ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বৃষ্টি উপেক্ষা করেও জমজমাট প্রচারণা

হাসমত আলী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫২, ২৩ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বৃষ্টি উপেক্ষা করেও জমজমাট প্রচারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর : আর মাত্র দু’দিন পর ২৬ জুন অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আগামীকাল (২৪ জুন) রাত ১২টা থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এ নির্বাচনের অনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। জয় নিজের ঘরে তুলতে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা।

শনিবার সকাল থেকে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হলেও তা উপেক্ষা করে প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়েছেন। এ সময় প্রচারণার পরিবেশ কিছুটা বিঘ্নিত হলেও বেলা ১২টা নাগাদ আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। এরপর আবার ফিরে আসে উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রার্থীরাও প্রচারণা চালান পুরোদমে।

সিটি করপোরেশনের সর্বত্র এখন বিশ্বকাপ ফুটবলের পাশাপাশি এ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা। আর আলোচনার মুখ্য বিষয় কে হচ্ছেন আগামী মেয়র?

গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন শেষে পোশাক শ্রমিকসহ অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ সিটি করপোরেশনের এলাকায় এসে পৌঁছেছেন। এতে করে নির্বাচনী প্রচারণাও যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এ নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মহাজোট তথা আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং ২০ দলীয় জোট তথা বিএনপি প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারের মধ্যে।

শনিবার সকালে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম নিজ বাসভবনে ওলামা লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন এবং পরে খরতৈলে গণসংযোগ ও পথসভার মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন। অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার হায়দরাবাদ থেকে প্রচার কাজ শুরু করেন।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মিডিয়া সেল জানায়, প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম সকালে নিজ বাসভবনে ওলামা লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় ও বেলা ১ টায় খরতৈলে গণসংযোগ ও পথসভার মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন। পরে সাতাইশ স্কুলের সামনে, সাতাইশ চৌরাস্তা, ৫২ নম্বর মুদাফা, ৫৩ নম্বরে দেওড়া ফকির মার্কেট, ৫৫ নম্বর মিলগেট এলাকায় পথসভায় করেন। এ সময় স্থানীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম তার সঙ্গে ছিলেন। মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে পথসভায় যোগ দেন।

খরতৈল স্কুলের সামনে পথসভায় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা একটি আধুনিক শহর করতে চাই। টঙ্গী গাজীপুরবাসীর কাছে আমি আবদার করছি। আমাদের একবার নৌকায় ভোট দেন। আমরা  সকলে আজ ঐক্যবদ্ধ আছি। আমরা সকলে মিলে একটি ক্লিন এবং গ্রিন সিটি উপহার দিতে চাই। একটি বাসযোগ্য শহর করতে চাই। আপনাদের একজন কর্মচারী হিসেবে আমাকে এবং নৌকাকে ভোট দিন।’

দুপুরে মিলগেট এলাকায় অনুষ্ঠিত পথসভায় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কোনো কাজই ছোট না। মিলগেটের ব্যবসায়ীদের মতো তিনিও এই কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বংশ পরিচয়ে না, কর্মই হচ্ছে মানুষের পরিচয়। তিনি নিজেও একজন কর্মচারী। সকল শ্রেণির মানুষকে সমানভাবে সম্মান দেখাতে চান। তিনি সকলকে সাথে নিয়ে একটি বাসযোগ্য শহর গড়তে চান। আগামী ২৬ জুন নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান। পরে তিনি টঙ্গী নোয়াগাঁও এলাকায় সংসদ সদস্য মো. জাহিদ আহসান রাসেলের বাসভবনে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠান যোগ দেন।

সেখানে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্যাহ খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আওয়ামী লীগের সকল নেতৃবৃন্দ নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। আমাদের প্রার্থী ৫৭ ওয়ার্ডে বার বার ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন। আমাদের কর্মীরা কাজ অব্যাহত রেখেছেন। গাজীপুরবাসী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নৌকার বিজয় উপহার দিতে প্রস্তুত।’



এ সময় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আজমত ভাই আমাদের অভিভাবক। তার কাছ থেকেই রাজনীতি শিখেছি। সিটি নির্বাচনে তার পরামর্শ এবং নির্দেশেই সকল নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। আজকে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মের মাধ্যমে গাজীপুরে নৌকার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

বিএনপি প্রার্থীর মিডিয়া সেল জানায়, হাসান উদ্দিন সরকার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হায়দরাবাদ থেকে প্রচার কাজ শুরু করেন। পরে মাজুখান বাজার, নন্দীবাড়ি, বিন্দান, পূবাইল, ভাদুন, ইছালী ও কলেরবাজার এলাকায় দিনব্যাপী প্রচারণা চালান।

পথসভায় হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ধানের শীষের জোয়ার ঠেকাতে আদালতের মাধ্যমে নির্বাচন বন্ধ রাখতে ব্যর্থ হয়ে এখন পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী নিজেই পুলিশের গাড়িতে চড়ে এলাকায় টহল দিচ্ছেন। পুলিশ দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। সন্ধ্যা নামলেই আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক নেমে আসে। পুলিশ প্রত্যেক নেতাকর্মীর বাসা-বাড়িতে হানা দিচ্ছে। রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও পুলিশি হয়রানি থামছে না। পুলিশ গতরাতেও আমাদের তিনজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে।

এ সময় তার সাথে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক একেএম ফজলুল হক মিলন, সদস্য সচিব কেন্দ্রীয় নেতা কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল, কাপাসিয়া থানা বিএনপির সেক্রেটারি সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ গাজীপুর জেলার সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

উল্লেখ, এ সিটি করপোরেশনের মোট ভোটার ১১ লাথ ৩৭ হাজার ৭৩৭ জন। এর মধ্যে ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৫ জন পুরুষ এবং  ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন নারী ভোটার। এ নির্বাচনে ৭ জন মেয়র পদে ও ৮৪ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।



রাইজিংবিডি/গাজীপুর/২৩ জুন ২০১৮/হাসমত আলী/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়