ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

‘আপনাদের সাথে আমাদের জান্নাতে দেখা হবে’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আপনাদের সাথে আমাদের জান্নাতে দেখা হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘আপনারা সবাই নামাজ পড়বেন, কোরআন পড়বেন। এই লাশগুলো যেভাবে দেখছেন, আমাদের অবস্থাও ওই রকম হবে। আপনাদের সাথে আমাদের জান্নাতে দেখা হবে।’

রোববার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে হলি আর্টিজানের বাবুর্চি সমীর বাড়ৈ সাক্ষ্য দেন। তিনি তার জবানবন্দিতে হামলার দিন জঙ্গিদের এসব কথা উদ্ধৃত করেন।

এদিন সমীর বাড়ৈসহ আরো দুজন সাক্ষ্য দেন। এরা হলেন- গাড়িচালক আব্দুর রাজ্জাক ও নিরাপত্তা প্রহরী নূর আলম। তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আগামী ১৭ ডিসেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন।

সমীর বাড়ৈ জবানবন্দিতে বলেন, ‘ঘটনার দিন রাতে আমি মাছ ফ্রাই করছিলাম। তখন হঠাৎ গুলির শব্দ ও আওয়াজ শুনতে পাই। পরে একজন এসে বলল, আমাদের অফিসে গোলাগুলি হচ্ছে। তখন আমিসহ কয়েকজন পিছনের দরজা দিয়ে ওয়াসরুমে চলে যাই। রাত আড়াইটা থেকে ৩টার দিকে দুই জঙ্গি এসে আমাদের ডাকে। তারা বলেন, আপনারা বাঙালি কি না? বাঙালি হলে দরজা খোলেন। না হলে বোমা নিক্ষেপ করব।’

তিনি বলেন, ‘বাধ্য হয়ে আমরা তখন দরজা খুলে দেই। দরজা খুলে দেখি, দুই জঙ্গি অস্ত্র এবং ধারালো চাপাতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তখন আমাদের দেখে তারা আবার  আমাদের ওয়াসরুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা লক করে দেয়। সারা রাত ওইখানে থাকি। সকালে অফিসের একজন এসে বলে, আমাদের সবাইকে এখন সামনে আসতে হবে, জঙ্গিরা চলে যাবে।’

‘তখন জঙ্গিরা বলে, আপনারা সবাই নামাজ পড়বেন, কোরআন পড়বেন। এই লাশগুলো যেভাবে দেখছেন, আমাদের অবস্থাও ওই রকম হবে। আপনাদের সাথে আমাদের জান্নাতে দেখা হবে। তারা আমাদের আরবিতে কোরআন না পড়ে বাংলায় পড়তে বলেন। তারা বলেন, আমরা এখন বেরিয়ে যাব। আপনারার চলে যান। এরপর আমরা যে সেখানে পারছি চলে যাই।’

সমীর বাড়ৈ বলেন, ‘২/১ মিনিটের মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলি শুরু হয়। সকালে সেনাবাহিনী অভিযান চালায়। এরপর আমি যখন ভিতর দিয়ে মেইন অফিসের দিকে যাই, তখন চারপাশে শুধু লাশ আর লাশ দেখতে পাই।’

আব্দুর রাজ্জাক তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘ঘটনার দিন চার জাপানি নাগরিককে নিয়ে আমি হলি আর্টিজান রেঁস্তোরায় যাই। তাদের নামিয়ে দিয়ে লেকভিউ ক্লিনিকের সামনে গাড়ি পার্কিং করি। রাত সাড়ে ৮টার দিকে একটা বিকট শব্দ শুনতে পাই।  এরপর আমি মাটিতে পড়ে যাই। এ সময় আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে বোমার স্প্লিন্টার এসে লাগে। এরপর একটা পুলিশের গাড়ি এসে আমাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে জানতে পারি জঙ্গিরা সেখানে হামলা করে।’

নূর আলম বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি ৭৯ রোডের ৬ নং বাড়িতে পাহারা দিচ্ছিলাম। রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে হলি আর্টিজানের গেটে যাই। ৫/৬ জন লোক হলি আর্টিজানের দিকে ঢোকে। আমি তাদের পরিচয় জানতে চাই। আমাকে কিছু না বলে তারা ভিতরের দিকে চলে যায়। আবারও তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা আমাকে বলে, এই ব্যাটা সর। তারা ডান চোখের নিচে আঘাত করে। পরে আমি লেকভিউ ক্লিনিকে আশ্রয় নেই। পরের দিন দুপুরের হামলার কথা শুনতে পাই।’

এখন পর্যন্ত এ মামলায় চারজনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ ডিসেম্বর ২০১৮/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়