ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চলনবিলের বুক চিড়ে স্বপ্নের সড়ক

অদিত্য রাসেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১০ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চলনবিলের বুক চিড়ে স্বপ্নের সড়ক

সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা : বাংলাদেশের বৃহত্তম বিল চলনবিল। এখানের বাসিন্দাদের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ পোহাতে হয় যোগাযোগে। শেষ হতে যাচ্ছে চলনবিলের মানুষের সেই দুর্ভোগের দিন।

শিগগিরই চলনবিলের বুক চিড়ে চলে যাওয়া স্বপ্নের সড়কটি এই অঞ্চলের মানুষের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে।

বিশাল বিল চলনবিলের মধ্যস্থলে অবস্থিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, পাবনার চাটমোহর ও নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা। এ সব উপজেলার একটি অংশের প্রায় ৩৫-৪০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের আন্তঃযোগাযোগের ক্ষেত্রে গভীর চলনবিলের মাঝে সড়ক না থাকায় চরম দুর্ভোগ যেন বছরের পর বছর ধরে নিয়মে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু আর মাসখানেক পরেই তাড়াশ ওয়াপদা বাঁধ থেকে নাদৌ সৈয়দপুর বাজার ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৮.৫৩৬ কিলোমিটার ডুবন্ত সড়কটিতে (সাবমারসিবল) চলতে পারবে চলনবিলের মানুষ।

চলনবিল এলাকার নাদৌসৈয়দপুর গ্রামের কৃষক সোনাউল্লাহ মন্ডল (৫৫) জানান, যুগ যুগ ধরে তাড়াশের মাগুড়াবিনোদ, সগুনা, গুরুদাসপুরের মর্শিন্দা পাবনার চাটমোহরের ছাইকোলা ইউনিয়নের ৩৫-৪০টি গ্রামের মানুষের সহজ ও দ্রততম সময়ে যোগাযোগের এ সড়কটি নির্মিত না হওয়ায় এখানকার উৎপাদিত শস্য ধান, পাট, সরিষা পরিবহণের অসুবিধার কারণে সিংহভাগ ফসল জমিতেই নষ্ট হতো। এমন কি সবজি ফলমূলসহ এ সকল ফসল দুর্গম জনপদ হওয়ায় পানির দরে বিক্রি করতে হতো। ৪টি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের তাড়াশ, চাটমোহর, ছাইকোলা, গুরুদাসপুরে  চলাচল করতে ২০-২২ কিলোমিটার পথ ঘুরে তবেই যেতে হতো।

মাগুড়া গ্রামের কৃষক সুফিয়ান (৪৫) জানান, তাড়াশ, চাটমোহর, গুরুদাসপুর উপজেলার  কয়েকটি প্রসিদ্ধ হাট-বাজারে এ অঞ্চলের উৎপাদিত সবজি, মাছসহ নানা ফসল চাহিদা মিটিয়ে থাকে। যার মুল্য  কয়েক কোটি টাকা। অথচ এখানে সড়ক না থাকায় বছরের পর বছর মানুষকে বর্ষা মৌসুমে নৌকায় আর গ্রীষ্ম মৌসুমে পায়ে হেঁটে মাথায় বোঝা নিয়ে এ সকল হাট-বাজারে আসতে হচ্ছে।

মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই এলাকাটিতে এতদিন সড়ক না থাকায় হাজার হাজার একর জমির কোটি কোটি টাকার ফসল ঠিকমত পরিবহন করতে না পেরে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। এ সড়কটি চালু হলে এসব কৃষকরা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন।’

তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর এত অসুবিধার মধ্যেও এ অঞ্চলের মানুষের দাবী ছিল চলনবিলের বুক চিড়ে তাড়াশের ওয়াপদা বাঁধ থেকে নাদৌ সৈয়দপুর বাজার ঘাট পর্যন্ত সড়কটি নির্মাণের।  তাদের এই দাবীর  প্রেক্ষিতে সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের প্রাক্তন সংসদ সদস্য গাজী ম,ম আমজাদ হোসেন মিলনের ঐকান্তিক চেষ্টায় সরকার ২০১৬ সালে ১০ কোটি ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৪৯০ টাকা ব্যয়ে প্রায় ৮.৫৩৬ কিলোমিটার ডুবন্ত সড়কটি (সাবমারসিবল) নির্মাণের কাজ হাতে নেন। আর দুর্গম এলাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স চৌধুরী এ্যান্ড কোং কে  সড়কটি নির্মাণে প্রায় আড়াই বছর সময় লেগে যায়।’

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সড়কটির প্রায় ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ ।

এলাকার কৃষক কেরামত উল্লাহ চলনবিলের বুক চিড়ে ডুবন্ত সড়কটি নির্মিত হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, ‘ফসলের মৌসুমে বিশেষ করে বছরের আট মাস এলাকার হাজার হাজার লোক এতে উপকৃত হবে। তারা সরকারের এ উন্নয়নকাজে খুব খুশি।’

তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান জানান, ইতিমধ্যেই সড়কটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে না দিলেও এলাকার মানুষ চলনবিলের গভীরে দর্শণীয় এই সড়কটি দিয়ে চলাচল শুরু করেছেন। আশা করা যাচ্ছে, আগামী মার্চ মাসের শেষ নাগাদ সড়কটির কাজ সম্পন্ন হবে এবং তা মানুষের চলাচল ও পণ্য পরিবহণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ‘চলনবিল একটি শস্যভান্ডার খ্যাত এলাকা। এ এলাকার হাজার হাজার কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পেতে সড়কটি অনন্য ভূমিকা রাখবে।’



রাইজিংবিডি/ সিরাজগঞ্জ/১০ এপ্রিল ২০১৯/অদিত্য রাসেল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়