ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সমুদ্র স্নানে নির্দেশনা মানছেন না পর্যটকরা

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ২৩ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সমুদ্র স্নানে নির্দেশনা মানছেন না পর্যটকরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে গিয়ে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। গোসলে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন না মানা ও পর্যাপ্ত লাইফ গার্ড না থাকায় এ বর্ষা মৌসুমে সাগর উত্তালের কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা।

লাইফ গার্ড কর্মীদের দাবি, পর্যটকরা সচেতন না হওয়াতেই দুর্ঘটনা বাড়ছে। এ ছাড়া লাইফ গার্ড কর্মী ও উদ্ধার সরঞ্জামাদির সঙ্কট রয়েছে।

জোয়ার ভাটার নির্দেশিকা মেনে পর্যটকদের গোসলসহ সব ধরণের কাজে সচেতন হবার পরামর্শ ট্যুরিস্ট পুলিশের।  কিন্তু সেই পরামর্শ যেন আমলেই নিতে চাচ্ছেন না পর্যটকরা।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সী-গাল পয়েন্টে গত শুক্রবার (২২ জুন) নিয়ম না মেনে ভাটার সময় সৈকতে গোসল করতে নেমে মারা গেছেন আমেরিকা প্রবাসী পর্যটক আরাফাত। তারপরও সতর্ক হননি পর্যটকরা। উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের মধ্যেই গোসল করছেন তারা। সঙ্গে নেই কোন লাইফ গার্ড কর্মীও।

শুধু সী-গাল পয়েন্ট নয়, সৈকতের লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্ট ছাড়া বাকি ৪টি পয়েন্টেরও একই অবস্থা। উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে সমুদ্র স্নানে মেতে ওঠেন পর্যটকরা। সেখানেও নেই কোন লাইফ গার্ড কর্মী।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক ইব্রাহিম কাদের বললেন, ‘গাড়ি থেকে নেমেই সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে পড়লাম। তবে তখন সাগরে জোয়ার ছিল নাকি ভাটা ছিল, খেয়াল করিনি। তবে সাগরের ঢেউগুলো বিশাল আকৃতির ছিল। নেমে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’

ইয়াছির নামে আরেক পর্যটক বললেন, সৈকতে গোসল করতে নামার সময় কোন নির্দেশিকা দেখতে পাইনি। এছাড়াও লাইফ গার্ড কর্মীও ছিল না। আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থে সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে জোয়ার ভাটার নির্দেশিকা দেওয়া প্রয়োজন।’

সী-গাল পয়েন্টে সমুদ্র স্নানরত পর্যটক তানভির ও ছৈয়দ বলেন, ‘সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টে শুধুমাত্র দুইজন করে মোট চারজন লাইফ গার্ড কর্মী লক্ষ্য করেছি। তাদের একজন টাওয়ারের উপর বসে আছে; অপরজন বাঁশি বাজিয়ে পর্যটকদের সচেতন করছে।’

এদিকে লাইফ গার্ড কর্মীদের দাবি, সাপ্তাহিক ছুটিসহ সরকারি ছুটি দিনগুলোতে পর্যটকের চাপ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ফলে স্বল্প সংখ্যক লাইফ গার্ড কর্মী দিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়।

সী-সেইভ লাইফ গার্ডের কর্মী মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘সাগরের তিনটি পয়েন্টে পর্যটকদের সমুদ্র স্নানে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছি। এই তিনটি পয়েন্টের বাইরেও পর্যটকরা সমুদ্র স্নান করছে, যার কারণে পুরো সৈকতে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া পর্যাপ্ত উদ্ধার সরঞ্জামাদিও নেই।’

শুক্কুর নামের আরেক লাইফ গার্ড কর্মী বলেন, ‘পর্যটকদের উত্তাল সাগরে গোসল করতে মানা করলেও তারা নির্দেশনা মানছে না। পর্যটকদের সাথে যতই ভালো ব্যবহার করি ততই তারা নির্দেশনা না মেনে গোসল করছে। ফলে মৃত্যুর মত দুর্ঘটনা ঘটছে।’

হোটেল কক্স টুডের ম্যানেজার আবু তালেব শাহ জানান, বিশাল সমুদ্র সৈকতের দুই কিলোমিটার তীর জুড়ে পর্যটকরা সমুদ্রে গোসল করে। কিন্তু এক্ষেত্রে শুধুমাত্র কয়েকজন লাইফ গার্ড কর্মী পর্যটকদের সমুদ্র স্নানে নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। যা পর্যাপ্ত নয়। তাই পর্যটকদের নিরাপত্তায় সরকারি উদ্যোগে লাইফ গার্ড কর্মী বাড়ানোসহ সেইফটি নেট বসানোরও দাবি জানান তিনি।

ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার ফজলে রাব্বী বলেন, ‘জোয়ার-ভাটা নির্দেশ দেওয়া থাকলেও তা মানছেন না পর্যটকরা। তাই মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটছে। বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিকভাবে সাগর উত্তাল থাকে। তাই পর্যটকদের জোয়ার ভাটার নির্দেশিকা মেনে সাগরে গোসল করা উচিৎ।’

লাইফ গার্ড কর্মীদের দেওয়া তথ্য মতে, গত ১০ বছরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে অর্ধশত পর্যটকের। পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তায় ৩টি বেসরকারি লাইফ গার্ড সংস্থা কাজ করার কথা থাকলেও কাজ করছে মাত্র একটি সংস্থা।



রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/ ২৩ জুন ২০১৮/সুজাউদ্দিন রুবেল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়