ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রোহিঙ্গারা দাবি পূরণ না হলে দেশে ফিরতে চায় না

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ২২ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোহিঙ্গারা দাবি পূরণ না হলে দেশে ফিরতে চায় না

কক্সবাজার প্রতিনিধি : ‘মিয়ানমার আমাদের নিজদেশ; সেখানে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কিছু শর্ত আছে- এগুলো মেনে নিতে হবে। তাহলেই আমরা যাব। এর আগে বাংলাদেশে মরে গেলেও নিজদেশ মিয়ানমার ফিরে যাব না।’- এভাবেই নিজদেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে দাবি পূরণের কথা বলছিলেন টেকনাফের দমদমিয়া অস্থায়ী ক্যাম্পের মাজেদা বেগম (৩৫)।

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে গত ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই বিক্ষোভ শুরু করেছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় থাকা অনেক রোহিঙ্গা। দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটিরি চুক্তির বাইরে নুতন করে ছয়টি শর্ত দিয়ে কয়েক দিন ধরেই কক্সবাজারের বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা শিবিরে বিক্ষোভ করছে তারা।

বিক্ষোভকারীরা যে শর্ত তুলে ধরেন তা হলো- এক. ফেরত পাঠানোর আগে মিয়ানমারে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেখানে জাতিসংঘ বাহিনী মোতায়েন। দুই. রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে হবে। তিন. মিয়ানমারে মসজিদ মাদ্রাসা খুলে দিতে হবে, স্বাধীনভাবে যাতে নামাজ আদায় যায় ও ছেলেমেয়েদের যাতে মাদ্রাসা শিক্ষা দিতে পারা যায়, সেই ব্যবস্থা করে দিতে হবে। চার. মিয়ানমারে সকল ধর্মের লোকজন যেভাবে চলাফেরা করতে পারে, সেভাবে রোহিঙ্গাদেরও চলাফেরা করার সুযোগ দিতে হবে। পাঁচ. মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জমি-জমা, ধন-সম্পত্তি, ছেলেমেয়ে মারা গেছে; এসব কিছুর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ছয়. মিয়ানমারে বার্মিজ লোকজন যেভাবে নিজদেশে ঘুরে বেড়ায় সেভাবে রোহিঙ্গাদেরও ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ করে দিতে হবে।

এ সব দাবি পূরণ না হলে আবার মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের মুখে পড়তে হবে বলে মনে করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। তাই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারে ফেরত না যাওয়ার কথা বলছে তারা।

টেকনাফের দমদমিয়া অস্থায়ী ক্যাম্পের মাঝি নুরুল আমিন (৩৫) বলেন, “জাতিসংঘের বিশেষ দূত আমার সঙ্গে আলাপ করেছেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন- আমাদের কোনো সমস্যা আছে কিনা...? আমি বলেছি,- আমরা খুবই ভালো আছি। খাদ্যসহ যাবতীয় সব সেবা এখানে পাচ্ছি। কোনো সমস্যা নেই আমাদের। তারপর মিয়ানমারে চলে যাব কি না জিজ্ঞেস করলে আমি বলি-  মিয়ানমারে যাব না; যদি আমাদের শর্তগুলো মেনে নেয় তাহলে আপনারা আমাদের পাঠালে খুশি হয়ে মিয়ানমারে চলে যাব।’’

টেকনাফের নয়াপাড়া নতুন ক্যাম্পে আসিফ আরকানী (৩০) বলেন, “আমরা দাবি দাওয়া নিয়ে বিশ্বকে দেখাতে চাই যে আমাদের অধিকার আমাদের দিলে আমরা চলে যাব। এখন যদি মিয়ানমার আমাদের নিয়ে যায় তাহলে কিছু দিন পর আবার অবশ্যই আমাদের বাংলাদেশে চলে আসতে হবে। যদি জেনেভায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে শর্তগুলো উত্থাপন করেছেন, সেগুলো মেনে নেয় তাহলে আমরা খুশি মনে মিয়ানমার চলে যাব। এর আগে মরে গেলেও মিয়ানমার যাব না”

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহামুদুল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের সুষ্ঠুভাবে ফেরাতে যখন চুক্তি করেছে; ঠিক তখনই বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা কীভাবে বিক্ষোভ করে। দাবি দাওয়া নিয়ে রোহিঙ্গাদের এই বিক্ষোভ আসলে তাদের নয়, এটি দেশি-বিদেশি এনজিও সংস্থার ষড়যন্ত্রই অংশ। কারণ রোহিঙ্গারা এদেশে থাকলে এনজিও সংস্থারগুলোর কার্যক্রম চলবে।

তবে রোহিঙ্গাদের এসব শর্ত বা দাবি নিয়ে সরকার চিন্তিত নয়- জানিয়ে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে তৎপরতা অব্যাহত আছে বলছেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দায়িত্বে থাকা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম।

তিনি বলেন, ‘‘চুক্তি অনুযায়ী, দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা। ইতিমধ্যে সেটা শুরু করেছি। ২৩ জানুয়ারি রোহিঙ্গাদের পাঠানো শুরুর কথা বলে মিয়ানমার বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’’

মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘‘প্রত্যাবাসনের প্রথম কাজ হচ্ছে রূপরেখা তৈরি, এটা করা হয়েছে। এরপর প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত কাজ। তারপর ফেরত পাঠানো।।’’ 

তিনি বলেন, নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের অনেকগুলা করণীয় আছে। এসব কাজের জন্য সময় দিতে হবে, যার বেশির ভাগ মিয়ানমারের করণীয়। ট্রানজিট ক্যাম্প করতে হবে। পাঁচটি ট্রানজিট ক্যাম্প করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অন্তত দুটি দ্রুত করতে হবে। দুটি ট্রানজিট ক্যাম্পের জন্য প্রাথমিকভাবে জায়গা ঠিক করা হয়েছে। একটি টেকনাফ নয়াপাড়া বন্দরে, এটা নদীপথের জন্য। অপরটি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, স্থলপথের জন্য।



রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/২২ জানুয়ারি ২০১৮/সুজাউদ্দিন রুবেল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়