খুলনায় ৫০ বছর পর শহীদ হাদিসুরকে স্মরণ
মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম
মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা : খুলনার ঐতিহ্যবাহী শহীদ হাদিস পার্কটি যে ব্যক্তির নামকরণে করা হয়েছে তিনি হলেন ‘হাদিসুর রহমান’।
হাদিস পার্কটি সবার কাছে এক নামে পরিচিতি পেলেও ‘হাদিসুর রহমান’ সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম একেবারেই রয়েছে অন্ধকারে। তার সম্পর্কে জানানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়নি কখনো। তাই একেবারেই নিরবে-নিভৃতে কেটে গেছে প্রায় অর্ধশত বছর।
তবে, এবার কেসিসি মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলরের উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ হাদিসুর রহমানের কবর জিয়ারত করা হলো। বৃহস্পতিবার মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে স্মরণ করা হলো ভাষা আন্দোলনের এই অগ্রসেনানীকে।
কেসিসি পরিচালিত নগরীর খালিশপুরস্থ গোয়ালখালী কবরখানায় সকাল সাড়ে ১০টায় খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে শহীদের কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ ও তার রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মোনাজাত করা হয়।
‘হাদিসুর রহমান’ ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আইযুব খান বিরোধী গণ-আন্দোলনে শহীদ হন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন শহীদ হাদিসুর রহমানের চাচাতো ভাই, খুলনা আঞ্চলিক সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি, দৈনিক প্রবাহ সম্পাদক আশরাফ-উল-হক, কেসিসির ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ আব্দুর রাজ্জাক, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স, ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী তালাত হোসেন কাউট, ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনি ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর খুরশিদ আহমেদ টোনা, সাংবাদিক নেতা মোজাম্মেল হক হাওলাদার, নূর গণি বাবলু রেজা, ওয়াহেদ-উজ-জামান বুলু, খলিলুর রহমান সুমন, মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, মেহেদী মাসুদ খান, শরিফুল ইসলাম বনি, খালিশপুর আওয়ামী লীগ সভাপতি সানাউল্লাহ নানু, সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বাসার প্রমুখ।
শহীদ হাদিসুর রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণের বিষয়ে অন্যতম উদ্যোক্তা কেসিসির ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনি জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি এককভাবে পালন করতেন। কিন্তু একজন শহীদের কবর সংরক্ষণ এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পালনের গুরুত্ব অনুধাবন করেন। সে মোতাবেক তিনি সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের মাধ্যমে শহীদ হাদিসুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন শুরু করেছেন।
ঐতিহাসিক সূত্রে জানা গেছে, হাদিসুর রহমান ১৯৪৪ সালের ২১ এপ্রিল বাগেরহাট জেলা সদরের রণবিজয়পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম ডা. হাবিবুর রহমান। তিনি ১৯৬৯ সালে এসএসসি পাশ করার পর আযম খান কমার্স কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য খুলনায় এসেছিলেন। তৎকালীন সময় এ দেশের ছাত্র সমাজ ও সচেতন মানুষ আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে জেগে ওঠে। খুলনা ছাত্র-জনতাও আইয়ুব বিরোধী গণ-আন্দোলন শুরু করে। এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মিছিল নিয়ে তৎকালীন মিউনিসিপ্যাল পার্কে (বর্তমান শহীদ হাসিদ পার্ক) ছাত্র-জনতার সমবেত হওয়ার পরিকল্পনা ছিল। সে মোতাবেক ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় মিছিল বের হলে পুলিশ মিছিলে হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষে হাদিসুর রহমান শহীদ হন।
ওই ঘটনার পর শহরে কারফিউ জারি করা হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে কিছু সময়ের জন্য কারফিউ শিথিল করা হলে ছাত্র-জনতা মিউনিসিপ্যাল পার্কে সমবেত হন। ওই সময়ই তারা এ পার্কটিকে ‘শহীদ হাদিস পার্ক’ নামকরণের সিদ্ধান্ত নেন। তারপর থেকেই মিউনিসিপ্যাল পার্কটি ‘শহীদ হাদিস পার্ক’ নামেই পরিচিতি পেতে থাকে।
রাইজিংবিডি/খুলনা/২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/সাইফুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন