ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এ যেন টবে স্বপ্নের বুনন

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৮ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এ যেন টবে স্বপ্নের বুনন

পাবনা প্রতিনিধি: পাবনায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মধ্যে টব ও ফুলের বীজ বিতরণের ব্যতিক্রম কর্মসূচী গ্রহণ করেছে পাবনা সদর উপজেলা পরিষদ।

কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সদর উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি স্কুলের দশ হাজার শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে একটি করে টব ও ফুল গাছের বীজ দেওয়া হচ্ছে।

গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে চলছে এ কার্যক্রম।

আয়োজকরা জানান, প্রতিটি স্কুলের নির্দিষ্ট স্থানে টব রেখে তাতে ওই শিক্ষার্থীই বীজ রোপণ করছে। বীজ থেকে চারা উৎপাদন, যত্নআত্তি, ফুল ফোটানো সবই করতে হবে এই শিশুদের। বিষয়টি অনেকটা টবে স্বপ্ন বুনন। আয়োজকদের ধারণা, এতে করে শিশুদের মধ্যে প্রকৃতি ও গাছের প্রতি মমত্ববোধ, নিজের কাজ নিজে করার অভ্যাস এবং স্কুলে আসার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।



পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে শিশুরা প্রকৃতি থেকে ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছে। শৈশব থেকেই আমরা শিশুদের উপর পড়ার চাপ আর নির্দিষ্ট রুটিনের একঘেঁয়ে জীবনে আটকে ফেলছি। এ কারণেই শিশুদের সঠিক মানসিক বিকাশ ঘটছে না। এ থেকে মুক্তি দিতেই আমাদের এ উদ্যোগ।’

জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘কেবল দু’একটি স্কুলে শিশুদের মাঝে আমরা টব ও ফুলের বীজ বিতরণ করেছি। এতেই শিশুদের মধ্যে দারুণ সাড়া পড়েছে। এমন অনেক শিশুকে আমরা পেয়েছি যারা কোনদিন গাছ তো দূরের কথা, মাটিও ছুঁয়ে দেখেনি। তাদের প্রকৃতির সাথে পরিচিত করতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’

পাবনা সদর উপজেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আসলাম হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে আনন্দময় করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তবে, উপজেলা প্রশাসনের টব ও ফুলের বীজ বিতরণের এ কর্মসূচী শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুবই সাড়া জাগিয়েছে। যেসব স্কুলে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে, সেখানে রাতারাতি শিক্ষার্থী উপস্থিতি প্রায় শতভাগে উন্নীত হয়েছে। বাচ্চারা প্রতিদিন সকালে এসেই আগে নিজের টবের কাছে ছুটে যাচ্ছে। পানি দেয়া, যত্নআত্তিতে কার গাছটিতে আগে ফুল ফুটবে তাই নিয়ে চলছে প্রতিযোগীতা।’

সরেজমিনে পাবনার ইছামতী সরকারিপ্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এর বাস্তব প্রমাণও মেলে। স্কুলের বারান্দায় সারি সারি রাখা হয়েছে টব, তাতে বীজ বুনেছে শিশুরা। প্রতিটি টবে মালিকের নাম লেখা। ফুলের চারা নিয়ে শিশুদের মাতামাতি দেখে মনে হল, ফুল নয় তারা যেন বুনেছে স্বপ্নের বীজ।



এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ জানায়, আগে সকালে উঠে স্কুলে আসতে ইচ্ছা করত না তার। এখন গাছের টানেই রোজ স্কুলে আসতে হয়। স্কুলে না এলে তার গাছ যে পানির অভাবে মারা যাবে!

এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন অনেকেই। পাবনার অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. তাহসিন আজীজ বলেন, ‘বাচ্চাদের প্রকৃতির সান্নিধ্যে, মাটির কাছাকাছি না আনলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিকমত কাজ করে না। অল্পতেই তারা সর্দি, কাশি এবং এলার্জিজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়। মাটি ও চারাগাছ নিয়ে খেলাধুলায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে পাশাপাশি প্রকৃতির সংস্পর্শে সঠিকভাবে মানসিক বিকাশ ঘটবে।’

পাবনা জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রযুক্তি নির্ভর যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে শিশুদের প্রকৃতির সাথে সম্পৃক্ত করার এ উদ্যোগ কৃষিকাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি করবে। শিশুদের মধ্যে সবুজায়নের আগ্রহ সৃষ্টি হলে, তারা বাড়িতেও বাগান তৈরিতে উৎসাহিত হবে, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় উদ্যোগী হবে।’



রাইজিংবিডি/ পাবনা/১৮ মার্চ ২০১৯/শাহীন রহমান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়