ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিপন্ন পাকড়া ধনেশ

সেন্ট্রাল ডেস্ক: || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৮ ডিসেম্বর ২০১২   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিপন্ন পাকড়া ধনেশ

রাইজিংবিডি২৪.কম:

গত মার্চে বুনো হাতির সন্ধানে দুর্গম কাপ্তাইমুখ রিজার্ভ ফরেস্টে গিয়ে তার ডাক শুনেছিলাম। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পরও দেখা পাইনি। ২১ সেপ্টেম্বর সে আশা পূর্ণ হলো। মৌলভীবাজারের বন্য প্রাণী ও পাখিবিশেষজ্ঞ মুনির ও তানিয়া খানের আমন্ত্রণে গিয়েছিলাম কমলগঞ্জের আদমপুর বিটে।

বনের মেঠোপথ ছেড়ে চলেছি নালার মতো সর্পিল ছড়া ধরে। কোথাও পায়ের পাতা, কোথাও গিরা, কোথাও বা হাঁটুপানি। বেশ লাগছে। ঘণ্টা খানেক হেঁটেও দু-একটির বেশি পাখি দেখলাম না। আসলে এটা বার্ডিংয়ের জন্য অফ সিজন। পাখির অভাবে বুনো ফুল-ফল, গিলালতা, ব্যাঙ, সরীসৃপ, প্রজাপতি, কীটপতঙ্গ ও কাঠবিড়ালির ছবি তুলছিলাম। আরও খানিকটা পথ পেরিয়ে একটি ঘন জঙ্গলে চলে এলাম।

এ সময় হঠাৎ ডানা ঝাপটানির শব্দে এদিক-সেদিক তাকালাম। কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না। অতি সন্তর্পণে খানিকটা এগিয়ে গেলাম। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। আবারও ডানা ঝাপটানি। সামনের বড় গাছটির ডালে পাখিটিকে বসতে দেখলাম। খুশিতে মন নেচে উঠল। দুর্লভ ওই পাখিটির সঙ্গে ছিল পুরো পরিবারের চার সদস্য। একসঙ্গে চারটির দেখা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

এতক্ষণ যার কথা বললাম, সে আমাদের বনের গৌরব পাকড়া ধনেশ। অনেকে ‘বাগমা’ বা ‘কাউ ধনেশ’ বলেও ডাকে। এ দেশের দুর্লভ ও বিপন্ন আবাসিক পাখি এরা।

এরা বড় আকারের পাখি। লম্বায় প্রায় ৯০ সেমি। সাদা-কালো পাকড়া ধনেশের হলদে লম্বা ঠোঁটজোড়া নিচের দিকে বাঁকানো। ওপরের ঠোঁটের বর্ধিত অংশকে Casque বা বর্ম বলে। আকার ও রঙে স্ত্রী-পুরুষে কিছুটা পার্থক্য থাকে। পুরুষের দেহের ওপরের অংশ চকচকে কালো। বর্মের সামনের অংশে খানিকটা কালোর ছোঁয়া। গলার পালকবিহীন অংশে নীলাভ চামড়ার পট্টি। চোখের পেছনের চামড়া নীলচে সাদা। বুক, পেট ও ডানার কিনারা সাদা। লেজ লম্বা ও কালো; আগা সাদা। চোখ লালচে। পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ ধূসর। স্ত্রী আকারে ছোট। চোখ বাদামি। ঠোঁট ও বর্মে কালোর প্রাধান্য; বর্ম ছোট।


পাকড়া ধনেশ বড় পাতাওয়ালা চিরসবুজ ও পাতাঝরা বনের পাখি। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের বনাঞ্চলে দেখা যায়। ছোট দলে বাস করে। প্রধানত ফলখেকো হলেও পাখির ডিম-বাচ্চা, টিকটিকি, সাপ, ব্যাঙ, ইঁদুর বা উইপোকাতেও অরুচি নেই। গলার স্বর কর্কশ।


মার্চ-জুন প্রজননকাল। মাটি থেকে বেশ উঁচুতে পুরোনো গাছের কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ার আগেই স্ত্রী নিজের মল ও পুরুষের আনা ভেজা মাটি দিয়ে নিজেকে বাসায় বন্দী করে ফেলে। শুধু একটি ছোট ফুটো রাখে পুরুষ থেকে খাবার গ্রহণের জন্য। এরপর সে দু-তিনটি সাদা ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে প্রায় ৩০ দিনে। বাচ্চারা বড় না হওয়া পর্যন্ত মা বাসায় বন্দী থাকে। এ সময় পুরুষ ধনেশ বউ-বাচ্চাকে খাওয়ায়।


বন ধ্বংস, চোরা শিকারি, তথাকথিত কবিরাজদের দৌরাত্ম্য, বাসা বানানোর পুরোনো ও বড় গাছের অভাব এদের বর্তমানে এ দেশের বিপন্ন পাখির তালিকায় স্থান করে দিয়েছে। কাজেই, দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে একদিন হয়তো বইয়ের পাতা ছাড়া আর কোথাও এদের দেখা মিলবে না। 

স্টোরিটি প্রথম আলো থেকে সংগ্রহ করা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়