ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শিশুপার্কটি এখন ময়লা আবর্জনার ভাগাড়

ফরহাদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিশুপার্কটি এখন ময়লা আবর্জনার ভাগাড়

লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা: সংস্কারের অভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ শিশুপার্ক। পার্কটি এখন ময়লা আবর্জনার ভাগাড় ও মাদক সেবীদের আড্ডাখানায় পরিনত হয়েছে।

পার্কটি রামগড় উপজেলার শিশু-কিশোরদের একমাত্র বিনোদন স্থান হওয়া সত্ত্বেও সংস্কারহীন পড়ে আছে দীর্ঘদিন। ফলে বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা।

শিশুদের অনেক অভিভাবকেরই অভিযোগ, পার্কটিকে গরু-ছাগলের চারণভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ পার্কের মধ্যে গাড়ির গ্যারেজও গড়ে তুলেছেন। কেউ কেউ আবার ফেলে রেখেছেন বাড়ি ও রাস্তা নির্মাণ সামগ্রী।

এ ছাড়াও পার্কটির সকল প্রকার রাইড, খেলনা, সীমানা প্রাচীরের রড ও বিভিন্ন মূল্যবান আসবাবপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে। সব কিছু হারিয়ে পার্কটি শূন্য মাঠে পরিণত হয়েছে। ফলে রাজনৈতিক সভা-সেমিনার ও বিভিন্নসময় মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে শিশুদের এই বিনোদন স্পটে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাই এর কারণ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

এই শিশু পার্কটির বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদও। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু দাউদ মো. গোলাম মোস্তফা জানান, তিনি দীর্ঘদিন খুঁজেও পার্কের ফাইলটি পাননি।

সংস্কারের জন্য কিভাবে নতুন বরাদ্ধ দিয়েছেন ফাইল ছাড়া? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘পার্কটির নাম অনুযায়ী বরাদ্ধ দিয়েছি। তবে এই পার্ক সম্পর্কিত বিস্তারিত লিপিবদ্ধ ফাইলটি কয়েকবার খুঁজেও পাইনি। তাই পার্ক সংশ্লিষ্ট কোন তথ্য দিতে পারছি না।’

স্থানীয়দের তথ্য মতে, এখানকার মানুষের চিত্ত বিনোদনে ২০০৫ সালের ১৪ অক্টোবর যাত্রা শুরু করে রামগঞ্জ শিশুপার্ক। তৎকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জিয়াউল হক জিয়া পার্কটির উদ্বোধন করেন। পার্কটির ভিতরে নির্মাণ করা হয় পাকা বেঞ্চ, দোলনা, লেক, ব্রিজসহ শিশুদের খেলার রাইড। সেই সাথে পার্কটিতে বিভিন্ন জাতের ফুল-ফল ও কাঠগাছ লাগানো হয়।

রামগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ ও পার্ক সংলগ্ন স্কুলের রাফি, নাসির জানান, পার্কটিতে এক সময় ছিল অনেকগুলো রাইডস, বিনোদনের সুব্যবস্থা ছিল। তখন পার্কটি প্রতিদিনই শিশু-কিশোরদের পদচারণায় মুখরিত থাকতো। বর্তমানে পার্কটির চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। মাদকসেবী, গাড়ি গ্যারেজ, ময়লা-আবর্জনা, বাড়ি ও রাস্তার নির্মাণ সামগ্রীর স্তুপ ও গরু-ছাগলের চারণ ভূমিতে পরিনত হয়েছে পার্কটি। পার্কটির মূল্যবান অনেক জিনিস ও আসবাবপত্র চুরি হয়ে গেছে।
 


পৌর শহরের একজন ব্যবসায়ী বলেন, দীর্ঘদিন অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সংস্কার না হওয়ায় পার্কটির চিত্র এখন একটি খোলা মাঠের মতই। অন্যদিকে পার্কটির একমাত্র লেক দেখে মনে হচ্ছে কোন পরিত্যাক্ত জলাধার। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সবাই যে যার মতো করে ব্যবহার করছে পার্কটিকে।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষিকা আয়েশা আক্তার রুমি বলেন, ‘এখানে বিনোদনের সুব্যবস্থা না থাকায় সন্তানদের নিয়ে যেতে হয় জেলা শহরের অথবা বাইরের কোনো পার্কে। এতে অর্থ ও সময় দু’টাই নষ্ট হচ্ছে।’

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, ‘দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে পার্কটি। বর্তমানে পার্কের কিছু অংশ সংস্কারের জন্য দশ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরে প্রয়োজনীয় বরাদ্ধের মাধ্যমে পুর্ণাঙ্গ সংস্কার করা হবে।’

পার্কে রাখা জঞ্জাল সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও অন্যান্য সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

 

 

রাইজিংবিডি/লক্ষ্মীপুর/২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮/ফরহাদ হোসেন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়