ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

যে বাঁধ সম্পন্ন হলে পাল্টে যাবে চরাঞ্চলের দৃশ্যপট

অদিত্য রাসেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যে বাঁধ সম্পন্ন হলে পাল্টে যাবে চরাঞ্চলের দৃশ্যপট

সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা : সিরাজগঞ্জে শাহজাদপুরে দেশে প্রথমবারের মতো দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত হচ্ছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এই বাঁধ সম্পন্ন হলে পাল্টে যাবে চরাঞ্চলের দৃশ্যপট।

যমুনা এবং হুরা সাগর নদী তীরবর্তী প্রায় সাড়ে ২১ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের স্লোপ সংরক্ষণে ব্লক- এর পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে পরিবেশবান্ধব জুট ম্যাট্রেস ও বিন্না ঘাস। এটি সম্পন্ন হলে চরাঞ্চলের আর্থ সামাজিক অবস্থা বদলে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বাঁধ নির্মাতারা বলছেন, জুট ম্যাট্রেস দ্বারা পরীক্ষামূলকভাবে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে স্লোপ প্রটেকশনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। প্রকল্পটি প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন এবং জনসাধারণের আর্থ সামাজিক ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে।

পাবনার বেড়া উপজেলার কৈতলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ফ্লাড অ্যান্ড রিভার ব্যাংক ইরোশন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (ট্রান্স-১) এর আওতায় বাঁধটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী ফসলি জমির ক্ষতি পরিহার করে নদী ড্রেজিং করে বাঁধের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর ফলে একদিকে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি পাবে অপরদিকে প্রকল্প এলাকায় বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করার মাধ্যমে বন্যায় ঝুঁকি সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব হবে।

যমুনা এবং হুরা সাগর নদীর পাড় ঘেঁষে এই পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে প্রায় সাড়ে ২১ কিলোমিটার বাঁধ। এর বিস্তৃতি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার হাটপাচিল থেকে পাবনার বেড়া উপজেলার প্যচাকোলা হয়ে সিরাজগঞ্জের আহমেদপুর পর্যন্ত।

 



নদীর খননের মাধ্যমে তোলা বালু আর মাটি দিয়ে চলছে বাঁধের কাজ। এতে একদিকে রক্ষা পাবে কৃষি জমি অন্যদিকে দূর হবে নাব্যতা সংকট। সাশ্রয় হবে পরিবহন ব্যয়। এছাড়াও বাঁধ তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে দেশে তৈরি সিমেন্ট ভর্তি চটের ব্যগ এবং জুট ম্যাট্রেস।

বাঁধের দুপাশে বিন্না ঘাস দিয়ে বাড়ানো হবে মাটির ঘনত্ব। বাঁধের ৪টি পয়েন্টে তৈরি করা হচ্ছে স্লুইস গেট। আর এই প্রযুক্তিতে বাঁধ তৈরিতে লাগছে ১শ ৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে বাঁধের ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছর বর্ষার আগে নির্মাণ শেষ হবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে।

বলা হচ্ছে, বাঁধটি তৈরি হলে পাবনা ও সিরাজগঞ্জের শতাধিক গ্রামের মানুষ বন্যার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে। পাল্টে যাবে তাদের আর্থ সামাজিক অবস্থা। বাঁধটি হবে ৪০ ফিট চওড়া রাস্তা। অদুর ভবিষ্যতে বেড়া এলাকায় মহাসড়ক আর সেতু নির্মাণ হলে পাবনার সঙ্গে ঢাকার পথ সাশ্রয় হবে প্রায় ৭০ কিলোমিটার।

শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মোকসেদ আলম মকিম খান বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের দাবী ছিলো বাঁধ নির্মাণ। সরকার আমাদের দাবী পূরণ করেছে। বাঁধ হওয়ার কারণে সুবিধা ভোগ করবে এই অঞ্চলের প্রায় ৮টি ইউনিয়নের লোক। বিশাল ফসলি জমি বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে। আগে এসব জমিতে এক ফসলের চাষ হতো। এখন তিন ফসলের চাষাবাদ করা যাবে। ১ বিঘা জমি বিক্রি হতো ২০ হাজার টাকায় এখন জমির দাম হয়েছে ১ লাখ টাকা। দিন দিন জমির দাম বেড়েই চলেছে।’

স্থানীয় কৃষক আব্দুল বাবী সরদার বলেন, ‘এখন আর আমাদের ফসল নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে না। বাঁধটি পুরোপুরি নির্মাণ শেষ হলে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে। যমুনা নদীর প্রত্যন্ত এই অঞ্চলে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। গো খাদ্যের অভাব পড়বে না। এই বাঁধ দিয়েই হাটপাচিল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় কম সময়ে পৌঁছানো সম্ভব হবে।’

পাবনার বেড়া উপজেলার কৈতলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী ফসলি জমির ক্ষতি পরিহার করে নদী ড্রেজিং করে বাঁধ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ফলে একদিকে যমুনা নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি পাবে অপর দিকে প্রকল্প এলাকায় বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করার মাধ্যমে বন্যায় ঝুঁকি সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব হবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং নিষ্কাশন অবকাঠামো নির্মাণের ফলে প্রকল্প এলাকায় জমি এক ফসলি থেকে তিন ফসলিতে উন্নীত হবে এবং অধিক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে।’

তিনি জানান, এই প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে অন্য প্রকল্পেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।



রাইজিংবিডি/সিরাজগঞ্জ/১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/অদিত্য রাসেল/টিপু/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়