ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভোলা সদর হাসপাতালের তিন কনসালটেন্ট থেকেও নেই!

ফয়সল বিন ইসলাম নয়ন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৯, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভোলা সদর হাসপাতালের তিন কনসালটেন্ট থেকেও নেই!

ভোলা সংবাদদাতা: দ্বীপজেলার একমাত্র আধুনিক চিকিৎসা সেবার স্থান হিসাবে বিবেচিত ভোলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার অবস্থা মোটেই ভাল নেই।

এমনিতেই হাসপাতালে লোকবল কম, তার মধ্যেই আবার তিনজন কলসালটেন্ট ভোলা ছেড়ে ঢাকাতেই থাকছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে ভোলার মানুষ চিকিৎসা সেবা বঞ্চিতই থাকছে।

জানা গেছে, এনএসথেসিয়া কনসালটেন্ট ডা. কামরুল ইসলাম গত দুই মাসে একদিনও হাসপাতালে আসেননি। এ ছাড়া অর্থোপেডিক কনসালটেন্ট ডা. ফাইজুল হক ও মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. মো: আহসান উল্লাহ রুমি মাসে মাত্র দু’ একদিন হাসপাতালে আসছেন।

তিন ডাক্তার ঢাকায় বসেই বেতন নিচ্ছেন বলে অভিযোগ। এভাবেই তাদের নিজস্ব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন মাসের পর মাস। তারা কোনো দিন রাতের লঞ্চে ভোলায় আসলেও পরের দিনেই আবার ফেরত চলে যান ভোলা ছেড়ে। এক্ষেত্রে সরকার ও সিভিল সার্জনের কোনো নিয়ম নীতি ও নির্দেশনাকে তোয়াক্কাই করছেন না বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।

ভোলা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. মো: আহসান উল্লাহ রুমি ১৭ সালের ডিসেম্বরে ভোলাতে যোগদান করেন। প্রথমে ভোলা সদরের কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সারাক্ষণ চেম্বার করতেন। তবে বর্তমানে তিনি ঢাকায়ই অবস্থান করছেন।

এনএসথেসিয়া কনসালটেন্ট ডা. কামরুল ইসলাম একই বছরের নভেম্বর মাসে যোগদানের পর থেকেই ঢাকাতে তার অবস্থান। ডিসেম্বর ও জানুয়ারির দিকে তিনি মাসে দু’একদিন ভোলাতে আসলেও গত দুমাসে একদিনও হাসপাতালে আসেননি। অর্থোপেডিক কনসালটেন্ট ডা. ফাইজুল হক মাঝে মাঝে ভোলায় থাকেন কিন্তু হাসপাতালে আসেন না। হাসপাতালে আসলেও তিনি ভালো করে রোগী না দেখেই চলে যান হাসপাতাল ছেড়ে।

এর ফলে ভেঙ্গে পড়েছে হাসপাতালের মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের সকল সেবা। কয়েকজন রোগী আক্ষেপ করে বলেন, হাসপাতালে মেডিসিনের ডাক্তার না থাকায় আমাদেরকে অন্যত্র রেফার করে দিয়েছে। এ ছাড়াও যেকোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনার রোগীদের জন্য সার্জারির ভালো ডাক্তার না থাকায় সে সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন সকলে।

ভোলা সদর হাসপাতালের সংস্থাপন শাখা সূত্রে জানা যায়, একশ শয্যা বিশিষ্ট ভোলা সদর হাসপাতালের জন্য ৫০ শয্যার জনবলের ওপর নির্ভর করে চলতে হয়।

জেলার ২০ লাখ মানুষের একমাত্র আধুনিক চিকিৎসার ভরসা এ হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট প্রকট। একশ শয্যায় ৫৭ জন ও ৫০ শয্যার জন্য ২২ জন চিকিৎসকের কথা থাকলেও সেখানে আছেন মাত্র ১১ জন চিকিৎসক। তাদের মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ ৩টি বিভাগের চিকিৎসক হাসপাতালে থাকেন না বললেই চলে।

জানা যায়, গত আগস্ট মাসে ভোলা সদর হাসপাতালে তিন হাজার রোগী বেডে সেবা নিয়েছেন এবং জরুরি বিভাগ থেকে চার হাজার চারশ জন জরুরি সেবা নিয়েছেন। এ ছাড়াও ৫ টাকার টিকেট করে গড়ে প্রতিদিন চার শতাধিক রোগী আউট ডোরে সেবা নিয়ে থাকেন।

এ ব্যাপারে ভোলার সিভিল সার্জন ডা. রথীন্দ্রনাথ মজুমদার  জানান, এনএসথেসিয়া কনসালটেন্ট ডা. কামরুল ইসলামকে গত দু’মাস আগেই নোটিশ দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু দুমাস পর্যন্ত তিনি এর কোনো সমুচিত জবাব না দেওয়ায় তার বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

অর্থোপের্ডিক কনসালটেন্ট ডা. ফাইজুল হকের বিষয়ে সিভিল সার্জন জানান, তার বিরুদ্ধেও অভিযোগের পাহাড় রয়েছে। তিনি হাসপাতালে ভালো করে রোগী দেখেন না ও হাসপাতালে থাকেন না। সে জন্য তাকে শোকজ করা হয়েছে। তবে মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. মো: আহসান উল্লাহ রুমি একমাত্র মেডিসিন কনসালটেন্ট হওয়ায় তাকে কিছু বলা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘নতুন একজন কার্ডিওলজিস্ট কনসালটেন্ট নিয়োগ পেয়েছে। আশা করি মেডিসিন রোগীদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে। তবে এভাবে একটি হাসপাতাল চলতে পারে না। তাই রোগীদের ভোগান্তি লাঘবে সকল কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’




রাইজিংবিডি/ভোলা/১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ /ফয়সল বিন ইসলাম নয়ন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়