ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরেছে সরকার

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৯, ৯ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরেছে সরকার

হাসান মাহামুদ : শিল্পকারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসার কথা ছিল চলতি সপ্তাহেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পরিষ্কার আভাসও ছিল। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে অনেক কিছু ভেবে দেখেছে কমিশন। আপাতত গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে না সরকার।

জানা গেছে, এর আগে উচ্চমূল্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক (এসডি) মওকুফের জন্য সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা বিইআরসি সম্পূরক শুল্ক ব্যয় মেটাতেই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জ্বালানি সংক্রান্ত সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি আপাতত স্থগিত রেখেছে।

জানা গেছে, সম্পূরক শুল্ক মওকুফের পর গ্যাসের মূল্যের সাথে রেগুলেটরি কমিশন এখন সমন্বয়ের কাজ করছে। ফলে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের জন্য আরো কিছু সময় লাগবে। সেক্ষেত্রে চলতি বছরে এই সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা কম বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে সিদ্ধান্তের জন্য আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।’

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। কারণ, গ্যাসের মূল্যের সাথে আরো অনেক খাত জড়িয়ে থাকে। গ্যাসের মূল্যের ওপর যেকোনো সিদ্ধান্তই অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। আগামী নির্বাচনের আগে সেটা সরকার কখনোই চাইবে না।

গত জুনে এলএনজি আমদানি চূড়ান্ত হওয়ার পরই গ্যাসের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়। জুনের ১১ তারিখ থেকে দাম বাড়ানোর ওপর শুনানি করে রেগুলেটরি কমিশন। শুনানিতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের গড় দাম ৭ টাকা ৩৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৯৫ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে কোম্পানিগুলো। কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- তিতাস গ্যাস ট্রান্স ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড।

আবেদনে সব মিলিয়ে ৭৩ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। শুনানিতে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে বিইআরসিকে বলা হয়- ভ্যাট, ব্যাংক চার্জ, রিগ্যাসিফিকেশন চার্জসহ নানা ধরনের চার্জ যোগ করে আমদানি করা এলএনজির বিক্রয়মূল্য দাঁড়াবে ৩৩ টাকা ৪৪ পয়সা, যা বর্তমানে বিক্রিত গ্যাসের চার গুণ বেশি। শুনানির সময় গ্যাস খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তি দেখায়, উচ্চমূল্যে আমদানিকৃত এলএনজি ব্যয়ের কারণে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দিতে হয় তাদের। কারণ, এতে তাদের খরচ যথেষ্ট পরিমাণে বেড়ে যাবে। আর উচ্চমূল্যের প্রভাব পড়বে বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা, সিএনজি স্টেশন, শিল্পকারখানা ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ওপর।

শুনানি শেষ হওয়ার ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার কথা। কিন্তু এই ঘোষণা কবে নাগাদ আসে, সে বিষয়ে কমিশনের কর্মকর্তারা জানাতে পারেননি। এ বিষয়ে কমিশনের ট্যারিফ শাখার এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। এখনই এ বিষয়ে কিছু জানানো যাচ্ছে না। তবে এই সপ্তাহে কোনো রকম সিদ্ধান্ত আসবে না, এটি আশ্বস্ত করা যাচ্ছে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ অক্টোবর ২০১৮/হাসান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়