ব্যবসায়ী স্বপনকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন পিন্টু
ব্যবসায়ী স্বপন কুমার সাহা ও ঘাতক পিন্টু দেবনাথ
নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের কাপড় ব্যবসায়ী স্বপন কুমার সাহা হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে খুনি পিন্টু দেবনাথ।
রোববার দুপুরে ২টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল মহসিনের আদালতের খাসকামরায় এ জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) নূর আমল।
নূর আলম জানান, পিন্টু দেবনাথ এর আগে তার আরেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রবীর চন্দ্র ঘোষ হত্যা মামলায় দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। স্বপন কুমার সাহাও পিন্টুর ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন। কলকাতায় কেনা ফ্ল্যাট স্বপন সাহা বুঝিয়ে না দেওয়া এবং তার ব্যবসা ও দোকান প্রবীর ঘোষ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে তাকে হত্যা করে।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরে আলম জানান, ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় পিন্টুর বান্ধবী রত্না রানী চক্রবর্তীকে দিয়ে মোবাইলফোনে নগরীর মাসদাইরের বাসায় ডেকে আনা হয় স্বপন কুমার সাহাকে। পরে জুসের সাথে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে খাইয়ে শিল (পুতা) দিয়ে স্বপন সাহার মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়। পরে বাথরুমের ভেতরে নিয়ে লাশ সাত টুকরা করে বাজারের ব্যাগে ভরে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পিন্টু জানায়, শীতলক্ষ্যা নদীর সেন্ট্রাল খেয়া ঘাট থেকে নৌকায় করে মাঝ নদীতে গিয়ে স্বপনের লাশের ব্যাগ নদীতে ফেলার সময় নৌকার মাঝি পিন্টুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘কী ফেলছেন, ভাই।’ তখন পিন্টু মাঝিকে বলেছিল, ‘ঠাকুর পূজার জিনিসপত্র ফেলছি।’
স্বপনের সাত টুকরা লাশ পাঁচটি বাজারের ব্যাগে ভরে তিন দফায় নদীতে নিয়ে ফেলে। প্রথমে একটি ব্যাগ পরে দুই দফায় দুইটি করে ব্যাগ নদীতে ফেলে। নগরীর মাসদাইর এলাকায় রত্নার বাড়ি থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশের ব্যাগ নিয়ে যেতে পিন্টু পৃথক তিনটি রিকশা ও পৃথক তিনটি নৌকা ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে একবার রিকশা দিয়ে যাওয়ার সময় নগরীর ২নং রেলগেট এলাকায় পুলিশ বক্সে পুলিশ দেখে পিন্টু একটু আগে রিকশা থেকে নেমে যায়। তখন রিকশাওয়ালা পিন্টুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনি কোথায় যান?’ তখন পিন্টু পুলিশের চেকপোস্ট এড়াতে রিকশাওয়ালাকে বলেছিল, ‘রিকশাটা সামনে নিয়ে আসো। আমি একটু কাজ করে সামনে থেকে উঠব।’
নদীতে লাশ ফেলার কাজে তিনটি নৌকা ব্যবহার করা হয়। ওই সময় শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকায় লাশ দ্রুত ভেসে চলে যায় বলে পিন্টু জানায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (ডিবি) মফিজুল ইসলাম জানান, স্বপন সাহা হত্যা মামলার আসামি পিন্টু দেবনাথ ও রত্না রানী চক্রবর্তী হত্যার দায় স্বীকার করে এবং হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। এ ছাড়া মামলার অপর দুই আসামি বাপেন ভৌমিক ও কথিত বড় ভাই হত্যাকাণ্ডের কুপ্ররোচণাকারী আব্দুল্লাহ আল মামুনও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে আদালতের নির্দেশে পিন্টু দেবনাথকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রাইজিংবিডি/নারায়ণগঞ্জ/২৩ জুলাই ২০১৮/হাসান উল রাকিব/সাইফুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন