ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে

শাহরিয়ার সিফাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
টাঙ্গাইলে সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল : স্বল্প সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন টাঙ্গাইলের চাষীরা। সামান্য পরিচর্যা আর স্বল্প খরচে চাষ হওয়ায় বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করছেন তারা।

অগ্রহায়ণ-মাঘ মাসের সময় থেকেই টাঙ্গাইলের ফসলি জমিগুলোয় দেখা যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে সরিষার ক্ষেত। আমন ধান কাটার পর কয়েক মাসের জন্য পরিত্যক্ত থাকে কৃষকের জীবিকার একমাত্র উৎস এই কৃষিজমি। আর সেই জমিতেই অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন টাঙ্গাইলের কৃষকরা।

আমন ধান কাটা শেষ হলে ফসলি জমিতে বীজ ছিটিয়ে আর হালকা চাষ দিয়ে করা যায় সরিষার আবাদ। এই শস্য আবাদের পর এ জমিতে অন্য ফসল বেশ ভালো হয়ে থাকে। আমন আর বোরো ধান আবাদের মাঝে যে সময় জমি পতিত থাকে, সে সময় আবাদ হওয়া সরিষার তেমন উৎপাদন খরচ নেই। এছাড়াও একই সময়ে ক্ষেতে জৈব সারের অভাবও পূরণ হয়ে যায়, ফলে বাড়তি খরচ থেকে রক্ষা পায় কৃষক। কারণ বোরো আবাদে প্রচুর সারের প্রয়োজন হয়। সরিষার আবাদের ফলে পরবর্তী ফসলে খরচ কমে আসে।

টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কার্তিক মাসে আমন ধান কাটার সপ্তাহখানেক আগেই পাকা ধানক্ষেতে প্রতি বিঘা জমিতে দুই কেজি সরিষা ছিটিয়ে দিতে হয়। এরপর কয়েক দিনের মধ্যে চারা গজিয়ে গেলে কৃষক ধান কাটা শুরু করেন। পরে ওই জমিতেই বেড়ে উঠতে থাকে সরিষা গাছ। বাড়তি পরিশ্রম ছাড়াই ৬০ থেকে ৭০ দিনে এ সরিষা কৃষক সংগ্রহ করতে পারেন। ভালো বীজ হলে এক বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১৫ মণ সরিষা হয়ে থাকে। সরিষা সংগ্রহ শেষে ওই জমিতেই কৃষকরা বোরো চাষ করে থাকেন।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ২৮ হাজার ৪০৮ হেক্টর জমিতে সরিষার বীজ রোপণ করা হয়েছে। তার মধ্যে টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর, বাসাইল উপজেলায় ২ হাজার ৩৭৫ হেক্টর, কালিহাতী উপজেলায় ৭২০ হেক্টর, ঘাটাইল উপজেলায় ১ হাজার ৪৪৫ হেক্টর, নাগরপুর উপজেলায় ৯ হাজার হেক্টর, মির্জাপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৪৯০ হেক্টর, মধুপুর উপজেলায় ১৫১ হেক্টর, ভূঞাপুর উপজেলায় ১ হাজার ২২৩ হেক্টর, গোপালপুর উপজেলায় ২ হাজার ২৭০ হেক্টর, সখীপুর উপজেলায় ৬৮০ হেক্টর, দেলদুয়ার উপজেলায় ১ হাজার ১ হাজার ৩৭০ হেক্টর ও ধনবাড়ী উপজেলায় ১৭৮ হেক্টর জমিতে সরিষা রোপণ করা হয়েছে।



টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার সরিষা চাষী মোহাম্মদ কাইজুদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে এই সরিষা চাষ করছি। অন্যান্য ফসল থেকে সরিষা চাষ তুলনামূলক লাভজনক। কার্তিক মাসে আমন ধান কাটার পর আমরা সরিষার বীজ বুনি। বীজ বুনার পর তিনটি চাষ দিতে হয়। মাঘ মাসে আমরা সরিষা চাষ ঘরে তুলতে পারি। আর এই সরিষা চাষের পর সেই জমিতে ইরি ধান চাষে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

দুখীরাম মন্ডল নামের এক ষাটোর্ধ্ব চাষী রাইজিংবিডিকে বলেন, সরিষা চাষে প্রতি পাখীতে আমাদের সার ও অন্যান্য খরচসহ মোট ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। আর তাতে পাখীপ্রতি ৬-৭ মণ সরিষা পাওয়া যায়। আর সেই সরিষা বিক্রি করে ৮-১০ হাজার টাকা লাভ থাকে।

তবে চলতি মৌসুমে জেলায় অসময়ে অতিবৃষ্টির ফলে গেল বছর থেকে প্রায় ১১ হাজার হেক্টর কম জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। তাছাড়া জানুয়ারি মাসের শুরুতে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের ফলে অনেক সরিষা ফুলে পচন ধরেছে। এতে করে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষীরা।

রামদাস সরকার নামের বাসাইলের এক সরিষা চাষী জানান, এ বছর ১০ পাখী জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। কিন্তু জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের তীব্র শৈত্যপ্রবাহের পর প্রায় দেড় পাখী জমির সরিষার ফুলে পচন দেখা দিয়েছে। এর আগে অসময়ের বৃষ্টিতে আরও ক্ষতি হয়েছে। কুয়াশায় সরিষার ফুল পচে গিয়ে পড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া মাটির নিচে এক ধরনের পোকার আক্রমণের সৃষ্টি হয়েছে। এই পোকা গাছের গোড়া কেটে দিচ্ছে।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক রাইজিংবিডিকে বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষা একটি দ্রুত অর্থকরী ফসল। টাঙ্গাইল জেলায় বর্তমানে দুই ধরনের সরিষার আবাদ হচ্ছে। একটি দেশীয় জাতের সরিষা ও অন্যটি উন্নত জাতের সরিষা। উন্নত জাতের মধ্যে বারি-১৪, ১৫ ও ১৭ জাতের সরিষা এখানে আবাদ হচ্ছে। এছাড়া দেশি জাতের টরি বা মাঘী সরিষার আবাদ করা হচ্ছে। দেশি জাতের সরিষা থেকে উন্নত জাতের সরিষায় দ্বিগুণের বেশি ফলন হয়। চলতি বছর জেলায় ২৮ হাজার ৪০৮ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। আশা করছি এ থেকে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হবে। তবে এ বছর বর্ষা ও নভেম্বরের টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে সরিষার কম চাষ হয়েছে। নিচু জমিতে সরিষার বীজ বোনার সময়ে পানি চলে আসায় অনেক কৃষক সরিষা বুনতে পারেননি। গত বছর আমাদের ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে ৪১ হাজার ২৭১ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হয়। এ বছর প্রায় ১১ হাজার হেক্টর কম জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।



রাইজিংবিডি/টাঙ্গাইল/৩০ জানুয়ারি ২০১৮/শাহরিয়ার সিফাত/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়