ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বিশ্বকাপের ওপরই দাঁড়িয়ে তার ক্যারিয়ার

আমিনুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ২২ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিশ্বকাপের ওপরই দাঁড়িয়ে তার ক্যারিয়ার

ওদের হাতে বিশ্বকাপ মশাল। ওদের কাছে ১৬ কোটির প্রত্যাশা। ওরাই স্বপ্নের ধারক। ওরা বাংলার টাইগার। ওরা বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্নসারথি। ওদেরই একজন সাব্বির রহমান।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ১৫ খেলোয়াড়কে নিয়ে প্রতিদিন লেখা প্রকাশ করছে রাইজিংবিডি’র ক্রীড়া বিভাগ। আজ পড়ুন সাব্বির রহমানের গল্প, লিখেছেন আমিনুল ইসলাম।
সাব্বির রহমান অবশ্য ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের স্কোয়াডে ছিলেন। খেলেছিলেন কোয়ার্টার ফাইনালসহ ছয় ম্যাচ।  ছয় ম্যাচে করেছিলেন ১৮২ রান। এটা তার দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় মাঠ এবং মাঠের বাইরে একাধিক কাণ্ডে ‘ব্যাড বয়’ তকমা এটে যায় তার নামের সঙ্গে।  কয়েকবারের নিষেধাজ্ঞা ও জরিমানার গণ্ডি পেরিয়ে নিজেকে গুডবয় হিসেবে প্রমাণ করার পালা তার।  তার প্রতিভার প্রতি আস্থা রেখে বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে দেওয়া হয়েছে সুযোগ। সাব্বিরের ব্যাটিং ও ফিল্ডিং যে মুগ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। মাঝে-মধ্যে লেগব্রেক বোলিংও কাজে দেয়। তবে এ বিশ্বকাপের ওপরই দাঁড়িয়ে তার ক্যারিয়ার। তাকে দলে ঢুকাতে কম সমালোচনা হয়নি।  নির্বাচক, অধিনায়ক, বোর্ড প্রধান প্রত্যেকে তাকে নিয়ে কথা বলতে হয়েছে।

রুম্মন নামে পরিচিত এই ডানহাতি ক্রিকেটারের জন্ম ১৯৯১ সালে রাজশাহীতে। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বেড়ে ওঠা সাব্বির ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। তার স্বপ্নকে দোলা দিয়েছিল পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদির ৩৭ বলে করা সেঞ্চুরি। এরপর ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যান রাজশাহীর অলিতে-গলিতে-মাঠে-ময়দানে।

 



তারই ধারাবাহিকতায় ১৬ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার অভিষেক হয় রাজশাহী বিভাগের হয়ে। তবে ২০১০ সালের আগে তিনি আলোচনায় আসতে পারেননি। সেবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভালো করেন। এরপর এশিয়ান গেমসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৮ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে স্বর্ণ এনে দেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের স্বর্ণ নির্ধারণী ম্যাচে শেষ ৫ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৪৪ রান। ঠাণ্ডা মাথায় সাব্বির তিন চার ও তিন ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে জয় এনে দেন।  বাংলাদেশ পায় স্বর্ণ পদক।
বয়সভিত্তিক ও ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করার পুরস্কার স্বরূপ ২০১৪ সালে তার প্রিয় ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক হয়। চট্টগ্রামে অভিষেক ম্যাচে তিনি ২৬ রান করেছিলেন। একই বছর নভেম্বরে তার হয় ওয়ানডে অভিষেক। অভিষেক ম্যাচে অপরাজিত ৪৪ রান করেছিলেন।

উদীয়মান ক্রিকেটার হওয়া সত্ত্বেও তার প্রতিভার কারণে নির্বাচকরা তাকে ২০১৫ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে রাখে। অবশ্য নির্বাচকদের একেবারে হতাশ করেননি।  বিশ্বমঞ্চে প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ৩ রান করলেও পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হাঁকান হাফ সেঞ্চুরি (৫৩)। যদিও সাঙ্গাকারা ও দিলশানময় ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পায়নি। তৃতীয় ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে করেন অপরাজিত ৪২ রান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪ ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করেন ৪০। আর কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ৩০ রান।

 



বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষের সিরিজেও দলে সুযোগ পান। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে হয় তার টেস্ট অভিষেক। অভিষেক ম্যাচে প্রথম ইনিংসে সুবিধা করতে না পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসে নিজেকে প্রমাণ করেন। তার অপরাজিত ৬৪ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রায় জিতেই গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২৩ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জো রুট এসে অপরাজিত সাব্বির রহমানকে সান্ত্বনা দেন। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছিল।

এরপর অবশ্য আস্তে আস্তে ফর্মহীনতার চক্রে ঢুকে যান সাব্বির। সেখান থেকে নানা বিতর্কিত কাণ্ডে জরিমানা ও নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে যান। কিন্তু চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরের আগে তার ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে দলে নেওয়া হয়। সেটার প্রতিদান অবশ্য দেন তিনি।  নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যাটসম্যানরা যখন একের পর এক ম্যাচে ব্যর্থ হচ্ছিলেন, তখন তার ব্যাট থেকে আসে সেঞ্চুরি।  ১০২ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে তিনি ফেরার ইঙ্গিত দেন। তার আগে ৪৩  ও ১৩ রানের ইনিংস খেলেন।  নিউজিল্যান্ডে পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে তাকে বিশ্বকাপ ও ওয়ালটন ত্রিদেশীয় সিরিজে দলে রাখা হয়।

 



দেখার বিষয় হার্ডহিটার এই ব্যাটসম্যান তার নানান বিতর্ক, জরিমানা ও নিষেধাজ্ঞার বিষয়গুলোকে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে নিজেকে ‘গুড বয়’ হিসেবে প্রমাণ করতে পারেন কিনা। সেই চ্যালেঞ্জে নিয়ে কতদূর যেতে পারেন দেখার বিষয়।

সংক্ষেপে সাব্বিরের ক্রিকেট ক্যারিয়ার :
বাংলাদেশের হয়ে ৬১টি ওয়ানডে খেলে সাব্বির রান করেছেন ১২১৯। একটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে ৫টি হাফ সেঞ্চুরি।  ৪১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে রান করেছেন ৯০৬। কোনো সেঞ্চুরি না থাকলেও ৪টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তার। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ ৮০ রান। ১১ টেস্ট খেলে রান করেছেন ৪৮১। রয়েছে চারটি হাফ সেঞ্চুরি।
৫৮ প্রথম শ্রেণির ম্যাচে রান করেছেন ২৭৭২। ৪টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে ১৪টি হাফ সেঞ্চুরি। ১৫০টি লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট ম্যাচে তার রান ৩৪৬৫। ৩টি সেঞ্চুরি ও ১৭টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তার। আর ১৪০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রান করেছেন ২৯৫৮। ১টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে ১৪টি হাফ সেঞ্চুরি। প্রথম শ্রেণিতে ১৬টি, লিস্ট ‘এ’ তে ৫২টি ও টি-টোয়েন্টিতে ১৮টি উইকেটও শিকার করেছেন তিনি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ মে ২০১৯/আমিনুল/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়