ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় শহীদদের স্মরণ

জাহাঙ্গীর আলম বকুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় শহীদদের স্মরণ

ডেস্ক রিপোর্ট : একুশ মানে মাথা নত না করা- প্রত্যয়ে আজ ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে জাতি বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে ভাষা শহীদদের।   বুধবার একুশের প্রথম প্রহর থেকেই ফুলে ফুলে ভরে উঠছে দেশের শহীদ মিনারগুলোর বেদী। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গর্ব আর শোকের এই দিনটি পালন করছে জাতি।

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের এ দিনে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ নাম না জানা অনেকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ। এই রক্তের বিনিময়ে আসে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি।  তার সিঁড়ি বেয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। বাঙালির এই আত্মত্যাগের দিন এখন প্রতিটি মানুষের মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষার দিন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

একুশের প্রথম প্রহরে জাতির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে মহান ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের  প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।



রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে  স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট, তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশ মহাপরিদর্শক, অ্যাটর্নি জেনারেল, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও ভাষা সৈনিকরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর্ব শেষ হওয়ার পর শহীদ মিনার সবার জন্য খুলে দেওয়া হয়। এরপর ভোর থেকে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের সারি আরও দীর্ঘ হয়।

রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন স্থানে নানা আনুষ্ঠানিকতায় সর্বস্তরের মানুষ ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে।



সিলেট : সিলেটে একুশের প্রথম প্রহরে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। গভীর শ্রদ্ধায় রাত ১২টা ১মিনিটে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদ মিনার বাস্তবায়ন কমিটির পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়।

এর পরে একে একে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানম, ডিআইজিপি কামরুল আহসান, জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদিন, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া, জেলা পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান, সিলেট প্রেসক্লাব, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা  নিবেদন করেন।

শহীদ মিনার এলাকায় সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি র্যােব ও সাদাপোশাকধারী বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল।

 



বরিশাল : বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাত ১২টা ১মিনিটে বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ ও বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য  তালুকদার মোহাম্মাদ ইউনুস ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

এরপর পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বরিশাল জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড মো. মোকলেছুর রহমান।

এর পর একে একে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুজ্জামান, বরিশালের ডিআইজিপি মো. শফিকুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এস এম রুহুল আমিন, জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান, বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর জিয়াউল হক, বরিশাল পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম, জেলা পরিষদের প্রশাসক মইদুল ইসলাম শহীদ মিনারের বেদি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

রাতে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা ও স্কুল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

ময়মনসিংহ : র্যাব-পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় ময়মনসিংহে মহান শহীদ দিবস পালন করা হচ্ছে। শহরের টাউনহল চত্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে দিবসের সূচনা করেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।



তারপর পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় কমিশনার জি এম সালেহ উদ্দিন, ডিআইজিপি নিবাস চন্দ্র মাঝি, জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান, পৌর মেয়র ইকরামুল হক, পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শেখ মহিউদ্দিন আহাম্মদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

গোপালগঞ্জ : অসাম্প্রদায়িক ও রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার চেতনা নিয়ে গোপালগঞ্জের পৌর পার্কের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে।

রাতের প্রথম প্রহর ১২টা ১মিনিটে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সাইদুর রহমান খান ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।



এরপর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শ্রদ্ধা নিবেদন করে। রাতে গোপালগঞ্জে অবস্থান করা কয়েকজন বিদেশিও শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তারা সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন।

ভোরে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’- গান গেয়ে প্রভাত ফেরি করে সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রভাত ফেরি গিয়ে মিলিত হয় শহীদ মিনারে।

শহীদ দিবস উপলক্ষে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনিমিত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। শহীদ মিনার চত্ত্বরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশ, র্যা বসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত ছিল।

কুমিল্লা : কুমিল্লায় নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভাষা শহীদ দিবস পালিত হচ্ছে।

রাত ১২টা ১মিনিটে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম প্রহরে কুমিল্লা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াল এডমিরাল (অব.) আবু তাহের, জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর আলম, পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। 

এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। পরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।

দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, দেশাত্ববোধক গান পরিবেশন, আবৃত্তি, আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।  

 



রাইজিংবিডি/২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/বকুল/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়