ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

হানাদারমুক্ত নরসিংদী

গাজী হানিফ মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১২ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হানাদারমুক্ত নরসিংদী

নরসিংদী সংবাদদাতা: মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাস নরসিংদী জেলার বিভিন্নস্থানে শতাধিক খন্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। ওইসব যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীর নির্মমতার শিকার হয়ে শহীদ হয়েছেন ১১৬ জন বীর সন্তান।

এর মধ্যে রয়েছেন নরসিংদী সদরের ২৭জন, মনোহরদীর ১২জন, পলাশের ১১জন, শিবপুরের ১৩জন, রায়পুরায় ৩৭জন ও বেলাব উপজেলার ১৬ জন। এছাড়া বহু মা-বোনের নিরব আত্মত্যাগের বিনিময়ে মুক্ত হয়েছিল নরসিংদী। আজ নরসিংদী হানাদারমুক্ত দিবস।

১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর পরাজয় ও আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সমগ্র নরসিংদী পাক হানাদারমুক্ত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ দিনটি নরসিংদীবাসীর কাছে অত্যন্ত গৌরবোজ্জল ও স্মরণীয়।

৭১’এর মার্চে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে নরসিংদীতে ইপিআর, আনসার ও পুলিশ বাহিনীর সাথে মিলিত হয়। এতে হাজার হাজার ছাত্র জনতা তাদেরকে স্বাগত জানায়। নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে শত শত যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে শুরু হয় প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও চোরাগুপ্তা হামলা।

স্থলপথে মুক্তিবাহিনীর প্রবল প্রতিরোধে টিকতে না পেরে ৪ এপ্রিল পাক বাহিনীর বোমারু বিমান নরসিংদী শহরে বোমাবর্ষণ শুরু করে। তখন গোটা শহরে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিমান বাহিনীর বোমা বর্ষণে শহীদ হন আব্দুল হক ও নারায়ণ চন্দ্র সাহাসহ নাম না জানা আরো ৮ জন। ২৩ মে তৎকালীন মুসলীম লীগ নেতা মিয়া আব্দুল মজিদ মুক্তি সেনাদের গুলিতে নিহত হন। এরপরই পাকবাহিনী নরসিংদী টেলিফোন ভবনে ঘাঁটি স্থাপন করে। স্থানীয় টাউট, দালাল ও রাজাকারদের যোগসাজসে হানাদাররা প্রতিদিন ধর্ষণ, নরহত্যা ও লুটতরাজ চালায়।

নরসিংদী সদর উপজেলায় নেহাব গ্রামের নেভাল সিরাজের নেতৃত্বে হানাদার প্রতিরোধ দূর্গ গড়ে তোলা হয়। ওই স্থান থেকে সমগ্র জেলায় মুক্তিযোদ্ধারা নিরলসভাবে তৎপরতা অব্যাহত রাখে। মুক্তিযুদ্ধে নরসিংদী জেলা ছিল ২নং সেক্টরের অধীনে। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তৎকালীন মেজর জেনারেল সফিউল্লাহ। নরসিংদীকে ৩ নং সেক্টরের অধীনে নেওয়া হলে কামান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন মোঃ নূরুজ্জামান। নরসিংদীকে মুক্ত করতে পাক বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধারা যে সব স্থানে যুদ্ধে অবর্তীণ হয়েছিলেন সে স্থান গুলো হলো, নরসিংদীর সদর উপজেলার বাঘবাড়ী, পালবাড়ী, আলগী, পাঁচদোনা, পুটিয়া, চলনদীয়া, মনোহরদী উপজেলার হাতিরদীয়া বাজার, রায়পুরা উপজেলার শ্রীরামপুর বাজার, রামনগর, মেথিকান্দা, হাটুভাঙ্গা, ভাঙালীনগর, খানাবাড়ী সাবেক নারায়ণপুর বর্তমানে বেলাব উপজেলার অন্তগর্ত ও বেলাব উপজেলার বেলাব বাজার,বড়িবাড়ী ও নীলকুঠি নামক স্থানে।

এ সময় আড়িয়াল খাঁন নদীর পাড়ে বেলাব বড়িবাড়ীর নীলকুঠির যুদ্ধে হানাদারদের হাতে শহীদ হন সুবেদার আবুল বাশার,মমতাজ উদ্দিন, আব্দুস সালাম ও আব্দুল বারী।

এছাড়া পাক হানাদার বাহিনীরা বড়িবাড়ী বাজনাবরের নিরীহ ৮/১০ জনকে ধরে এনে এক সাথে গুলি করে হত্যা করে এবং বাড়ীঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পাক বাহিনীরা রাজাকারদের সহযোগিতায় নরসিংদী জেলার ১৫টি বধ্যভূমিকে বিভক্ত করে নৃশংস হত্যাকান্ড চালিয়ে ছিল। এ গুলোর মধ্যে নরসিংদী শহরের টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিস, শ্মশানঘাট,খাটেহারা সেতু, রায়পুরা উপজেলার পরিষদ ভবন, মেথিকান্দা রেলওয়ে স্টেশন, রামনগর, বেলাব বড়িবাড়ী, পলাশের জিনারদী রেলওয়ে স্টেশন, শিবপুরের পুটিয়া উল্লেখযোগ্য।

যুদ্ধকালীন সময় বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে শহীদ হয়েছেন, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক সুরুজ কুমার অধিকারী, ড. সাদত আলী, মোঃ শহীদুল্লাহ, মোঃ সামসুজ্জামান, মোঃ ফজলুর রহমান ও বীর শ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেঃ মতিউর রহমান।

স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য অবদানের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে খেতাব ভূষিত হয়েছেন নরসিংদীর ফ্লাইট লেঃ শহীদ মতিউর রহমান বীরশ্রেষ্ঠ, নেভাল সিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ বীরপ্রতিক, লেঃ কর্ণেল আব্দুর রউফ বীর বিক্রম, সুবেদার খন্দকার মতিউর রহমান বীর বিক্রম, বিগ্রেডিয়ার (অবঃ) এ.এস.এম নুরুজ্জামান বীর বিক্রম ও লেঃ কর্ণেল (অবঃ) নুরুল ইসলাম ভূইয়া বীর বিক্রম।

নরসিংদী মুক্তদিবস উপলক্ষে আজ নরসিংদী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর পক্ষ থেকে এক আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করা হয়েছে।




রাইজিংবিডি/ নরসিংদী/১২ ডিসেম্বর ২০১৮/গাজী হানিফ মাহমুদ/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়