ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭-০ করে ফেলল ভারত

আবু হোসেন পরাগ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০২, ১৬ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭-০ করে ফেলল ভারত

আবু হোসেন পরাগ : ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি মানেই উত্তেজনার বারুদে ঠাসা এক ম্যাচ। ম্যাচটিকে ঘিরে দুই দলের সমর্থকদের উত্তেজনার পারদও থাকে তুঙ্গে। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে উত্তেজনা ছড়াল কই! বরং দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ম্যাচটা হলো পুরোপুরি একপেশে। যেখানে যথারীতি দাপট দেখাল ভারত। ভারতীয়রা ধরে রাখল বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের ধারাবাহিকতা।

ম্যানচেস্টারে রোববার ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ৮৯ রানের বড় জয় পেয়েছে বিরাট কোহলির দল। ম্যাচসেরা হওয়া রোহিত শর্মার সেঞ্চুরিতে ভারত ৫ উইকেটে ৩৩৬ রান করার পরই ম্যাচের ভাগ্য একরকম লেখা হয়ে গিয়েছিল। বিশ্বকাপে এত রান তাড়া করে যে জিততে পারেনি কোনো দল।

ইতিহাস বদলানোর লক্ষ্যে নেমে পাকিস্তান সেভাবে জয়ের সম্ভাবনাই তৈরি করতে পারেনি কখনো। ৩৫ ওভারে ৬ উইকেটে ১৬৬ রান তোলার পর নামে বৃষ্টি। আবার খেলা শুরু হলে নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪০ ওভারে ৩০২। সরফরাজ আহমেদের দল করতে পারে ৬ উইকেটে ২১২ রান।

বিশ্বকাপে এই নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে সাতবারের দেখায় সাতবারই জিতল ভারত। বলা যায়, ভারত ৭-০ পাকিস্তান!

মেঘলা আকাশের নিচে কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগাতে টস জিতে বোলিং নিয়েছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ। তবে মোহাম্মদ আমির ছাড়া পাকিস্তানের বাকি বোলাররা পাত্তাই পাননি শুরুতে। রোহিত শুরু করেছিলেন আক্রমণাত্মক। শিখর ধাওয়ানের চোটে ওপেনিংয়ে উঠে আসা লোকেশ রাহুল ছিলেন কিছুটা সাবধানী।



ভারত প্রথম ১০ ওভারে তোলে ৫৩ রান। যদিও ৪৭ রানেই ভেঙে যেতে পারত জুটি। ওয়াহাব রিয়াজকে মিড উইকেটে খেলে সিঙ্গেল নেন রাহুল। রোহিত নিতে চেয়েছিলেন ডাবল। প্রায় অর্ধেক পিচ চলেও এসেছিলেন তিনি। তাকে ফিরিয়ে দেন রাহুল। কিন্তু ফখর জামান বল ধরে থ্রোটা করেন ভুল প্রান্তে।

৩২ রানে ‘লাইফলাইন’ পেয়ে রোহিত ফিফটি পূর্ণ করেন ৩৪ বলে, রাহুল ৬৯ বলে। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে শতরানের উদ্বোধনী জুটি পায় ভারত। রোহিত-রাহুলের পেছনে পড়ে ১৯৯৬ বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে শচীন টেন্ডুলকার ও নবজ্যোত সিং সিধুর ৯০ রানের জুটি।

ফিফটির পর ইনিংস আর বড় বেশি করতে পারেননি রাহুল (৫৭)। তাকে ফিরিয়ে ১৩৬ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন ওয়াহাব রিয়াজ। রোহিত এরপর চালিয়ে গেছেন অধিনায়ক কোহলিকে সঙ্গী করে। ডানহাতি ওপেনার এই বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় আর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৪তম সেঞ্চুরি তুলে নেন ৮৫ বলে।

যেভাবে খেলছিলেন তাতে রোহিত এই বিশ্বকাপের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করবেন বলেও আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। তবে দেড়শর আগেই তাকে থামান হাসান আলী। স্লোয়ার বল স্কুপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় রোহিতের ১১৩ বলে ১৪ চার ও ৩ ছক্কায় ১৪০ রানের ইনিংসটি।

চারে নেমে দুটি চার ও একটি ছক্কায় ঝড় তোলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। তবে তাকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি আমির। ১৯ বলে পান্ডিয়া করেন ২৬ রান। আমির টিকতে দেননি মহেন্দ্র সিং ধোনিকেও (১)। এর একটু পরই ম্যানচেস্টারে নামে বৃষ্টি। ৪৬ ওভার ৪ বলে ভারতের সংগ্রহ তখন ৪ উইকেটে ৩০৫।

কোহলি ততক্ষণে পেয়ে গেছেন ফিফটি। হাসান আলীকে টানা দুই চার হাঁকানোর পথে শচীন টেন্ডুলকারকে (২৭৬ ইনিংস) ছাড়িয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম ১১ হাজার রানের রেকর্ডটাও নিজের করে নেন ভারত অধিনায়ক।

বৃষ্টির পর আবার খেলা শুরু হলে বাকি ২০ বলে ৩১ রানের বেশি করতে পারেনি ভারত। আমিরের তৃতীয় শিকার হওয়ার আগে ৬৫ বলে ৭ চারে ৭৭ রান করেন কোহলি। ১৫ বলে ১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন বিজয় শঙ্কর। শেষ দিকে ভারতের রানের স্রোতে বাঁধ দেওয়া আমির ১০ ওভারে ৪৭ রানে নেন ৩ উইকেট।

বোলিংয়ের শুরুতে বড় ধাক্কা খায় ভারত। নিজের তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বল করার পরই হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন ভুবনেশ্বর কুমার। অবশ্য তার জায়গায় বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই ভারতকে ব্রেক থ্রু এনে দেন শঙ্কর। এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ইমাম উল হক। মাত্র তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম বলেই উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন শঙ্কর।



শুরুর ধাক্কা সামলে পাকিস্তানকে পথ দেখান ফখর জামান ও বাবর আজম। দ্বিতীয় উইকেটে এই দুজন গড়ে ফেলেন ১০৪ রানের দারুণ জুটি। ফখর তুলে নেন ফিফটি। কিন্তু এ জুটি ভাঙার পরই পথ হারায় পাকিস্তান।

নিজের পরপর দুই ওভারে দুই সেট ব্যাটসম্যানকে ফেরান কুলদীপ যাদব। ফিফটি থেকে ২ রান দূরে থেকে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হন বাবর। সুইপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দেন ৬২ রান করা ফখর। পরের ওভারে হার্দিক পান্ডিয়ার পরপর দুই বলে ফেরেন দুই অভিজ্ঞ মোহাম্মদ হাফিজ ও শোয়েব মালিক।

১৯ বল আর ১২ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের স্কোর তখন ৫ উইকেটে ১২৯! ষষ্ঠ উইকেটে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন সরফরাজ ও ইমাদ ওয়াসিম। সরফরাজকে ফিরিয়ে ৩৬ রানের জুটি ভাঙেন শঙ্কর।

এর একটু পরই হানা দেয় বৃষ্টি। বৃষ্টির পর নতুন লক্ষ্যে ৫ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ১৩৬ রান। ইমাদের ৪৬ ও শাদাব খানের ২০ রানের সুবাদে পাকিস্তান পরাজয়ের ব্যবধানই কমাতে পারে শুধু। শঙ্কর, পান্ডিয়া, কুলদীপ ভাগ করে নেন ২টি করে উইকেট।   

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জুন ২০১৯/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়