ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ডিরেক্টরস গিল্ড নির্বাচন: কী ভাবছেন তারা

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫৩, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ডিরেক্টরস গিল্ড নির্বাচন: কী ভাবছেন তারা

আমিনুল ইসলাম শান্ত : টেলিভিশন নাট্য নির্মাতাদের সংগঠন ‘ডিরেক্টরস গিল্ড’। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এটি। শুরুতে সিলেকশন পদ্ধতিতে কমিটি গঠন করা হলেও দুই বছর আগে প্রথমবার নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি পায় সংগঠনটি।

আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ডিরেক্টরস গিল্ডের নির্বাচন। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন প্রার্থীরা। নগরীর নিকেতন, শাহবাগ, মগবাজার, উত্তরাসহ বিভিন্ন জায়গায় পরিচালকদের সঙ্গে দেখা করে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। চাইছেন ভোটও। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেন পরিচালক-অভিনেতা কচি খন্দকার, এস. এ. হক অলিক, রিয়াজুল রিজু ও মাবরুর রশীদ বান্নাহ্। এ আলাপচারিতায় নির্বাচন নিয়ে তাদের ভাবনার কথা জানিয়েছেন তারা। 

কচি খন্দকার : গত নির্বাচনে পরিচালক ভাইয়েরা আমাকে বিপুল ভোটে সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত করেছিলেন। এ জন্য সবাইকে আবারো ধন্যবাদ জানাই। এবারো একই পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। ডিরেক্টরস গিল্ড সৃজনশীল একটি সংগঠন। পরিচালকদের স্বার্থ রক্ষা করা এই সংগঠনের প্রধান কাজ। তাদের স্বার্থ রক্ষা মানেই সৃজনশীল নাটক তৈরি ও ভালো বাজেট পাওয়া। সামগ্রিকভাবে যে কাঠামোর ওপর পরিচালকরা দাঁড়িয়ে আছেন-সেটির পরিবর্তন খুবই জরুরি। পরিচালকদের ‘ক্যাপটেন অব দ্য শিপ’ বলা হয়ে থাকে। বাস্তবতার নিরিক্ষে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা সেই সম্মান (সবার ক্ষেত্রে না) পাচ্ছেন না। পরিচালকদের মূল এই জায়গাটা ক্লিয়ার করা। অর্থাৎ তাদেরকে এই প্রাপ্যটা দেওয়া। সংগঠন থেকে তাদেরকে আসল জায়গায় নিয়ে যাওয়া আর সেই লক্ষ্যে কাজ করা। চাইছি, আগামীতে সংগঠনটি আন্তর্জাতিক ট্রান্সফরমেশনে যুক্ত হোক। টেলিভিশন ছাড়াও ইউটিউবসহ অন্যান্য যে মাধ্যমগুলো রয়েছে। এখন সব ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। সেই নিরিক্ষে ডিরেক্টরস গিল্ডকে উপযোগী করে তোলা।

নির্বাচনের আগে পরে পরিচালকদের মধ্যে অনেক বিভাজন দেখা যায়। এটা সৃজনশীল মানুষের কাজ নয়। এটা আমার কাম্য নয়। সর্বোপরি একটি নতুন নেতৃত্ব আসুক। যে নেতৃত্ব ডায়নামিক হবে, যে কথাগুলো বললাম-সামনের দিনে সেসব যাতে নেতারা পূরণ করেন। পেশাদার পরিচালকদের মর্যাদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে- টেলিভিশন, এজেন্সিসহ যারা যারা এই মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত তাদের সবাইকে সমন্বয় করে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা হোক। আশা করি, এবার পরিবর্তনের একটি ধারা তৈরি হবে।

এস. এ. হক অলিক : গত কমিটিতে আমি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। এবারো একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। ডিরেক্টরস গিল্ড আমার প্রাণের সংগঠন, এটি ভালোবাসার একটি জায়গা। যারা এই সংগঠনের সদস্য, ভোটার তাদের প্রতি আমার আস্থা আছে। তারা এমন একটি প্রতিনিধি দল তৈরি করে দিবেন-যারা এই সংগঠনটিকে আরো বেগবান ও শক্তিশালী করবেন। সংগঠনের সদস্যদের সম্মান, কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় চেষ্টা করবেন।

রিয়াজুল রিজু : দৃশ্যপটের জন্মদাতাই সব, সবার সেরা। কিন্তু বাংলাদেশের পাসপেক্টিভে পরিচালকদের সেই অবস্থান এখন নেই। অভিনয়শিল্পী নির্ভর নির্মাতার সংখ্যা এখন অনেক বেশি বেড়ে গেছে। যে কারণে অভিনেতা তৈরি হচ্ছে না কিন্তু প্রতিনিয়ত পরিচালকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের দরকার-নির্মাতাদের উন্নয়ন, সামগ্রিক পরিবেশ পরিস্থিতি একটি স্ট্যান্ডার্ড পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। এজন্য প্রয়োজন নাটকের মান ও বাজেট। বাজেট বাড়লে নাটকের মান বাড়বে। এক্ষেত্রে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সহানুভূতিশীল হতে হবে। আর চ্যানেলগুলো সহানুভূতিশীল হলে নাটকের বাজেট ও মান বাড়বে। 

সামনে নির্বাচন। এজন্য আমাদেরকে একত্রিত হতে হবে। কিন্তু আমাদের পরিচালকরা একত্রিত হচ্ছেন না। একেকজন একেক জায়গায় অবস্থান করছেন। সরলে বললে-তারা বিচ্ছিন্ন। দার্শনিক, মানসিক বা ইথিক্যাল জায়গা থেকে সবাইকে একটি জার্নিতে আসতে হবে। এখানে সবাই পরিচালক। যেহেতু পরিচালক অবশ্যই সবারই ন্যুনতম একটি নীতিবোধ রয়েছে। কিন্তু কোথায় যেন একটা বিচ্ছন্নতাবোধ রয়েছে। আর এই বিচ্ছন্নতাই একত্রিত করতে হবে। এক্ষেত্রে এদের সঙ্গে মিশতে হবে। এদের ভেতরে ঢুকতে হবে, দুঃখ-কষ্টগুলো বুঝতে হবে। আমি আসলে পরিচালকদের একটি পার্ট হতে চাই। এজন্য নির্বাচনে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অংশগ্রহণ করেছি। আমি যখন একটি পোস্ট হোল্ড করব-তখন পরিচালক ভাইয়েরা তাদের সুখ-দুঃখগুলো শেয়ার করবেন বা আমি তাদের কাছে যেতে পারব, তাদের স্বপ্নগুলো বুঝতে পারব। আমি নির্বাচনে জয়ী হলেই রাতারাতি কিছু করে ফেলতে পারব তা নয়, কিন্তু আমাকে তো তাদের সমস্যাটা জানতে হবে। চ্যানেল, প্রোডাকশন হাউসসহ বিভিন্ন জায়গায় বসব, তাদের সমস্যাগুলো শুনব তারপর কোনো একটি সমস্যার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারব। শিল্পের স্বীকৃতি, সম্মানজনক কর্মের নিশ্চয়তা, আর চ্যানেল আমার সরাসরি শিল্পবন্ধু। এর মাঝখানে আর কেউ থাকবে না-সরকারের কাছে এটা আমার দাবি। দাবি আদায়ের সংগ্রামে আমি আছি, থাকব।

মাবরুর রশীদ বান্নাহ্ : সামনে টেলিভিশন ডিরেক্টরস গিল্ডের নির্বাচন। টেলিভিশনে যেসব পরিচালকরা কাজ করেন তাদের নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া এটি। বিষয়টা আমাদের মধ্যে হলেও টেলিভিশনের দর্শক বা আমরা যারা সরাসরি সম্পৃক্ত তাদের জন্য গুরুত্ত্ব কম নয়। আমি মনে করি, যোগ্য নেতৃত্বের অভাবেই আমরা আশেপাশের দেশের কাছে বিভিন্ন সময়ে হেরে যাই। আমাদের ডিরেক্টরস গিল্ড নিশ্চয়ই বিশ্বের অন্যসব গিল্ডের মতো শক্তিশালী নয়। আমাদের আন্তর্জাতিক কোনো স্বীকৃতি নেই। অ্যাওয়ার্ড বা হায়ার স্টাডিতে গিল্ডের ভূমিকা তো আরো নেই। আমি জানি, এখানে অনেকেই বলতে পারেন আপনারা আগে কাজের সুষ্ঠু বণ্টন করেন। আমি বলব, পরিচালক ও তাদের নেতাদের এটাও এক ধরণের ব্যর্থতা। এতদিন যারা ছিলেন তারা কয়েকজন শিল্পীকে নিষিদ্ধ করেছেন। আর কিছু টুকটাক সমস্যার সমাধান করেছেন। ডিরেক্টরস গিল্ডের সংগঠনের ভার অনুযায়ী যা আমার কাছে খুবই নগন্য।

আমাদের নেতারা কেন জানি খুব বড় কিছু ভাবতেই ভয় পান বা ভাবতেই পারেন নাই তবে করবেনটা কি! অনলাইনে যেখানে সারা বিশ্বে রেভুলেশন হচ্ছে, সেখানে আমাদের পুরোনো নেতারা নিশ্চুপ। চাইলে গিল্ড আরো কয়েকটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারত। টিভির শীর্ষ ব্যক্তিদের আর প্রডিউসার্স, আর্টিস্ট, সিনেমাটোগ্রাফার্স, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সঙ্গে নিয়ে কিছু করতে চাইলে এতদিনে নিশ্চয়ই কিছু হতো। অবশ্যই হতো। কারণ আমি বিশ্বাস করি, নেগেটিভ এনার্জির চাইতে পজেটিভ এনার্জির শক্তি অনেক বেশি। আমি বলব দু বছরে আমরা আগাই নাই পুরোনো নেতারা পারেন নি বা করেন নি। কারণ দূরদর্শী ভাবনা তাদের ছিল না। সো রাইট নাও উই নিড চেঞ্জ। নতুন নেতাদের চাই।বাংলাদেশের টেলিভিশন পরিচালকদের অনুরোধ করব- আমরা তো গত দুই বছর দেখলাম। চলেন পেছনে না তাকিয়ে এবার সামনে তাকাই। সামনে আগাই।

জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে ২০টি পদে মোট ৫২ জন প্রার্থী লড়বেন। এর মধ্যে সভাপতি পদে ২ জন, সহসভাপতি ৭ জন, সাধারণ সম্পাদক ৩ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৪ জন, অর্থ সম্পাদক ২ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ৩ জন, প্রচার সম্পাদক ২ জন এবং কার্যনির্বাহী সদস্য পদে ২৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সালাহউদ্দিন লাভলু ও সৈয়দ আওলাদ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে এস এ হক অলিক, এস এম কামরুজ্জামান সাগর, মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮/শান্ত/মারুফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়