ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বিপাকে কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার বোরো কৃষক

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ৫ মে ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিপাকে কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার বোরো কৃষক

হাওর এলাকার বোরো ধান বেচা-কেনার অন্যতম প্রধান হাট চামটা বন্দর

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আধা-পাকা ফসল তলিয়ে যাওয়ায় একদফা ক্ষতির পর এবার ধানের নিম্ন মূল্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কিশোরগঞ্জের বোরো আবাদকারীরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ধানের মূল্য অনেক কম হওয়ায় লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচই উঠে আসছে না। এর ফলে বছরে একটি মাত্র ফসলের আবাদকারী হাওর এলাকার কৃষকদের দিন কাটছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া হিসাব মতে, চলতি বছরের মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ইতিমধ্যে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ১২ হাজার একর জমির আধা-পাকা বোরো ধান। যদিও চাষিদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই পরিমাণ আরো কয়েক গুণ বেশি।

 

প্রধান তিনটি হাওর উপজেলা ইটনা, মিটামইন ও অষ্টগ্রামেই ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।

 

এই ক্ষয়-ক্ষতি থেকে বেঁচে যাওয়া পাকা ধান কাটার কাজে এখন চরম ব্যস্ত সময় পার করছেন হাওর এলাকার কৃষকরা। কিন্তু সেই ধান বিক্রির জন্য কৃষক যখন বাজারে নিয়ে আসছেন, হতাশ হয়ে পড়ছেন ধানের দাম শুনে। কারণ, ছয় মাস পানির নীচে থাকা হাওর এলাকায় বছরের একমাত্র ফসল এই বোরো ধান প্রাপ্ত অর্থই বেশিরভাগ কৃষকের সারা বছরের জীবিকার একমাত্র উৎস।

 

ইটনা উপজেলার শিমুলবাক গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান বলেন, সার, বীজ, সেচ, শ্রমিকের মজুরি সব মিলিয়ে বোরো চাষে আমাদের যে খরচ হয়েছে আর বাজারে ধানের যে দাম- এতে করে আমাদের আর ভবিষ্যতে ধান চাষের উপায় নাই। ধান চাষ করে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।’

 

কৃষক কেনু মিয়া বলেন, ‘বর্তমান বাজার দরে আমাদের লাভ কিছুই হবে না, পুরোটাই ক্ষতি।’ 

 

কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার বোরো ধান বেচা-কেনার অন্যতম প্রধান হাট হচ্ছে করিমগঞ্জ উপজেলার চামটা বন্দর। দূর-দূরান্ত থেকে কৃষকরা নৌকা বোঝাই করে ধান নিয়ে আসছেন এখানকার মোকামে । আর এখান থেকে পাইকারী ধান কিনে মহাজনরা তা ট্রাকে করে তা নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন জেলার ধানের চাতালে।

 

চামটা বন্দরের মোকাম মালিকদের বক্তব্য অনুযায়ী তারা প্রতিমন ধান কিনছেন ৫০০ থেকে ৫৩০ টাকা দরে। বর্তমান বাজার দরে এক একর জমিতে ৬০ মন ধান উৎপাদন হিসেবে ধরলে, তা বিক্রি করে কৃষক পাচ্ছেন ৩০হাজার টাকার কিছু বেশি। এ ক্ষেত্রে মোকাম মালিকদের বক্তব্য হচ্ছে, চাতাল মালিকরা বেশি দামে না কিনলে তাদের পক্ষেও কৃষকদের কাছ থেকে বেশি দামে ধান কেনা সম্ভব না।

 

চামটা বন্দরের একজন মোকাম মালিক আব্দুল হক জানান, বিভিন্ন জেলার চাতাল মালিকরা এর চেয়ে বেশি দামে ধান না কেনায় তারা কৃষকদের ক্ষতি হলেও বেশি দামে ধান কিনতে পারছেন না।

 

ধান কেনা ও বেচা নিয়ে এখন চামটা বন্দর সরগরম থাকলেও কৃষকদের মুখে রাজ্যের আঁধার।

 

 

রাইজিংবিডি/ কিশোরগঞ্জ/৫ মে ২০১৬/রুমন চক্রবর্তী/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়