ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘মাদক কারবারি যত শক্তিশালী হোক, ছাড় নয়’

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘মাদক কারবারি যত শক্তিশালী হোক, ছাড় নয়’

কক্সবাজার প্রতিনিধি : মাদক কারবারিরা যতই শক্তিশালী হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

শনিবার দুপুরে কক্সবাজারের টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা পুলিশের উদ্যোগে আয়োজিত ‘চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত’ মাদক কারবারিদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বাংলাদেশ এখন মাদক কারবারিদের জন্য নিষিদ্ধ এলাকা। মাদক নির্মূলে সরকার কঠোরতা অবলম্বন করবে। এতে কেউ ছাড় পাবে না।

তিনি বলেন, প্রবেশদ্বার খ্যাত টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে পাচার হয়ে আসা ইয়াবা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের এমন কোনো অঞ্চল বা এলাকা নেই,  ইয়াবার করাল থাবা পড়েনি। আজকে স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও জড়িয়ে পড়ছে জীবনঘাতী ইয়াবা সেবনে। এতে নতুন প্রজন্মের মেধা ও মনন প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে।

তিনি বলেন, মাদক কারবারিরা সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রু। এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে মাদক নির্মূলে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশের উদ্যোগে আয়োজিত আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যেসব মাদক কারবারি আসেনি, তাদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আসাদুজ্জামান বলেন, এখনো সময় আছে, অপরাধ স্বীকার করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার। এরপরও যারা ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকবে, তাদের ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।

‘‘যেসব ইয়াবা কারবারি সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে, তাদের ব্যাপারে নমনীয়তা দেখানো হবে। তবে আত্মসমর্পণের পরও যদি কেউ আবার মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে, তার প্রতি দ্বিগুণ ভয়াবহ আচরণ করা হবে।’’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আত্মসমর্পণকারী মাদক কারবারিদের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ সবের আওতায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘‘এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে, আত্মসমর্পণকারী কোনো ব্যক্তি ভবিষ্যতে পুনরায় মাদক কারবারে জড়াবে না। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গিয়ে স্ব স্ব এলাকা মাদকমুক্ত রাখতে ভূমিকা পালন করবে। যারা এখনো মাদকপাচারে জড়িত রয়েছে, তাদের ব্যাপারে পুলিশের কাছে তথ্যদানে সহায়তা করবে। আত্মসমর্পণের পূর্বে তাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে, সেগুলো তারা নিজেরাই আইনগতভাবে মোকাবেলা করবে। এ ছাড়া আত্মসমর্পণকারী মাদক কারবারিদের হেফাজতে যে সকল মাদকদ্রব্য ও অবৈধ অস্ত্র রয়েছে, তা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘পাশাপাশি আত্মসমর্পণের আওতায় মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের হবে, তাতে সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে তাদের আইনগত সুবিধা প্রদান করবে। এ ছাড়া স্বজনরাসহ নিজেদের নামে-বেনামে অর্জিত স্থাবর, অস্থাবর সকল সম্পত্তি দুদক, সিআইডি (মানি লন্ডারিং শাখা) ও এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার মাধ্যমে যাচাই সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার শর্তে এ সব মাদক কারবারিরা আত্মসমর্পণ করেছেন।’’

গত এক মাস ধরে নিজেদের উদ্যোগে নিরাপদ হেফাজতে আসা ১০২ জন তালিকাভুক্ত ও চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। এ সময় তাদের কাছে থাকা সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবা, ৩০টি দেশীয় তৈরি বন্দুক এবং ৭০টি কাতুর্জ জমা দিয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, মাদক কারবারিরা যেই হোক, তার সঙ্গে কঠোর আচরণ করা হবে। মাদক নির্মূলে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়ে পুলিশসহ আইনশৃংখলা বাহিনী মাঠে রয়েছে।

সীমান্ত দিয়ে ইয়াবাপাচার রোধে বিজিবিকে আরো বেশি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা উচিত মন্তব্য করে আইজিপি বলেন, ‘‘মাদক ব্যবসার সঙ্গে যদি পুলিশ বা আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য জড়িত থাকে, তার সঙ্গে মাদক কারবারির মতো আচরণ করা হবে।’’

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেনের সভাপতিত্বে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের স্থানীয় চার সংসদ সদস্য জাফর আলম, আশেক উল্লাহ রফিক, সাইমুম সরওয়ার কমল, শাহীন আক্তার চৌধুরী, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠান শেষে আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা কারবারিদের কক্সবাজার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।



রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/রুবেল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়