ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

জাতীয় দলের কাছে তার অনেক ঋণ

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ২৪ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জাতীয় দলের কাছে তার অনেক ঋণ

ইয়াসিন হাসান : ব্যক্তিগত জীবনের প্রভাবে তাকে যেতে হয়েছিল জেল পর্যন্ত।  আদালত, কাঁঠগড়া, কারাগার; তিনটি জায়গা এমন এক সময়ে তার জীবনে আঘাত করেছিল যে ওই সময়ে লন্ডভন্ড হয়ে যেত তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার।  কিন্তু ভাগ্য তাকে ফেরায় ২২ গজে।

২০১৫ বিশ্বকাপ স্কোয়াডের ক্রিকেটাররা যখন ব্যাট-বল নিয়ে পরিশ্রম করছিলেন মাঠে। তখন রুবেল এক চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর করা প্রতারণা মামলার সূত্র ধরে জেলে! বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নাম থাকার পরও অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়াটা অনিশ্চিত ছিল তার।  কিন্তু অনেক ঝড়ের পর মুক্তি মেলে রুবেলের।

সেই রুবেল এখন অনেক পরিপাটি।  হয়েছেন সংসারী।  স্ত্রী দোলাকে নিয়ে কাটছে সুখের দিন।  তা বোঝা গেল তার কন্ঠে,‘আমার ব্যক্তিগত জীবন গুছিয়ে দিয়েছে দোলা। আমাকে পরিপাটি করার পেছনে ওর অনেক অবদান। দুজন খুব ভালো আছি। সুখে আছি।’

অ্যাডিলেডে চার বছর পর আগে ইংলিশ সাম্রাজ্য গুড়িয়ে দেওয়ার পেছনে সব থেকে বড় অবদান রুবেল হোসেনের।  বোলিংয়ে ৪ উইকেটে বাংলাদেশ পেয়েছিল স্মরণীয় জয়। সেঞ্চুরিতে মাহমুদউল্লাহ নায়ক হলেও রুবেল ছিলেন আনসাং হিরো। সেই রুবেল এবার ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ১৫ জন স্বপ্ন সারথির একজন।  নিজের তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলার অপেক্ষায় বাগেরহাটের এ ক্রিকেটার।

‘এবার সতেজ হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছি।  আমার পেছনে বড় কোনো ভাবনা নেই।  সামনে শুধুই চ্যালেঞ্জ।  গত চার বছরে আমি অনেক নির্ভার ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছি।  আমি জানি সাফল্যের জন্য আমাকে কিভাবে বোলিং করতে হবে। সেটা নিয়েই আমার সকল চিন্তা।’ – বলছিলেন রুবেল।

এ চার বছরে রুবেলের সবথেকে বড় দুঃস্মৃতি নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল।  হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ ভারতকে উপহার দিয়েছিলেন ডানহাতি পেসার। এক ওভারে ২২ রান দিয়ে ভারতের লক্ষ্য ৬ বলে ১২ রানে এনে দিয়েছিলেন। ওই ম্যাচ আর জেতেনি বাংলাদেশ।  ওই ফাইনালের পর রুবেল ভেঙে পরেছিলেন। কিন্তু দমে যাননি।  দমে যাননি বলেই তো নতুন স্বপ্ন দেখছেন বাগেরহাট এক্সপ্রেস।
 


‘এই বিশ্বকাপ ঘিরে আমার স্বপ্নটা অনেক বড়। আমি স্বপ্ন দেখি ২-৩ টি ম্যাচে যেন দলকে আমি জেতাতে পারি। আমাকে অধিনায়ক যে কোন সময় বোলিং দিলে আমি যেন সফল হতে পারি। সেরা ৫ বোলাররের একজন হতে চাই। আমাদের নয়টি খেলা আছে। সুতরাং আমার বেশ ভালো সুযোগ থাকবে। মানুষের জীবনে ভালো এবং খারাপ সময় থাকে। তবে এই বিশ্বকাপটি যেন স্মরণীয় হয়ে থাকে সেটাই আমার চাওয়া। ’

জাতীয় দল তাকে দিয়েছে পরিচয়।  বাংলাদেশ দলে খেলতে না পারলে আজ কোথায় থাকতেন তা অনেক ভেবেও বলতে পারলেন না।   দেশ, দল তাকে দিয়েছে অনেক কিছু।  খারাপ সময়ে দিয়েছে শক্ত থাকার রসদ।  ভালো সময়ে দিয়েছে আত্মবিশ্বাস।  প্রেরণা পেয়েছেন লাল-সবুজের জার্সিতে। তাইতো জাতীয় দলের কাছে রুবেল অনেক ঋণী।  সেই ঋণ শোধ করতে কোনোদিনও পারবেন না।  কিন্তু জানেন একটা ভালো উপলক্ষ দেশকে এক সুঁতোয় গেঁথে দিতে পারে।  সেই উপলক্ষ্যটা বিশ্বকাপ দিয়েই পূরণ করতে চান রুবেল।

‘গত ৪-৫ বছর ধরে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি।  আমাদের দলের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা তাই বেড়েছে।  দলে অনেক সিনিয়র ক্রিকেটর দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে ক্রিকেট খেলছি। আমাদের মধ্যে ভালো বোঝাপোড়াও আছে।  মাশরাফি ভাই, সাকিব ভাই, মুশফিক ভাই, তামিম ভাই তিনটি করে বিশ্বকাপ খেলেছে। তাদের (সিনিয়রদের) উপর মানুষের প্রত্যাশাটা অনেক বেশি। আমার মনে হয়, তাদের অভিজ্ঞতার প্রয়োগ বিশ্বকাপে পড়লে আমাদের ভালো করা সম্ভব।  আমাদের জুনিয়র ক্রিকেটার যারা আছে তারাও সামর্থ্য রাখে ভালো কিছু করার। সবাই মিলে আমরা বিশ্বকাপও জিততে পারি।’

২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বিরাট কোহলির উইকেট পেয়েছিলেন এ পেসার। ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে থাকা এ ব্যাটসম্যানের উইকেট এবারো পেতে মুখিয়ে তিনি। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার ওয়ার্নার-স্মিথ, দক্ষিণ আফ্রিকার আমলা-ফাফ ডু প্লেসিসের উইকেট চান।

জাতীয় দলে তার সবথেকে বড় নির্ভরতার নাম মাশরাফি বিন মুর্তজা।  অধিনায়ক তাকে আগলে রাখেন যেভাবে, সেটা অন্য কেউ পারে না।  তার উপদেশ, তার বকাঝকা, তার শাসন সব কিছুই রুবেলের কাছে অম্লমধুর। এবার শেষ বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন মাশরাফি।  নিজের আইডলের জন্য রুবেল মুখিয়ে ভালো কিছু করার।

‘মাশরাফি ভাই আমাকে অন্য লেভেলে পছন্দ করে।  তার কাছে আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ।  আমি অবশ্যই চাইবো তার মতো একজন ক্রিকেটারের শেষ বিশ্বকাপ যেন স্মরণীয় হয়ে থাকে।  সেজন্য বাড়তি পরিশ্রমটা আমাদেরকেই করতে হবে।’ – যোগ করেন রুবেল। 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ মে ২০১৯/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়