বেতন বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ
রাইজিংবিডি ডেস্ক : বেতন বৃদ্ধির দাবিতে পোশাক শ্রমিকরা ঢাকার সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাইনবোর্ড, কোনাবাড়িতে বিক্ষোভ করেছে। আশুলিয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে অর্ধ শতাধিক কারখানা। গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধ করেছে শ্রমিকরা। শ্রমকিদের সাথে সংঘর্ষের পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলে প্রায় আধা ঘণ্টা পর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল উত্তপ্ত, অর্ধশতাধিক কারখানায় ছুটি
রাইজিংবিডির সাভার প্রতিবেদক সাফিউল ইসলাম সাকিব জানান, সদ্যঘোষিত বেতন কাঠামোতে বৈষম্যের অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল। শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও কর্মবিরতির মুখে শিল্পাঞ্চলের অর্ধশতাধিক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়ে টানা চার দিনে পৌঁছালো শ্রমিকদের এই আন্দোলন।
বুধবার সকালে কারখানায় এসে কাজে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা। এক পর্যায়ে নিজ নিজ কারখানায় বিক্ষোভ দেখিয়ে কারখানা থেকে বেরিয়ে যায় তারা। এভাবে একে একে অর্ধশতাধিক কারখানা থেকে বেরিয়ে গেছে শ্রমিকরা।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) তাহমিদ আহমেদ জানান, বেশ কিছু কারখানায় সকালে উৎপাদন শুরু হয়েছিল। কিন্তু কোনো একটি কারখানার শ্রমিকরা বেরিয়ে গেলেই তাদের দেখাদেখি অন্য কারখানার শ্রমিকরাও বেরিয়ে যাচ্ছেন। তাদের দাবি সম্পর্কে নিজেরাই অবগত নন।
গাজীপুরে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ
রাইজিংবিডির গাজীপুরের প্রতিবেদক হাসমত আলী জানান, পুলিশ, শ্রমিকরা ও স্থনীয়রা জানায়, সরকারঘোষিত বেতন কাঠামোয় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাইনবোর্ড এলাকার ইস্ট ওয়েস্ট, প্রীতি সোয়েটার ও ম্যাট্রিক্স কারখানার শ্রমিকরা প্রথমে কারখানার অভ্যন্তরে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে তারা মিছিল সহকারে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বিঘ্ন হয়। এক পর্যায়ে শিল্প পুলিশ শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ ঘটে। পরে পুলিশ শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে বেলা সোয়া ১১টার দিকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকরা রাস্তায় নামলে তাদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ি এলাকায় একই দাবিতে বিক্ষাভ করেছে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় শ্রমিকরা কয়েকটি পোশাক কারখানার গেট ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জানালার কাঁচ ভাঙচুর করে। দুপুর ১২টার দিক শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক জড়ো হয়ে ফুটপাতের দোকানের আসবাবপত্র দিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এতে ওই সড়েক সকল যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় শ্রমিকরা লাঠিসোটা নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান নেয়। পরে কোনাবাড়ি থানা ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থেল গিয়ে ধাওয়া ও কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিলে প্রায় আধা ঘণ্টা যান চলাচল শুরু হয়।
কোনাবাড়ি শিল্প পুলিশর সহকারী উপপিরদর্শক (এএসআই) মো. সোহেল রানা সাংবাদিকদের জানান, কয়েক দিন ধরে শ্রমিকরা বিক্ষাভ করছে। বুধবার দুপুরে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল গ্যাস নিক্ষেপ ও তাদের ধাওয়া দিলে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে মহাসড়েকর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
উল্লেখ্য, সরকার গত সেপ্টেম্বর মাসে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা ঘোষণা করে, যা ডিসেম্বর মাস থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু ঘোষিত মজুরি কাঠামোর সুবিধা কি সব শ্রেণির শ্রমিকরা পাবে কি না, এ বিষয়ে একেবারে ধারণা নেই শ্রমিকদের। তাই বেতন কাঠামোতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছে শ্রমিকরা।
রাইজিংবিডি/গাজীপুর/১২ ডিসেম্বর ২০১৮/সাইফুল আহমেদ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন