ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘মিডিয়া হয়ে গেছে সেলিব্রেটিকেন্দ্রীক’

আমিনুর রহমান হৃদয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৬, ১৫ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 ‘মিডিয়া হয়ে গেছে সেলিব্রেটিকেন্দ্রীক’

আমিনুর রহমান হৃদয় : ছোটবেলা থেকেই নাচের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ। স্কুলভিত্তিক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় নাচে অংশ নেয়া শুরু তখন থেকেই। শৈশবের সেই স্বপ্নের পথেই এগিয়ে চলেছেন তিনি। সিলেট মেডিকেল কলেজে সুযোগ পাওয়ার পরও সেখানে ভর্তি না হয়ে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিতে ভর্তি হলেন। এর পিছনেও ওই নৃত্যশিল্পী হওয়ার স্বপ্নটাই কাজ করেছে। বলছিলাম তরুণ নৃত্যশিল্পী মোফাসসাল আল আলিফের কথা। সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তার।

আলিফ জানালেন তার নৃত্যশিল্পী হয়ে ওঠার সেই গল্প ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা। এরই মধ্যে দেশীয় বিভিন্ন নাচের প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করার পাশাপাশি দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক নৃত্য অঙ্গন থেকে বেশ কয়েকটি পুরস্কার জিতেছেন। এর মধ্যে ভারতের বর্ধমান থেকে, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।

‘সিলেট মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে সুযোগ পাওয়ার পরও ভর্তি হলাম জাহাঙ্গীরনগরে। কারণ এখানে সাংস্কৃতিক চর্চার অপার সুযোগ এবং পরিবেশ আছে। ভর্তি হওয়ার পর বেশ কয়েকটি সংগঠনে গেলাম, ভর্তি হলাম। কিন্তু কোথাও নাচের কোনো প্ল্যাটফর্ম পেলাম না। এরপর দুই বছর থিয়েটার করি। পাশাপাশি মর্ডান ড্যান্স শিখি। তারপর ক্ল্যাসিক্যাল। শুরুটা হয় রাসেল রানার হাত ধরে। এরপর এম আর ওয়াসেক স্যারের কাছে তালিম নিতে থাকি।’ নাচের শুরুর গল্পটা এভাবেই বর্ণণা করলেন আলিফ।

আলিফ আরো বলেন, ‘মন থেকে চাইলে সব অসম্ভব সম্ভব করা যায়। আমি মন থেকেই চাইতাম নৃত্য নিয়ে কিছু একটা করার।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই আলিফের স্বপ্নগুলো একে একে ধরা দিতে থাকে। তবে অনেক সময় নানা বাধা-বিপত্তিও পেরোতে হয়েছে তাকে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র নাচের সংগঠন কালবৈশাখীর সভাপতিও হয়েছেন। এছাড়া সময়-সুযোগ পেলেই দেশি-বিদেশি ট্রেইনারের ওয়ার্কশপে অংশ নেন তিনি। আলিফ বলেন, ‘নিজের মতো চর্চা করার জন্য সুন্দর একটি জায়গা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। নাচের ক্ষেত্রে আমার আকর্ষণের জায়গাটা হলো কনটেম্পোরারি স্টাইল এবং বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ড্যান্সফর্ম নিয়ে ব্লেন্ডিং করে ফিউশন করা।’

আলিফ কাজের ক্ষেত্রে আইডল হিসেবে দেখেন যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বিশ্বখ্যাত কোরিওগ্রাফার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আকরাম খানকে। ‘চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে-২০১৫’ প্রতিযোগিতার সিজন থ্রিতে সেমিফাইনাল রাউন্ডে গিয়ে বাদ পড়েন আলিফ। বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় নৃত্য প্রতিযোগিতায় গত তিনবারের চ্যাম্পিয়নশিপ পুরস্কার তার হাতে। আলিফের পছন্দ কনটেম্পরারি নাচ। কিন্তু বাংলাদেশে সেই ধরনের নাচ শেখার তেমন কোনো ইনস্টিটিউট নেই। তাই ইউটিউবই আলিফের অন্যতম শিক্ষক। দেশের বাইরে নাচের উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে অচিরেই দিল্লি যাবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস পান আলিফ। মাস্টার্স শেষ করেছেন গত ডিসেম্বরে। নাচের বাইরে অন্যকিছুতে ক্যারিয়ার গড়ার কোনো পরিকল্পনাকে প্রথম থেকেই ছিল না এই নৃত্যশিল্পীর। তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধুরা এখনই বেশ ভালো স্যালারিতে জব করছে। কিন্তু আমি নাচে এখন আর্থিকভাবে প্রশান্তি না পেলেও মানসিকভাবে বেশ শান্তি পাই। আমি চেষ্টা করব এর সঙ্গে থাকার। যদি বাধ্য হয়ে এর পাশাপশি আমাকে কোনো জব করতে হয়, তখন কিন্তু আমি আর নাচের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারব না। তবে নাচকে প্রাধান্য দেবো।’

দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি নৃত্য উৎসবে অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি কয়েকটি আন্তর্জাতিক উৎসবে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্বও করেছেন আলিফ। সে অভিজ্ঞতা থেকেই তার উপলব্ধি, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের নাচকে ভিত্তি করে কত দূর এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ফোক কালচারকে আরো জোরালোভাবে বিদেশে প্রচার করা দরকার কারণ আমাদের ফোক কালচার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি সমৃদ্ধ। কিন্তু ওভাবে প্রচার করা হচ্ছে না। আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে নাচের অঙ্গনে জুনিয়রদের এক্সপেরিমেন্টাল কাজ করার জন্য খুব একটা সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। মিডিয়াটাও এমন হয়ে গেছে, যাদের দেখে শুধু তাদেরকেই বারবার সুযোগ দেওয়া হয়, অনেকটা সেলিব্রেটি কেন্দ্রীক। ক্রিয়েটিভ কাজের বড় অভাব। নতুনরাও সুযোগ পাচ্ছে খুবই কম।’

তরুণ এই নৃত্যশিল্পী বলেন, ‘যেহেতু আমাকে শিখতে হবে, তাই কষ্ট হলেও আমি আরো শিখতে চাই। একটা ভিন্নমাত্রার ক্রিয়েটিভ স্টাইলের ওপরে একটি নাচের স্কুল করার ইচ্ছে আছে। আমি যেগুলো দেশে শিখতে পারিনি, যারা শিখতে চায়, তারা যেন শেখার সুযোগ পায়।’

নাচের পাশাপাশি নাটক, টেলিফিল্প এবং চলচ্চিত্রে কোরিওগ্রাফি করছেন তিনি। খন্দকার সুমনের পরিচালনায় নির্মিতব্য ‘সাঁতাও’ চলচ্চিত্রে নৃত্য পরিচালনা করছেন। মাহমুদ দিদারের পরিচালনায় ‘বিউটি সার্কাস’ চলচ্চিত্রে কোরিওগ্রাফার হিসেবে কাজ করছেন তিনি। আরেকজন তরুণ নৃত্যশিল্পী মাটি সিদ্দিকীর সঙ্গে জুটি বেধে নিয়মিত টিভি, স্টেজ এবং দেশ-বিদেশে নৃত্য পরিবেশনা দিয়ে মানুষের মন জয় করছেন এই আলিফ-মাটি জুটি।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে নৃত্যশিল্পী মোফাসসাল আল আলিফ বলেন, ‘আমি আরো শিখতে চাই, নিজেকে সম সময় সমৃদ্ধ করতে চাই। সবার দোয়া এবং ভালোবাসা চাই যাতে সৃজনশীল নতুন কিছু উপহার দিতে পারি আপনাদের।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ আগস্ট ২০১৮/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়