ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

বিদেশের মাটিতে সেরা সাফল্য

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৪, ৭ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিদেশের মাটিতে সেরা সাফল্য

ইয়াসিন হাসান : সিরিজ জেতা হয়নি। কোনা মাইলফলক ছোঁয়াও হয়নি। টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ট্রফিতে ভাগ বসিয়েছে শ্রীলঙ্কা। তবুও শ্রীলঙ্কা সফর বাংলাদেশের কাছে বিশেষ কিছু।

বিদেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কা সফরই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য। ব্যক্তিগত সাফল্য ছাপিয়ে দলগত সাফল্য বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। ছোটোখাটো ভুলগুলো না হলে রংধনুর সাত রঙের মত এবারের শ্রীলঙ্কা সফর রাঙিয়ে থাকত ক্যালেন্ডারের পাতায়। তবুও যে সাফল্য ক্রিকেটাররা নিয়ে এসেছেন তা নিশ্চিতভাবে প্রশংসার দাবীদার।



বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান নিজেদের প্রশংসা করতে ভুল করলেন না, ‘শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে সাফল্য আমরা এবার পেয়েছি তা সত্যিই মনে থাকবে দীর্ঘদিন। শ্রীলঙ্কার এ দলটির বিপক্ষে সেরা খেলাটা আমরা খেলেছি। সামান্য ভুলত্রুটি হয়েছে, সেগুলো বাদ দিলে বাংলাদেশ দারুণ খেলেছে।’

অথচ সফরের শুরুতে বাংলাদেশ ছিল না ছন্দে। গল টেস্টেই এলোমেলো বাংলাদেশ। ম্যাচের আগে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে সরিয়ে দেওয়া হয় উইকেট কিপিং থেকে। তার পরিবর্তে উইকেটের পিছনে লিটন কুমার দাস। একাদশে ফিরে আসেন মুস্তাফিজুর রহমান। ম্যাচে শুভাশিষের ‘অভিশপ্ত’ নো বলের সুযোগ শ্রীলঙ্কা রানের পাহাড় গড়ে। রানের পাহাড়ের চাপে আটকে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। ব্যবধান ২৫৯ রান। সিরিজ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে সফর শুরু করা বাংলাদেশকে শুরুতেই বড় ধাক্কা হজম করতে হয়। পিছিয়ে যায় ১-০ ব্যবধানে।



গল টেস্টে এলোমেলো বাংলাদেশ স্বরূপে ফিরে শততম টেস্টে। কিন্তু মাঠে নামার আগেই ছন্নছড়া বাংলাদেশ! পারফরম্যান্সের কারণে জায়গা হারান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুমিনুল হক। টিম ম্যানেজম্যান্ট থেকে বলা হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দেশে ফিরতে! কিন্তু বিসিবি সভাপতির হস্তক্ষেপে শ্রীলঙ্কায় থেকে যান মাহমুদউল্লাহ। শততম টেস্টের আগে পুরো দল বিস্মিত, হতভম্ব।

দলকে চাঙা করতে এগিয়ে আসেন সিনিয়ার ক্রিকেটাররা। টিম ম্যানেজম্যান্ট ও কোচিং স্টাফদের ছাড়া নিজেরা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন। ‘ক্লোজ-ডোর’ বৈঠকে নিজেদের সমস্যা এবং শততম টেস্টে জয়ের পরিকল্পনা জানতে চান সিনিয়ররা। তাজ সামুদ্রার ওই বৈঠকে পাল্টে যায় টিম বাংলাদেশ। শততম টেস্টে লিটনের পরিবর্তে আবারও কিপিংয়ে মুশফিক। একাদশে মোসাদ্দেক ও সাব্বির রহমান। পরের গল্পটা তো সবারই জানা। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর চতুর্থ দল হিসেবে শততম টেস্টে জয় তুলে নেওয়ার অনন্য কীর্তি গড়ে বাংলাদেশ।



মিরাজের ব্যাট ছুঁয়ে আসা উইনিং শটে উৎসব শুরু হয় পুরো বাংলাদেশে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কাকে টেস্টে হারানোর আনন্দ ছড়িয়ে যায় পুরো দেশে। সাফল্যের রূপকার পুরো দল হলেও মুশফিক, সাকিব, তামিমের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মত। তরুণ মোসাদ্দেক ও মিরাজও পিছিয়ে ছিলেন না। সাব্বির রহমানের ব্যাট থেকেও আসে রান। দ্বিতীয় দিন শেষে ব্যাটিংয়ে তিন তিনবার জীবন পাওয়া সাকিব তৃতীয় দিন তুলে নেন সেঞ্চুরি। তরুণ মোসাদ্দেক প্রথম ইনিংসে করেন ৭৫ রান। মিরাজ দুই ইনিংসে নেন ৪ উইকেট। সব মিলিয়ে দলগত পারফরম্যান্সে পিছিয়ে পড়েও সিরিজে সমতা আনে বাংলাদেশ। ফলাফল ১-১ এ দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ড্র। শেষ হাসিটা মুশফিক হাসায় ট্রফিটাও আসে বাংলাদেশের ঘরে। জয় বাংলা কাপে জয় বাংলাদেশের।

টেস্ট জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে পোশাক পাল্টে ওয়ানডেতে মাঠে নামে বাংলাদেশ। মাশরাফির নেতৃত্বে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ আরও আক্রমণাত্মক। তামিমের ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ পায় জয়ের ভিত। পাশাপাশি তামিম-সাকিবের প্রথমবারের মত শতরানের জুটিতে বাংলাদেশ রানের পাহাড় গড়ে। সেই পাহাড়ের চাপে শ্রীলঙ্কা কোমড় সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। বাংলাদেশ জিতে যায় ৯০ রানে।



দ্বিতীয় ম্যাচে বেরসিক বৃষ্টিতে ভেস্তে যায় বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের স্বপ্ন! শ্রীলঙ্কা আগে ব্যাটিং করে বাংলাদেশকে ৩১১ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয়। টিম বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসী ছিল জয় তুলে নিতে। কিন্তু বৃষ্টিতে দ্বিতীয় ইনিংসের খেলা পণ্ড হয়। ম্যাচে তাসকিন আহমেদের হ্যাটট্রিক ছিল মনে রাখার মত। ইনিংসের শেষ ওভারে তাসকিন আউট করেন আশলে গুনারত্নে, সুরাঙ্গা লাকমাল ও নুয়ান প্রদ্বীপকে।

তৃতীয় ম্যাচ দু্ই দলের জন্য অঘোষিত ফাইনাল। জিতলে বাংলাদেশের সিরিজ জয়, হারলে সিরিজ জয়ের সূবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া। ভাগ্যদেবী সেদিন বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন না। লঙ্কার মাটিতে লঙ্কা জয় সম্ভব হয়নি শ্রীলঙ্কার দারুণ পারফরম্যান্সে। বিবর্ণ বাংলাদেশের আরেকটি আক্ষেপের ম্যাচ!



টেস্ট ও ওয়ানডে ড্র হওয়ার পর বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিবে সেটা দেখার অপেক্ষায় ছিল ক্রিকেটপ্রেমিরা। কিন্তু মাঠের লড়াই দেখার আগে বড় দুঃসংবাদ হজম করতে হয়েছে তাদের। প্রথম টি-টোয়েন্টির টসের সময় মাশরাফি ঘোষণা দেন, এটাই তার শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি সিরিজ। পুরো বাংলাদেশ হতভম্ব। দেশ ছাড়ার আগে যে অধিনায়ক টি-টোয়েন্টি দলকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করানোর স্বপ্ন দেখছিলেন সেই অধিনায়ক বিদেশের মাটিতে গিয়ে দিলেন অবসরের ঘোষণা! মাশরাফির শেষের শুরুতে জ্বলে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে বিদায়ী ম্যাচে পুরো বাংলাদেশ এক বিন্দুতে এসে লড়াই করে। শ্রীলঙ্কাক ৪৫ রানে হারিয়ে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি সিরিজ ১-১ এ ড্র করে। ম্যাচে দলকে শেষবারের মতো সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন মাশরাফি। তবে সাকিব ছিলেন নায়ক। ব্যাট হাতে ৩৮ ও বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে সাকিব একাই হারিয়েছেন উপুল থারাঙ্গার শ্রীলঙ্কাকে। স্বরূপে ফিরে আসেন মুস্তাফিজুর রহমান। ৪ উইকেট নিয়ে দলের জয়ের অন্যতম বড় অবদান কাটার মাস্টারের। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই পারফরম্যান্স ছিল চোখ ধাঁধানো।



বিদায়ী ম্যাচে মাশরাফিকে জয় উপহার দেন সতীর্থরা। চোখে-মুখে বিষন্নতার ছাপ থাকলেও গর্বে কলার উঁচিয়ে মাঠ ছাড়েন মাশরাফি। টি-টোয়েন্টি জার্সি খুলে রাখলেও ওয়ানডেতে মাশরাফি থাকবেন মধ্যমণি হয়ে। শেষ ভালো যার সব ভালো তার- এ প্রবাদে বিশ্বাস করে মাশরাফিও যাবার বেলায় বললেন, ‘আমরা সবাই দেশের ক্রিকেটের ভালো চাই।চাই বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়ে যাক। জয় দিয়ে শেষ করতে পেরেছি এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার।এটা ধরে রেখে আমরা সামনের দিকে এগোতে চাই।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ এপ্রিল ২০১৭/ইয়াসিন/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়