ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বর্ষার ঝুঁকি

দুই লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুই লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা

কক্সবাজার প্রতিনিধি : আসন্ন বর্ষা মৌসুমে দুই লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা চরম ঝূঁকিতে পড়বে মনে করছে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তাকারী সংগঠনগুলোর জোট ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি)।

পাহাড় ধস আর প্রাকৃতিক দুর্যোগই এই ঝুঁকির কারণ। তাই এসব রোহিঙ্গাদের আগেভাগেই অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম।

রোববার সকাল ১১ টায় কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোন এলাকার এক অভিজাত হোটেলে রোহিঙ্গা শরণার্থী রেসপন্স-এর ছয়মাস পূর্তি উপলক্ষে ‘আইএসসিজি’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম, আইএসসিজি এর সমন্বয়ক সুমবুল রিজভী, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) সহ বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম বলেন, ‘গত বছর ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারে নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য ক্যাম্প করা হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার একরের বেশি পাহাড়ি এলাকায়। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা ঘন বসতিপূর্ণভাবে পাহাড় জুড়ে বসবাসের কারণে বর্ষা মৌসুমে ভূমিধসের পাশাপাশি পাহাড় ধসেরও আশংকা দেখা দিয়েছে। এছাড়া বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ক্যাম্প গড়ে ওঠার কারণে বর্ষা মৌসুমে বান ও প্লাবণের আশঙ্কাও রয়েছে।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আয়তন সাড়ে ৩ হাজার একর ছাড়িয়ে আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার ।

‘ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকা রোহিঙ্গাদের নতুন করে অধিগ্রহণ করা ভূমিতে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগে আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ করা হবে।’ বলেন তিনি।

বিশাল পাহাড়ি এলাকাজুড়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গড়ে ওঠায় বন উজাড় হওয়ার কারণে আবাসস্থল নষ্ট এবং খাদ্য সংকট সৃষ্টি হওয়ায় বন্যহাতির আক্রমণে ১২ জন রোহিঙ্গা ও ১ জন স্থানীয় বাসিন্দা নিহত হয়েছে, জানান মো. আবুল কালাম।

তিনি বলেন, ‘এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বনবিভাগের সহায়তায় দেশি-বিদেশি সংস্থার অর্থায়নে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে এটি বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে।’

কমিশনার কালাম বলেন, ‘বর্তমানে ৩৬ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শিশু এতিম হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৮ হাজারের কাছাকাছি মা-বাবা উভয়জনকেই হারিয়েছে। শুরুতেই এই শিশুদের জন্য কাজ করেছি এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে দেইনি। যে কারণে আমরা আলাদা কোন এতিমখানা করতে দেইনি।’

‘এ ক্ষেত্রে ক্যাম্পের মাঝিদের (ব্লক ভিত্তিক নেতা) সাথে আলোচনা করে সংশ্লিষ্টরা এসব এতিম শিশুদের নিকট আত্মীয়দের কাছে রেখে সব ধরণের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।’

রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দারাও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে কমিশনার কালাম বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রোববার থেকে শুরু হয়েছে এ কার্যক্রম।’

‘রোববার উখিয়ায় এবং সোমবার টেকনাফে স্থানীয়দের সহায়তার কার্যক্রম শুরু হবে। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় প্রতিটি পরিবারকে ১০ হাজার নগদ টাকা, বীজসহ কৃষি উপকরণ সরবরাহ এবং জ্বালানির জন্য বনের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে গ্যাস সিলিন্ডার সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর আওতার অন্তর্ভূক্ত করা হবে বলেও জানান আবুল কালাম।




রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/সুজাউদ্দিন রুবেল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়