ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার’

সাইফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ১৮ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার’

রাইজিংবিডি ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, ’৭৫ পরবর্তী শাসকরা সুন্দরবনের নদ-নদী, খাল ও চ্যানেলগুলো বন্ধ করে চিংড়ি চাষ প্রকল্প করায় এখানকার পানি লবনাক্ত হয়ে পড়েছিল। তার সরকার এই নদী এবং খাল পুনর্খনন করে নাব্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তা জাহাজ চলাচলের উপযুক্ত করে তুলেছে।

বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা, ২০১৮ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলা ২০১৮ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী ৩০ লাখ বীর শহীদের স্মরণে সারা দেশে একযোগে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩০ লাখ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিরও উদ্বোধন করেন। দেশে প্রথমবারের মতো এই ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বনের দস্যুতা দূর করার জন্য আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের পুনর্বাসন এবং বনের অপরাধ দমনের উদ্যোগের পাশাপাশি সেখানে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার জন্য সহ-ব্যবস্থাপনা এবং বিকল্প আয়েরও ব্যবস্থা করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্য রক্ষা করা এবং আমাদের গর্ব রয়েলে বেঙ্গল টাইগারের ব্রিডিং পয়েন্ট উন্নত করা এবং এই রয়েল বেঙ্গল টাইগার যাতে সুরক্ষিত হয় তার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

‘৯৬ সালে সরকারে এসেই ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি সম্পাদনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পানি চুক্তি করার পর আমরা সুন্দরবনের গড়াই নদী খননের কাজ শুরু করি।

গড়াই নদী খননের ফলে সুন্দরবন অঞ্চলের লবনাক্ততা দূর হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই লবনাক্ততা দূর করা একান্তভাবে প্রয়োজন ছিল। কারণ, এই গড়াই নদীর হোগলা বন এলাকাটিই বাঘের ব্রিডিং পয়েন্ট। গড়াই, সালনাসহ সুন্দরবনের নদীগুলো খননের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, মিঠা পানির স্রোতে যত বেশি হবে জলের লবনাক্ততা ততই কমে আসবে। সেজন্যই এই পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।

সুন্দরবনের অভ্যন্তরে জাতির পিতার ঘাসিয়ার খাল খননের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই চ্যানেলটি বন্ধ করে পরবর্তীকালে ক্ষমতায় আসা শাসকগণ সেখানে চিংড়ি চাষের প্রকল্প গ্রহণ করে। ফলে জীববৈচিত্রের জন্য সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ এবং ডলফিনের আবাসস্থল সালনা নদীতে জাহাজ চলাচল শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘাসিয়ার খালের সঙ্গে সংযুক্ত প্রায় আড়াইশো ছোট ছোট খাল বন্ধ করে শুরু করা চিংড়ি চাষ বন্ধ করে চ্যানেলটি পুণরুদ্ধারে তার সরকারকে বেগ পেতে হয়।

তিনি বলেন, একে একে প্রায় সব খালের মুখ আমরা খুলে দিয়েছি। যেগুলোর মধ্যে ৮০টা এখনও বাকি আছে এবং ঘাসিয়ার খাল পুণর্খনন করে সেখান দিয়েই জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। তাতে জাহাজ চলাচলের সময়ও বেঁচে যাচ্ছে। তা না হলে জাহাজগুলোকে অতিরিক্ত ১৪/১৫ কিলোমিটার ঘুরে সালনা নদী দিয়ে আসতে হত। এখন খুব সহজেই জাহাজগুলো মংলা বন্দরে চলে আসতে পারছে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় উন্নয়নের ধারবাহিকতা রক্ষায় সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, সরকার বদল হলে, পরবর্তী সরকারের ভেতর যদি এই সচেতনতা না থাকে যে, কিভাবে দেশকে সুরক্ষিত করতে পারি বা দেশের পরিবেশ রক্ষা করতে পারি। তাহলে এই ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়।

তিনি বলেন, যারা ’৭৫ এর পরে ক্ষমতায় এসেছিল তাদের কাছে চিংড়ি চাষ করে পয়সা বানানোটাই সব থেকে বড় ছিল। কিন্তু পরিবেশ বিনষ্ট হবে, জীব বৈচিত্র্যের সমস্যা হবে সেটা তারা কোনদিনও ভাবেন নাই।

‘তাদের এ ব্যাপারে কোন সচেতনতা ছিল বলেও মনে হয় না, বা তারা দেশটাকেই হয়তো তারা ভালভাবে চেনে না,’ -যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগকে এদেশের মাটি ও মানুষের সংগঠন আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দলটি যখনই ক্ষমতায় আসে দেশের পরিবেশ, দেশের মানুষের উন্নয়ন, দেশের অর্থনৈতিক এবং সার্বিক উন্নয়নের দিকেই দৃষ্টি দেয়া হয়। ‘যে কারণেই সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় এই কাজগুলো করা হয়েছে এবং আমাদের পরিবেশের সুরক্ষা কার্যক্রমও এখন যথেষ্ট অগ্রগামী,’ -বলেন তিনি।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল্লাহ মহসিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।

তিনি অনুষ্ঠানে পরিবেশ পদক ২০১৮ এর জন্য নির্বাচিত ব্যক্তি ও সংস্থা এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন-২০১৮, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৭ ও সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেক প্রাপ্তদের মাঝে পদক ও চেক বিতরণ করেন।

তথ্যসূত্র : বাসস



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ জুলাই ২০১৮/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়