ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চট্টগ্রামের ঈদ-বাজার জমজমাট

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩২, ৯ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চট্টগ্রামের ঈদ-বাজার জমজমাট

রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম : বিরামহীন কেনাকাটায় জমজমাট বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ঈদ-বাজার। ফুটপাত থেকে অভিজাত শপিংমলে সকাল থেকে গভীররাত পর্যন্ত ভিড়ের কমতি নেই।

শহর এবং গ্রামের মানুষের ভিড় চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রতিটি মার্কেটে। বিক্রেতারা যেন নিঃশ্বাস ফেলার সময় পাচ্ছেন না। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ক্রেতা চাহিদাকে পুঁজি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন অতিরিক্ত মূল্য। চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে ঈদের কেনাকাটার ভিড়ের অভিন্ন চিত্র দেখা গেছে।

চট্টগ্রামের টেরিবাজার, নিউমার্কেট, শপিং কমপ্লেক্স, মিমি সুপার মার্কেট, সানমার ওশান সিটি, লাকি প্লাজা, ফিনলে স্কয়ায়, সেন্ট্রাল প্লাজা, আফমি প্লাজা, ইউনেস্কু সিটি সেন্টার, জহুর হকার্স মার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজার, তামাকুমন্ডি লেন, বহদ্দারহাট, সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট, আখতারুজ্জামান সেন্টারসহ বেশ কয়েকটি মার্কেটে ঈদের কেনাকাটার জমজমাট চিত্র দেখা গেছে। ঈদকে ঘিরে নগরীর প্রতিটি মার্কেট সেজেছে নানা রঙে।

চট্টগ্রামের নিউ মার্কেটে ছেলেদের ব্র্যান্ড ফ্যাশন হাউজ ‘ওয়েস্ট উড’ এর কর্ণধার আরিফ ইফতেখার রাইজিংবিডিকে জানান, এখন তাদের দম ফেলার ফুসরৎ নেই। সকাল ১১টার পর থেকে ক্রেতারা মার্কেটে ভিড় করতে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়ে। গভীর রাত পর্যন্ত চলছে জমজমাট বিক্রি।

 



তিনি জানান, তারা তারুণ্যকে নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্ঠা করেন। এবারের ঈদ ঘিরে তাদের বৈচিত্র্য আয়োজন রয়েছে। তাদের ফ্যাশন হাউজে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ডিজাইন সমন্বয়ে তৈরি হয় ফিউশনধর্মী পোশাক। যেসব পোশাকের কাটিং ও প্যাটার্নে পশ্চিমা স্টাইলের পাশাপাশি থাকে দেশীয় ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ। এসব ফিউশনধর্মী পোশাক টিনএজার কথা চিন্তা করেই বেশি তৈরি হয়। সবার সামর্থের কথা বিবেচনা করে ওয়েস্ট উডের পোশাকের মূল্য ১৩৮০ টাকা থেকে ২৪৫০ টাকার মধ্যে রাখা হয়েছে। ঈদকে ঘিরে ওয়েস্ট উডের ঢাকা ও চট্টগ্রমের সাতটি আউটলেটে ক্রেতারা ভিড় করছেন।

নিউমার্কেটে ছেলেদের পোশাকের আরেকটি ব্র্যান্ড ফ্যাশন হাউজ ‘ম্যানহুড’। ম্যানহুডের কর্ণধার টি এ জিকু রাইজিংবিডিকে জানান, বৈশ্বিক সাম্প্রতিক ফ্যাশন ট্রেন্ডকে ফলো করে নিজস্ব সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে ম্যানহুড সব পোশাকের ডিজাইন করে থাকে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে রয়েছে ম্যানহুডের কারখানা। ম্যানহুডের পোশাকের মধ্যে রয়েছে ছেলেদের পাঞ্জাবি, পাজামা, কাবলী পাঞ্জাবি, ক্যাজুয়াল শার্ট, অফিসিয়াল শার্ট, জিন্স, গাবাডিন, ফর্মাল প্যান্ট, স্যান্ডেল।

এখানে ১২৯০ টাকা থেকে ১৬৯০ টাকার মধ্যে ক্যাজুয়াল শার্ট, ১৫৯০ থেকে ১৯৯০ টাকার মধ্যে ফর্মাল শার্ট, ১৫৯০ থেকে ২৫৯০ টাকার মধ্যে পাঞ্জাবি, ১৪৯০ থেকে ১৮৯০ টাকার মধ্যে জিন্স এবং ১৩৯০ থেকে ১৫৯০ গাবাডিন প্যান্ট পাওয়া যাচ্ছে। এবারের ঈদ উপলক্ষে ৩০০ রকম নতুন ডিজাইনের পোশাক মিলছে ম্যানহুডের আউটলেটে।

চট্টগ্রামে তরুণ-তরুণীদের আধুনিক ফ্যাশনেবল পোশাকের জন্য বিখ্যাত ‘পিটুপি লাইফস্টাইল’। ঈদ উপলক্ষে এই ফ্যাশন হাউজে পুরুষদের পাঞ্জাবি এবং নারীদের নানা ডিজাইনের পোশাকের সমাহার আনা হয়েছে। ফ্যাশন ডিজাইনার সেফা সাইকার ডিজাইন করা পিটুপি লাইফস্টাইলের পোশাক কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। ঈদ উপলক্ষে এই ফ্যাশন হাউজে নির্দিষ্ট ডিজাইনের পোশাকে ২০ শতাংশ ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে।

 



রমজানের প্রথম থেকে ঈদের কেনাকাটায় ভিড় লেগে আছে টেরিবাজার, হকার্স মার্কেটে। ঈদ ঘনিয়ে আসায় ভিড় আরো বাড়ছে। কোনো দোকানে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। নগরীর জহুর হকার্স মার্কেট, নিউ মার্কেট আর রিয়াজউদ্দিন বাজারে প্রতিদিন ভিড় লেগে আছে। সাধারণ মধ্যবিত্ত, নিম্ম মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ কেনাকাটার জন্য রিয়াজউদ্দিন বাজারকে বেছে নিচ্ছেন। যারা নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের ফুটপাতই ভরসা। ফুটপাতে বিক্রির কমতি নেই।

অভিজাত শ্রেণীর মার্কেট হিসেবে পরিচিত নগরীর সানমার ওশান সিটি, মিমি সুপার মার্কেট, ইউনেস্কু, আমীন সেন্টার, আফমি প্লাজা, ফিনলে স্কয়ার, সেন্ট্রাল প্লাজাতে ঈদের কেনাকাটর ধুম লেগেছে। সানমার ওশান সিটির পোশাকের দোকানের মালিক মাসুদ মোর্শেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, সকাল ১০টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত এই মার্কেটে বিক্রি চলছে। এবারের পোশাকের দাম একটু বেশি হলেও ক্রেতারা কিনছেন দেদারছে।

ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রাম কিংবা শহরের সব শ্রেণির তরুণ-তরুণীরা হাল ফ্যাশনের ভারতীয় ও দেশীয় পোশাক খুঁজছেন। এ বছর নারী পোশাকের মধ্যে ত্রিপিসের মূল্য ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে রিয়াজউদ্দিন বাজারসহ বেশ কিছু মার্কেটে ৫০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে থ্রি পিস পাওয়া যাচ্ছে।

ঈদ মার্কেটে ভারতের চেন্নাই, কলকাতা, ব্যাঙ্গালোর, দিল্লি ও জয়পুর থেকে বিভিন্ন রঙ ও ডিজাইনের শাড়ি এসেছে। এগুলোর মধ্যে জুট কাতানের দাম পড়ছে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা, রাজস্থান সিল্ক ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা, ভেলবেট সিল্ক ২৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার, চেন্নাই কাতান ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা, বেনারসি ১৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা, নেটের শাড়ি ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা, ব্যাঙ্গালোর কাতান ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা, কাঞ্চিভরম ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা, সানন্দা ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা, অপেরা কাতান ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা, টাঙ্গাইল সিল্ক ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকা এবং দেশি সূতি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকায়। নগরীর মিমি সুপার মার্কেটের  বাঁধন, বধূয়া, শাড়িজ, পিন্ধন, সেন্ট্রাল, আঁচল, বন্ধন, মানসী, কানন, শাওন ভাদো, সুন্দরীসহ ইত্যাদি দোকানে বিক্রি হচ্ছে নানা কারুকাজ করা বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি শাড়ি।

 



নিম্ম মধ্যবিত্ত মানুষের পছন্দের মার্কেট হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম জহুর হকার্স মার্কেটে ভিড়ের কমতি নেই। সকাল থেকে ভোররাত পর্যন্ত বেচাকেনা চলছে। তবে মার্কেটে ইচ্ছেমতো দাম হাঁকিয়ে ক্রেতা ঠকানোর অভিযোগ রয়েছে। নিম্নবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্তের জনপ্রিয় মার্কেট হলেও জহুর হকার্স মার্কেটে উচ্চবিত্ত শ্রেণির ভিড়ও লক্ষ্যণীয়।



রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/৯ জুন ২০১৮/রেজাউল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়