ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দাদার পাশে চিরনিদ্রায় মুক্তামণি

এম.শাহীন গোলদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫১, ২৩ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দাদার পাশে চিরনিদ্রায় মুক্তামণি

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা : রক্তনালীতে টিউমার আক্রান্ত সাতক্ষীরার আলোচিত শিশু মুক্তামণিকে দাদার কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।

আজ বুধবার জোহরের নামাজের পর সাতক্ষীরার সদর উপজেলার দক্ষিণ কামারবায়সা জামে মসজিদের মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার জানাজা এলাকার শত শত মানুষ অংশ নেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মুক্তামণি (১৩) নিজ গ্রাম দক্ষিণ কামারবায়সায় মারা যায়।

সাতক্ষীরা জেলা শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রাম। ওই গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী ইব্রাহিম হোসেনের যমজ মেয়ে হীরামণি ও মুক্তামণি। জন্মের দেড় বছর পর থেকে মুক্তামণির সমস্যা শুরু হয়। প্রথমে ডান হাতে টিউমারের মতো হয়। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত টিউমারটি তেমন বড় হয়নি। কিন্তু পরে তা ফুলে যায়। মুক্তামণি বিছানায় বন্দি হয়ে পড়ে। সেটি দিন দিন বড় হতে থাকে। কয়েক বছর আগে তার আক্রান্ত ডান হাতটি আরো বড় আকার ধারণ করে এবং তাতে পঁচন শুরু হয়। এক পর্যায়ে সেখানে পোকা জম্মায়। দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে।

গত বছরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মুক্তামণির বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রচার হয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে তার নির্দেশে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার চিকিৎসা চলছিল। টানা ছয় মাসের চিকিৎসায় খানিকটা উন্নতি হওয়ায় ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর তাকে এক মাসের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি পাঠানো হয়।

গ্রামের বাড়িতে আসার পর থেকে মুক্তামণির অবস্থা ক্রমে অবনতি হতে থাকে। তার দেহে নতুন করে পচন ধরে। রক্তও ঝরতে থাকে। তার হাত-পা সরু হতে শুরু করে। দিনে একবার করে হাতে ড্রেসিং করা লাগত।

বাবা ইব্রাহিম হোসেন জানান, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তারা বুঝতে পারেন মুক্তামণি না ফেরার দেশে চলে গেছে। মৃত্যুর কিছু আগে মুক্তামণি বাবার কাছে পানি খেতে চায়। পানি খাওয়ানোর কিছু পর সে মারা যায়।

২০১৭ সালে ঢাকায় যাওয়ার আগে সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জায়গায় নানা চিকিৎসা চলে। তবে ভালো হয়নি বা ভালো হবে- এমন আশার কথা কেউ বলেননি। গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে  আলোচনায় আসে মুক্তামণি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মুক্তামণিকে ভর্তি করা হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে বার্ন ইউনিটের কেবিনে ছিল ছয় মাস। গত বছরের ১২ আগস্ট তার হাতে অস্ত্রোপচার হয়। তার ডান হাত থেকে প্রায় তিন কেজি ওজনের টিউমার অপসারণ করেন চিকিৎসকেরা। পরে দুই পায়ের চামড়া নিয়ে দুই দফায় হাতে লাগানো হয়। তবে সাময়িকভাবে হাতের ফোলা কমলেও সম্প্রতি আগের চেয়েও বেশি ফুলে গিয়েছিল। রক্ত জমতে থাকে ফোলা জায়গায়। ড্রেসিং করতে কয়েক দিন দেরি হলে হাত থেকে দুর্গন্ধ বের হতো।

মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম আরো বলেন, মুক্তামণির ডান হাতের অবস্থা খারাপ দেখে ১৫ দিন আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটের প্রধান ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। এ সময় তিনি মুক্তার দুটি ছবি পাঠানোর কথা বলেন। ছবি দেখে তার হাতের অবস্থা খারাপ বলে জানান ডা. শারমিন সুমি। এরপর গত বুধবার সামন্ত লাল সেন ফোন করে মুক্তামণির খোঁজ খবর নিয়ে রোজার পরে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। মুক্তামণির অবস্থার অবনতির পাশাপাশি জ্বর এলে তিনি গত মঙ্গলবার আবার ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে কথা বলে তাকে বিস্তারিত জানান।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন তওহীদুর রহমান বলেন, ডা. সামন্ত লাল সেন তাকে জানান মুক্তামণির অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কথা শুনে মঙ্গলবার দুপুরে তিনি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফরহাদ জামিল ও অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ ডা. মো. হাফিজুল্লাহকে মুক্তামণির বাড়িতে পাঠান।

ডা. ফরহাদ জামিল বলেন, তিনি ও ডা. হাফিজুল্লাহ মুক্তামণির বাড়িতে গিয়েছিলেন। তার শরীরে তখন জ্বর ছিল। রক্তশূন্যতায় ভুগছিল সে। হাতের ক্ষত বেড়ে গিয়েছিল। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। তার রোগ শরীরে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভালো করে সে কথা বলতে পারছিল না। বিষয়টি তারা ডা. সামন্ত লাল সেনকে বিস্তারিত জানান।

তিনি বলেন, তারা ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে আসেন। অসুস্থ মুক্তামণিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল বা ঢাকায় পাঠানো হলো না কেন- জানতে চাইলে ডা. ফরহাদ জামিল জানান, মুক্তামণি ও তার বাবা ইব্রাহিম হোসেন আর ঢাকায় যেতে চাচ্ছিলেন না।



রাইজিংবিডি/সাতক্ষীরা/২৩ মে ২০১৮/এম শাহীন গোলদার/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়