসিফ প্রান্ত আলিফ, রয়েল, সানি ইসলাম ওরফে আপন, জিসান খান ও তারিন হাসান রিজভীসহ সাত/আটজন তাকে কনসার্ট স্থলের পূর্বপাশে নিয়ে মারপিট করে। একপর্যায়ে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। আশংকাজনক অবস্থায় দ্রুত তাকে কলেজ কর্তৃপক্ষ গাড়িতে তুলে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রোববার বেলা ১১টায় নিহত রাজিনের বাসায় গিয়ে দেখা যায় শোকার্ত মানুষের ভিড়। পাড়া-প্রতিবেশীদের সকলেই তার মৃত্যুতে শোকাহত। প্রতিবেশী মোকলেছুর রহমান বলেন, রাজিন ভদ্র ছেলে ছিল। তার এই মৃত্যু তারা মানতে পারছেন না। তারা এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান। রাজিনের মা শোকে বিলাপ করতে করতে বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন।

খবর পেয়ে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, জেলা প্রশাসক আমিন উল আহসান, কলেজের অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর আলম ও ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) আব্দুল্লাহ আরেফ হাসপাতাল ও নিহতের বাড়িতে যান।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ রাতেই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলো- নগরীর মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ও সেনা সদস্য আলমগীর হোসেনের ছেলে আসিফ প্রান্ত আলিফ (১৬), নগরীর বড় বয়রা মেইন রোডস্থ আফজালের মোড় এলাকার জাকির হোসেন খানের ছেলে মো. জিসান খান ওরফে জিসান পারভেজ (১৬), বড় বয়রা মেইন রোড এলাকার মো. আহাদ হোসেনের ছেলে তারিন হাসান ওরফে রিজভী (১৩), রায়েরমহল মুন্সিবাড়ির চিনির ভাড়াটিয়া সাইদ ইসলামের ছেলে মো. সানি ইসলাম ওরফে আপন (১৩), বড় বয়রা সবুরের মোড় এলাকার লিয়াকত হোসেনের ছেলে রয়েল (১৪) এবং মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ও মোংলা থানার এসআই ওহিদুর রহমানের ছেলে শাহিনুর রহমান ওরফে সাগর (১৩)। এদের মধ্যে সাগর ছাড়া অন্যদের মামলায় আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে মনি পলাতক রয়েছে।

এ ব্যাপারে খালিশপুর থানার ওসি (তদন্ত) আবুল খায়ের বলেন, এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

দুপুরে পোস্টমর্টেম শেষে রাজিনের লাশ খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বয়রা মধ্যপাড়া জামে মসজিদে বাদ জোহর এবং বিকেল ৩টায় কলেজ ক্যাম্পাসে তার জানাজা হয়। পরে বাদ আছর পাইকগাছা উপজেলার হিতামপুর গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।



রাইজিংবিডি/খুলনা/২১ জানুয়ারি ২০১৮/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়