ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘বোন হত্যার বিচার পেয়েছি, এখন মরেও শান্তি পাবো’

শাহরিয়ার সিফাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বোন হত্যার বিচার পেয়েছি, এখন মরেও শান্তি পাবো’

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল : রূপা হত্যার বিচারে খুশি রূপার পরিবার। মামলার রায় উপলক্ষে আজ সকালে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয় রুপার পরিবারের সদস্যরা। রায়ের পর তাদের আহাজারীতে ভারি হয়ে ওঠে পুরো আদালত চত্বর।

প্রিয়জনকে ফিরে না পেলেও, খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির রায় হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন রূপার বড়ভাই ও তার বোন।

রায়ের পর রাইজিংবিডিকে রূপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান প্রামাণিক বলেন, ‘আজকের এই রায়ে আমরা খুশি। এই রায়ের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আর তাই আমরা খুবই আনন্দিত। আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। বোনের হত্যার দোষীরা শাস্তি পাওয়ায় এখন মরেও শান্তি পাবো।  এই মামলার জন্য সারা পৃথিবীর মানুষ তাকিয়ে ছিলো। আমার বোনকে এতো কষ্ট দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেই কথা মনে হলে আমরা কেউ ঘুমাতে পারতাম না।’

রায় হলেও, আসামীদের দ্রুত শাস্তি বাস্তবায়নের দাবি করেছেন রূপার ছোট বোন পপি খাতুন। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘চার আসামীর ফাঁসির রায় হলেও, অপর এক আসামীকে সাত বছরের জেল দিয়েছে আদালত। আমরা তারও কমপক্ষে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড আশা করেছিলাম। তারপরও আমরা এই রায়ে খুশি। তবে দ্রুত যেন এই রায় বাস্তবায়ন করা হয়, সেই দিকে সবার লক্ষ্য রাখতে হবে।’

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাতে টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলের পঁচিশ মাইল এলাকায় অজ্ঞাত পরিচয় এক তরুনীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার তিনদিন পর পত্রিকায় ছবি দেখে মধুপুর থানায় রূপায় মৃতদেহ শনাক্ত করেন তার বড়ভাই হাফিজুর রহমান প্রামাণিক।

সিরাজগঞ্জের তারাশ উপজেলার আসানবাড়ি গ্রামের মৃত জুলহাস প্রামাণিকের মেয়ে রুপা। পড়াশোনা করছিলেন ঢাকার আইডিয়াল ল কলেজের এলএলবি শেষ বর্ষে। পাশাপাশি ইউনিলিভার বাংলাদেশের প্রমোশনাল বিভাগে শেরপুর জেলায় কাজ করতেন তিনি।

 


ঘটনার দিন, সন্ধ্যা সাতটার বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার উদ্দেশ্যে ছোঁয়া পরিবহনের একটি বাসে রওনা হন রুপা। ওই দিন রুপা ছাড়াও মাত্র পাঁচ/ছয়জন যাত্রী বাসে ছিল। রুপা ছাড়া অন্য সব যাত্রীরা সিরাজগঞ্জ মোড় এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তে নেমে যায়। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার সময় রুপা একাই বাসে ছিলেন।

বাসটি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কাছাকাছি এলে বাসের হেলপার শামীম রুপাকে জোর করে বাসের পেছনের আসনে নিয়ে যায়।

এসময় রুপা তার কাছে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন শামীমকে দিয়ে তাকে নির্যাতন না করতে অনুরোধ করে। কিন্তু শামীম জোরপূর্বক প্রথমে রুপাকে ধর্ষণ করে। পরে অপর হেলপার আকরাম ও জাহাঙ্গীর তাকে ধর্ষণ করে।

বাসটি ঘাটাইল উপজেলা এলাকা অতিক্রম করার সময় রুপা কান্নাকাটি ও চিৎকার করা শুরু করলে তারা তিনজন মুখ চেপে ধরে। একপর্যায়ে ঘাড় মটকে রুপাকে হত্যা করা হয়। পরে মধুপুর উপজেলা সদর অতিক্রম করে বন এলাকা শুরু হলে পঁচিশ মাইল এলাকায় রাস্তার পাশে লাশ ফেলে রেখে চলে যায়।

পরে পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়েরের পর ঘটনার সাথে জড়িত ছোঁয়া পরিবহণের হেলপার শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯) এবং চালক হাবিবুর (৪৫) ও সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) গ্রেফতার করে।

এরপর মামলার ১৭১ ‍দিনের মধ্যে আসামীদের মধ্যে চারজনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিলো আদালত। অপর এক আসামীর সাত বছরের জেল ও এক লাখ টাকা জরিমানার রায় দেওয়া হয়।

 

 

রাইজিংবিডি/টাঙ্গাইল/১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/শাহরিয়ার সিফাত/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়