ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রংপুরের ৮০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই

নজরুল মৃধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১০, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রংপুরের ৮০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই

রংপুরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর: শহীদ মিনার ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের প্রতীক। কিন্তু রংপুরের ৮০ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার নেই।

রংপুর জেলায় ১৪৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৫০৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর কতটিতে শহীদ মিনার রয়েছে বা কতটিতে নেই তা জানেনা এখানের শিক্ষা অফিস। তবে তাদের ধারণা, প্রাথমিকে ৮০ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ৬০ শতাংশ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই।

যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই তারা বাঁশ,কাগজ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে তাতেই শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। আবার কেউ কেউ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিচ্ছে।

নগরীর শালবন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানেও কোন শহীদ মিনার নেই। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্কুল প্রাঙ্গণে বাঁশ, কাগজ ও ককসিট দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ ধরনের বেশকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেই অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের শহীদ মিনারে গিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।

ভাষা আন্দোলনের ৬৭ বছর পরেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন শহীদ মিনার নির্মাণ করা হলো না- এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকরা তাদের মতামত ব্যক্ত করে বলছেন, শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারিভাবে কোন বরাদ্দ নেই। এছাড়া বেসরকারি ভাবে কেউ এগিয়ে আসেনা। অনেক বিদ্যালয়ে আবার জায়গার স্বল্পতা। তবে তারা বলছেন ভাষা শহীদদের স্মরণ করতে পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি করা হবে।

নগরীর শালবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সাবেরা জানায়, তাদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। তারা বাঁশ, কাগজ ও ককসিট দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষা শহীদদের স্মরণ করে।

ওই বিদ্যালযের প্রধান শিক্ষক নিশা আক্তার স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার তৈরি করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

শালবন সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী রিদিকা ইসলাম, সাদিয়া আক্তার মেঘাসহ কয়েকজন জানায়, তারা প্রতিবছর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানায়। নিজ প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানিয়েছে তারা।

ওই প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক শেফালি আক্তার বলেন, ‘শহীদ মিনার নির্মাণে বরাদ্দ না থাকায় অনেকে প্রতিষ্ঠানই শহীদ মিনার করতে পারছে না।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কত বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে  তার প্রকৃত তথ্য আমার জানা নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে ৮০ শতাংশ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। যেসব বিদ্যালয়ে নেই সেই সব বিদ্যালয়ের তালিকা করে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাঃ রোকসানা বেগম বলেন, ‘প্রাথমিকের চেয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনারের সংখ্যা বেশি।’ শহীদ মিনার নেই এমন প্রতিষ্ঠানের তালিকা করে শহীদ মিনার করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

রংপুরে প্রথম শহীদ মিনার গড়ে তোলা হয়েছিল ১৯৫৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের যৌথ উদ্যোগে। রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে লাইব্রেরি ভবনের মাঝখানের হলরুমের ঠিক সম্মুখভাগে ছোট আকারে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়। ছাত্ররা নিজেরাই ইট, সিমেন্ট, বালু যোগাড় করে মিনারটি নির্মাণ করেন।

ভাষা সৈনিক শাহ তবিবুর রহমান জানান, সেদিন শহরের গুপ্তপাড়ার ডাক্তার মোজাহারের বাড়ির সামনে থেকে এবং আরো কয়েকস্থান থেকে ইট সংগ্রহ করা হয়। প্রথমে সিমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয় তৎকালিন পৌরসভা পুকুরের কাদামাটিকে। রাতারাতি দাঁড় করোনো হয় রংপুরের শহীদ মিনারটি।  বিষয়টি রাতেই শহরে অনেকের নিকট জানাজানি হয়ে যায়। পরদিন ভোর বেলা এই শহীদ মিনারেই রংপুরের আপামর ছাত্র-জনতা, অমর শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর  হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এটিই ছিল রংপুর শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। স্বাধীনতা অর্জনের পর অপেক্ষাকৃত বড় আকারে রংপুরে দ্বিতীয়বারের মত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি নির্মিত হয়।




রাইজিংবিডি/রংপুর/৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/নজরুল মৃধা/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়