ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

যে কলেজে শুধু ‘নেই’ এর হাহাকার

জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২১, ১৩ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যে কলেজে শুধু ‘নেই’ এর হাহাকার

কুমিল্লা সংবাদদাতা: কুমিল্লার দ্বেবীদ্বারের ঐতিহ্যবাহী দেবীদ্বার সুজাত আলী সরকারি কলেজটি বাইরে চাকচিক্য থাকলেও ভেতরে শুধু ‘নেই আর নেই’ এর হাহাকার।

দেবীদ্বার উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে ১৯৬৮ সালে কলেজটি স্থাপিত হয়। সাড়ে সাত একর ভূমির উপর কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অবসর প্রাপ্ত) মোঃ সুজাত আলী। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে কলেজটি জাতীয়করণ হয়।

বর্তমানে কলেজটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার। অথচ এতো শিক্ষার্থীর বিপরীতে যে  ব্যাবস্থাপনা দরকার তার অধিকাংশই নেই।

বিশেষ করে শিক্ষক আর শ্রেণিকক্ষ সংকট চরমে। অবকাঠামো ও খেলার মাঠসহ নানা সমস্যায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত আছে হচ্ছে এখানকার শিক্ষা কার্যক্রম। এসব কারণে শিক্ষামানের প্রতিযোগিতার দৌড়ে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ রুহুল আমিন জানান, কলেজটিতে হিসাব বিজ্ঞান ও ব্যাবস্থাপনা এ দু’টি বিষয়ে অনার্স (সম্মান) চালু রয়েছে। সব মিলিয়ে কলেজটিতে অন্ততঃ ১৬টি শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন অথচ আছে মাত্র ৯টি। শিক্ষকের পদ আছে ৩২টি, ১৪টি পদই শূন্য।

তিনি জানান, সম্মান শ্রেণির এ দু’টি বিভাগের জন্যে ৬টি কক্ষ’র প্রয়োজন থাকলেও একটি মাত্র কক্ষে চালানো হচ্ছে পাঠদান।এ দু’টি বিভাগের জন্যে ১৪টি শিক্ষকের পদ প্রয়োজন হলেও আছে মাত্র ২টি। তাও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপকের পদ শূন্য, বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষক থাকলেও তিনি চার মাসের প্রশিক্ষণে কুমিল্লার বাইরে। ইংরেজি বিষয়ে অন্ততঃ ৪জন শিক্ষক প্রয়োজন থাকলেও মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে পাঠদান চলছে। আর বাংলা বিষয়ে ৩টি শিক্ষক পদ থাকলেও আছেন মাত্র একজন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, ইসলামের ইতিহাস, কৃষি শিক্ষা ও পরিসংখ্যান এই পাঁচটি বিষয়ে কোন শিক্ষকই নেই। গেস্ট (অতিথি) শিক্ষক দিয়ে কোন মতে চলিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠার অর্ধশতাব্দিতেও সৃষ্টি হয়নি এই কলেজের উপাধ্যক্ষের পদ।

অধ্যক্ষ রুহুল আমিন বলেন, একটি কলেজের অধ্যক্ষ প্রশাসনিক কাজ দেখাশোনা করেন। যার ফলে তাকে বেশিরভাগ সময় কলেজের বাইরে অবস্থান করতে হয়। মূলতঃ কলেজের একাডেমিক বিষয়টি দেখাশোনা করে থাকেন উপাধ্যক্ষ। সুতরাং দেবীদ্বার সুজাত আলী কলেজে জন্মলগ্ন থেকে উপাধ্যক্ষের পদ তৈরি না হওয়াতে একাডেমিক দিক থেকে অনেক ক্ষতি হয়েছে কলেজটির।

কলেজের একটি ত্রিতল ও একটি ছোট্ট একতলা ভবনে চলছে সবকিছু। সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে একটি দ্বিতল ভবন ও দুটি টিনের ঘর।

শিক্ষকদের জন্যে নেই কোন আবাসিক ভবন, নেই ডরমেটরিও। কলেজের শ্রেণিকক্ষ আর শিক্ষক সংকটের কথা উল্লেখ করে প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীরাও।

কলেজ ক্যাম্পাসে আছে বিশাল খেলার মাঠ। কিন্তু সেখানে বছরের বেশির ভাগ সময় পানি জমে থাকে। যার ফলে শীত মৌসুম ছাড়া বছরের বেশির ভাগ সময়ই খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হয় শিক্ষার্থীরা।

কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থিত ছাত্রী নিবাসে থাকে ছাত্ররা। তাও ভবনের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, অনিরাপদ ও ঝুকিপূর্ণ।

শুধু শিক্ষক আর অবকাঠামোই নয় অবহেলারও শিকার এ কলেজ। অধ্যক্ষ রুহুল আমিন আক্ষেপ করে জানালেন, উপজেলার একমাত্র সরকারী কলেজ এবং সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হলেও জাতীয় দিবস কিংবা বিশেষ কোন দিনে চিঠি দেওয়া হয়না এ কলেজে। এমনকি কোন উৎসব কমিটিতেও রাখা হয়না কলেজের কাউকে।

কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থিত অধ্যক্ষের বাসভবনটিরও বেহাল দশা। ভবনে শেওলা পড়েছে, খসে পড়ছে পলেস্তারা। ভবনের চারপাশে ঝোপঝাড়। বিশেষ করে অধ্যক্ষের ভবনের ঠিক উপরদিয়ে বয়ে গেছে ৩৩ হাজার ভোল্টেজ বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড লাইন। যার রেডিয়েশন ক্ষতিকর দিকতো আছেই সেই সাথে দুর্ঘটনার আশংকা। অথচ এমন একটি বাসভবনের জন্যে প্রতিমাসে ভাড়া গুনতে হচ্ছে অন্ততঃ ২৬ হাজার টাকা। যার ফলে এখানে কোন অধ্যক্ষ বেশি দিন থাকতে চান না।



রাইজিংবিডি/কুমিল্লা/১৩ মার্চ ২০১৮/জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়