ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

‘আনন্দের ঈদ, বেদনার ঈদ’

নোমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৬, ১৭ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আনন্দের ঈদ, বেদনার ঈদ’

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট : সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার জামিল আহমদ থাকেন সৌদি আরবে। বেশ কয়েক বছর ধরে ঈদ এলেই দেশে ছুটি কাটাতে আসেন তিনি। পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দে ঈদ কাটে তার। এ নিয়ে আনন্দের কমতি নেই তার।

এ দিক থেকে ব্যতিক্রম জৈন্তাপুর উপজেলার খাইরুল ইসলাম। তিনিও থাকেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আমিরাতে। চলতি বছরের ঈদে তিনি ছুটি কাটাতে এসেছেন বাড়িতে। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ কাটাতে এসে তার উচ্ছ্বাস, আবেগ আর অনুভূতি মিলে একাকার। সব মিলিয়ে এবারই তার ঈদের আনন্দ যেন পূর্ণতা পেয়েছে।

তিনি বলেন, পাঁচ বছর পর পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করছেন। অনেক খুশি লাগছে। ফজরের আজানের পর দল বেঁধে বাড়ির পুকুরে গোসল করা, পরে ফিরনি-সেমাই খেয়ে দল বেঁধে ঈদগাহে যাওয়া, নামাজ শেষে সকলের সঙ্গে কোলাকুলি আর কুশল বিনিময়, যা প্রবাসে কল্পনা করা যায় না।

প্রবাসের ঈদ সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘‘প্রবাসে ঈদের দিনটা কষ্টে কাটে। একের পর এক ঈদ আসলেও আমরা যারা প্রবাসে থাকি, ঈদের দিনটি ঘুমিয়ে কাটে আমাদের। ঈদের নামাজ শেষে দেশে ফোন করার পর বুকের ভেতর কষ্টের তীব্রতা বেড়ে যায়। সেখানে থাকা বাঙালিরা সবাই মিলে সেই দুঃখটা একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নেয়।’’

খাইরুলের বাবা কুতুব উদ্দিন জানালেন, তার দুই ছেলে প্রবাসে থাকে। তবে এ বছর ছোট ছেলে ঈদ করতে বাড়িতে আসায় তাদের ঈদের আনন্দে পূর্ণতা পেয়েছে। বাড়ির সবাই খুব খুশি করে দিন কাটিয়েছে।

প্রবাসী খাইরুলের বাড়িতে ঈদের আনন্দ থাকলেও আরেক প্রবাসী বুরহান উদ্দিনের বাড়িতে ঈদ-আনন্দ নেই। তিনি জীবিকার তাগিদে চার বছর আগে সাইপ্রাস যান। সেখান থেকে অবৈধ পথে ইউরোপের অস্ট্রিয়ায় পাড়ি জমান এই তরুণ। এরপর থেকে সেখানেই আছেন। তবে, কাগজপত্র না থাকায় দেশে ফিরতে পারছেন না।

পরিবারের বড় ছেলে বুরহান ঈদ উদযাপন করতে বাড়ির সকলের জন্য টাকা পাঠিয়েছেন। তাতেও যেন আনন্দ নেই তাদের ঘরে। ঈদের দিন সকালে ‘ভিডিও কলের’ মাধ্যমে সকলের সঙ্গে কথা বলেছেন বুরহান। এতে করে কিছুটা ঈদের আনন্দ নিতে চেয়েছেন তিনি।

মোবাইল ফোনে বুরহানের সঙ্গে কথা হয় রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদকের। আলাপকালে উঠে আসে পরিবারকে কাছে না পাওয়ার কষ্ট। তিনি বলেন, ঈদ মানে আনন্দ হলেও প্রবাসীদের কাছে তা কষ্টের। জীবিকার প্রয়োজনে আপনজনদের ছাড়া একাকি ঈদ উদযাপন করতে হয়। ঈদের দিনে পরিবারের সবাইকে খুব মিস করেন। তবে প্রবাসের বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে আনন্দ করে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করেন তিনি।

প্রবাসী জামিল আহমদ জানালেন, গত পাঁচ বছর ধরে প্রতিটি ঈদ দেশে পরিবারের সঙ্গে কাটানোর চেষ্টা করেন তিনি। তবে, বিভিন্ন কারণে মাঝে মধ্যে আসতে পারেন না। তখন খুব খারাপ লাগে।

লন্ডন প্রবাসী ফাহাদ আহমদ বলেন, প্রবাসের কষ্টটা একটু অন্য ধরণের। এখানে সব আছে, তবু যেন কিছুই নেই। প্রবাসী না হলে কেউ তাদের কষ্ট বুঝতে পারবে না। বিশেষ করে ঈদের দিনে প্রবাসীদের কষ্টের মাত্রা বেড়ে যায়।

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে ঈদের সময় অনেকে বাড়িতে আসেন। আবার অনেকে ছুটি না পাওয়ায় প্রবাসে ঈদ কাটান। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে। এ সব রেমিটেন্স যোদ্ধাদের ঈদ কখনো হয় আনন্দের, আবার কখনো বেদনার।

 

 

 

রাইজিংবিডি/সিলেট/১৭ জুন ২০১৮/নোমান/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়