ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আবার নিজেদের প্রমাণের চ্যালেঞ্জ কিউইদের সামনে

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫৪, ২০ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আবার নিজেদের প্রমাণের চ্যালেঞ্জ কিউইদের সামনে

সাইফ মুহাম্মাদ : ছয় ছয়বার সেমিফাইনালে উঠেও বিশ্বকাপ ফাইনালের দেখা না পাওয়ার দুঃখটা গত আসরে মুছে দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। হাতছানি ছিলো প্রথম শিরোপারও। কিন্তু প্রতিবেশি ও যৌথ আয়োজক অস্ট্রেলিয়ার সামনে গত বিশ্বকাপের ফাইনালে দাঁড়াতেই পারেনি তারা। সেই স্মৃতি নিয়ে ইতোমধ্যেই আসন্ন ক্রিকেট বিশ্বকাপের ভেন্যু ইংল্যান্ডে পা রেখেছে নিউজিল্যান্ড। কিউইদের বিশ্বকাপ শুরু হবে পহেলা জুন। প্রথম ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। তার আগে দুটি আনুষ্ঠানিক ওয়ার্ম আপে তারা মুখোমুখি হবে ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপটি কিউদের জন্য গত আসরের মতো নিজেদের আরো একবার প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ।

আইসিসির সর্বশেষ প্রকাশিত ওয়ানডে দলের র‍্যাঙ্কিংয়ে নিউজিল্যান্ড আছে চার নম্বরে। তাদের আগের তিন দল হলো ইংল্যান্ড, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। আসন্ন বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও ভারতকে নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে যে প্রত্যাশা আছে, ততোটা নেই নিউজিল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে। সে হিসেবে কিছুটা নির্ভার হয়েই মাঠে নামতে পারবেন কেন উইলিয়ামসন ও তার সতীর্থরা।

বিশ্বকাপের দুই মাসেরও বেশি সময় আগেই নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড তাদের দল ঘোষণা করে দিয়েছে। ঘোষিত দলে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত ক্রিকেটারদের। একমাত্র নতুন মুখ হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান টম ব্লান্ডেল। কিউইদের হয়ে দুটি টেস্ট এবং তিনটি টি-টোয়েন্টি খেললেও এখনো ওয়ানডে অভিষেক হয়নি তার।

ব্লান্ডেল বাদে কিউই দলের প্রায় প্রত্যেক সদস্যের দারুণ কিছু করার ক্ষমতা আছে। বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়ার যোগ্য, এ রকম কোনো খেলোয়াড়কে বাদ দেয়নি নিউজিল্যান্ড। সব মিলিয়ে কেন উইলিয়ামসনের দলটি বিশ্বকাপে চমকে দিতে পারে। শুধু মাত্র র‍্যাঙ্কিংয়ের অবস্থানের কারণে নয়, বরং দলীয় শক্তিমত্তার বিচারেও কিউদের খুব ভালো সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
 


কিউইদের শক্তির মূল জায়গা তাদের ব্যাটিং বিভাগ। যেখানে আছেন রস টেলর ও মার্টিন গাপটিলের মতো বহু যুদ্ধ জয়ের দুই নায়ক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুজন মিলে ২০ হাজারেও বেশি রান করেছেন। এ ছাড়া মূল ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আরো আছেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও হেনরি নিকোলস। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হওয়া গত বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের ফাইনালে উঠার পথে মূল শক্তিদের দুজন ছিলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও গ্রান্ট ইলিয়ট। এ দুজনের কেউই আর নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলে নেই। ফলে তাদের অভাব কিছুটা হলেও অনুভব করবেন কেন উইলিয়ামসন।

কিউইদের বোলিং লাইনেও আছেন দুর্দান্ত সব পেসার। মূল দায়িত্বটা থাকবে ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদির বহু অভিজ্ঞ দুই কাঁধে। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের পেস-সহায়ক উইকেটে যে কোনো দলকে দুমড়েমুচড়ে দিতে পারেন তারা। বিশেষ করে নতুন বলে আক্রমণে আসা এ দুজনকে যে কোনো দলের জন্যই সামাল দেয়া কঠিন হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এ দুজন প্রায় চারশ করে উইকেট নিয়েছেন। খুব সম্ভবত ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া এ দুজন ইংল্যান্ডে নিজেদের নিংড়ে দিতে চাইবেন। আর তাদের এই চাওয়াটাই কাল হতে পারে প্রতিপক্ষের জন্য।

এ দুজনের সাথে আছেন লকি ফার্গুসন ও ম্যাট হেনরি। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে তারাও প্রতিপক্ষের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে হাজির হতে পারেন। এ ছাড়া স্পিন বিভাগে ইশ শোধিও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিউজিল্যান্ডের কঠিন কাজ সহজ করে দিতে পারেন।

দারুণ সব ব্যাটসম্যান ও বোলারদের ভীড়ে নিউজিল্যান্ডের অলরাউন্ডাররাও কিন্তু সমীহ জাগানিয়া। অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান বা বোলার হিসেবে কিউইদের স্বপ্নসারথী হয়ে উঠতে পারেন তারাও। যেখানে আছেন কলিন ডি গ্রান্ডহোম, কলিন মানরো, জেমস নিশাম ও মিচেল স্যান্টনার। এদের মধ্যে স্যান্টনারই মূলত প্রধান স্পিনারের দায়িত্ব সামলাবেন। প্রয়োজনে ডাক পড়তে পারে ইশ সোধিরও। অবশ্য মূল একাদশ গড়ার সময় সোধির চেয়ে এগিয়ে থাকবেন স্যান্টনারই। কারণ তার কাছ থেকে সোধির তুলনায় বেশি ব্যাটিং সহায়তা পেতে পারেন উইলিয়ামসন।
 


উইকেটরক্ষক হিসেবে আছেন টম ল্যাথাম ও ব্লান্ডেল। এ দুজন আবার ব্যাট হাতেও দেখাতে পারেন মুনসিয়ানা। সব মিলিয়ে দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ দল নিয়েই বিশ্বকাপ অভিযানের জন্য প্রস্তুত কিউইরা। অন্য যে কোনো দলের মতো, তাদেরও মূল প্রয়োজন কেবল মাঠের লড়াইয়ে ঠিকঠাক সাড়া দেয়া।

কেন উইলিয়ামসনের বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্ব এবং রস টেলর, মার্টিন গাপটিল, ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদিদের অভিজ্ঞতাও দারুণ কাজে দিবে কিউইদের। প্রয়োজনের সময় স্মার্ট ক্রিকেট খেলতে পারলে কিউইদের আরো একবার দেখা যেতে পারে শিরোপা লড়াইয়ের মূল মঞ্চে। আরো একবার কিউইরা প্রমাণ দিতে পারে- কেনো তাদের আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা দল মনে করা হয়।

নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপ স্কোয়াড: কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), মার্টিন গাপটিল, হেনরি নিকোলস, রস টেলর, ট্রেন্ট বোল্ট, লকি ফার্গুসন, ম্যাট হেনরি, টিম সাউদি, ইস সোধি, কলিন ডি গ্রান্ডহোম, কলিন মানরো, জেমস নিশাম, মিচেল স্যান্টনার, টম ব্লান্ডেল ও টম ল্যাথাম।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ মে ২০১৯/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়