ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে বেসিক ব্যাংক রি-ক্যাপিটালাইজেশন বন্ড

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৩, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে বেসিক ব্যাংক রি-ক্যাপিটালাইজেশন বন্ড

কেএমএ হাসনাত : অবশেষে বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে ‘বেসিক ব্যাংক রি-ক্যাপিটালাইজেশন বন্ড’ ইস্যু হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি অনেকটা  চুড়ান্ত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় কাজে বর্তমানে বিদেশ রয়েছেন। তিনি ফিরলেই উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর,  অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব, বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।

এরই মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বিষয়টি অবহিত করতে অর্থমন্ত্রীর জন্য একটি সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য ১০-২০ বছর মেয়াদি ২৬০০ কোটি টাকার বেসিক ব্যাংক রি-ক্যাপিটাইলজেশন বন্ড ইস্যু করার প্রস্তাবটি বর্তমানে অর্থ বিভাগের বিবেচনাধীন। এ বিষয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামতের আলোকে ব্যাংকটির অনুকূলে রি-ক্যাপিটালাইজেশন বন্ড ইস্যু করার প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী কর্তৃক গত বছর ২১ ডিসেম্বর অনুমোদন দেন। বেসিক ব্যাংকের প্রস্তাবনা বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত ও অর্থমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত সার-সংক্ষেপ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়। বিষয়টি বর্তমানে অর্থ বিভাগের বিবেচনাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠকের প্রয়োজনীয়তার কথা অবহিত করে অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর অনুমতি পেলেই বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী গত ৯ ফেব্রুয়ারি লন্ডন হয়ে ইতালি গেছেন। সেখানে ইফাদের ৪০তম অধিবেশনে যোগদান শেষে আগামী ১৬ ফ্রেব্রুয়ারি দেশে ফিরবেন। আশা করা যাচ্ছে, তিনি দেশে ফেরার পর পরই বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।

সূত্র জানায়, এর আগে বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে বেসিক ব্যাংক থেকে রি-ক্যাপিটালাইজেশন বন্ড ইস্যুর জন্য একটি আবেদন করা হয়। এতে ব্যাংকটির ঝুঁকি ভরযুক্ত সম্পদ (জরংশ ডবরমযঃবফ অংংবঃং- জডঅ) বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ন্যূনতম প্রয়োজনীয় মূলধন, সংরক্ষিত মূলধন, মূলধন ঘাটতি ইত্যাদি পূরণের জন্য ২৬০০ কোটি টাকার বেসিক ব্যাংক রি-ক্যাপিটাইলাইজেশন বন্ড ইস্যু করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করে।

সূত্র জানায়, বেসিক ব্যাংকের অনুরোধ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত মূলধন সংরক্ষণের হার বিবেচনায় ব্যাংকটির বর্তমান মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ২৫৯৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। মূলধন ঘাটতি পূরণে উক্ত বন্ড ইস্যু করার জন্য যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে যে, মূলধন ঘাটতি থাকায় ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ব্যাংকের স্বাভাবিক আয় থেকে এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে নগদ অর্থের পরিবর্তে বন্ড ইস্যু করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর জন্য বর্তমানে মূলধন সংরক্ষণের হার ঝুঁকি-ভরযুক্ত সম্পদের ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় ২০১৬-২০১৯ মেয়াদে ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। সে অনুযায়ী উক্ত হার ক্রমান্বয়ে ২০১৯ সাল নাগাদ ১২ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হবে।

মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত অনুযায়ী ২৬০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করার প্রস্তাব করেছে বেসিক ব্যাংক। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী সাধারন শেয়ারের বিপরীতে ১০ বছর মেয়াদি ৮০০ কোটি, ১৫ বছর মেয়াদি ৮০০ কোটি এবং ২০ বছর মেয়াদি ১০০০ কোটি টাকা মিলে সর্বমোট ২৬০০ কোটি টাকার সুদ বিহীন বন্ড দেওয়া হলে ব্যাংকের ২০১৬ সালের জুন ভিত্তিক পিলার-১ মূলধনের ঘাটতি পূরণসহ পিলার-২ এর মূলধন ঘাটতির আংশিক পূরণ হবে।

সূত্র জানায়, ব্যাংকটি যদি তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী মুনাফা করতে সফল হয়, সেক্ষেত্রে তাদের শেয়ার সরকারের কাছ থেকে পুনঃক্রয়ের ফলে পরিশোধিত বন্ডের অর্থ ক্রমান্বয়ে কমবে এবং সরকারের কোন আর্থিক দায় থাকবে না। উল্লেখ্য, রি-ক্যাপিটাইলাইজেশন বন্ড ইস্যুর বিপরীতে বেসিক ব্যাংক কর্তৃক সরকারের অনকূলে শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন সংস্থানের কার্যক্রমের বিপরীতে বর্তমানে কোন ধরনের আর্থিক লেনদেন হবে না। তবে বেসিক ব্যাংক যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী পর্যাপ্ত মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম না হয় সে ক্ষেত্রে সরকারকে বন্ডের মূল্য হিসেবে মেয়াদ শেষে বেসিক ব্যাংকের অনুকূলে উক্ত ২৬০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকার ব্যাংকটির শতভাগ শেয়ারের মালিক বিধায় ঘাটতি মূলধন পূরণের আবশ্যকতা রয়েছে। উক্ত ঘাটতি পূরণে সরকার কর্তৃক বাৎসরিক বাজেট থেকে বরাদ্দের মাধ্যমে মূলধন সরবরাহের সুযোগ রয়েছে। তবে ঘাটতি বাজেট থেকে বিপুল পরিমাণ মূলধন পূরণ করা হলে বাজেটের উপর চাপ সৃষ্টি হবে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত অনুযায়ী বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে ‘বেসিক ব্যাংক রি-ক্যাপিটালাইজেশন বন্ড’ ইস্যুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারিতে সংকটে পড়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক। ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর নেতৃত্বে গঠিত পরিচালনা পর্ষদ কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেনি। ইচ্ছেমতো হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ব্যাংকটির ঋণ দুর্নীতির অভিযোগে ৫৬টি মামলা বিচারাধীন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়