ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বাজেটে মৎস্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২২, ১৮ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাজেটে মৎস্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি

কেএমএ হাসনাত : আগামী ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের  বাজেটে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দের অতিরিক্ত ২৮০ কোটি ৮২ টাকা বরাদ্দ চেয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

এর মধ্যে অনুন্নয়ন খাতে অতিরিক্ত ২১ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং উন্নয়ন খাতে ২৫৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া না হলে গৃহিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হতে পারে।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এম সাইয়েদুল হক এক চিঠিতে এ বরাদ্দ চেয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, মাছ, মাংস, দুধ ও ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি প্রাণবন্ত, স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অমিত সম্ভাবনাময়। কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সাব-সেক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূসিকা পালন করে আসছে। দেশের জিডিপির ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ আসে প্রাণিসম্পদ খাত থেকে এবং ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ আসে প্রাণিজসম্পদ খাত থেকে। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর পুষ্টি ও প্রাণিজ আমিষের চাহিদা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিশেষ করে প্রাণিজ পুষ্টির যোগান দিয়ে দেশের মাতৃমুত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশের দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, গবেষণা  কার্যক্রম পরিচালনা এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন এবং ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ  করা হয়েছে। গৃহীত কর্মপরিকল্পনা অনুসারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সাব-সেক্টরের লক্ষ্য অর্জনে এ উপখাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন বলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বিগত দিনে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এ মন্ত্রণালয়ের দক্ষতা ও সক্ষমতা অতীতের তুলনায় ক্রমান্বয়ে দৃশ্যমানভাবে বেড়েছে। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছর থেকে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, ২০১৩-২০১৪ সালে আরএডিপি/এডিপি খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ৪৫৮ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে ৪৫৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা অর্থাৎ মোট বরাদ্দের ৯৯ দশমিক ৩১ শতাংশ ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছে মন্ত্রণালয়টি। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫৪৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছে ৫৪০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, শতকরা হারে ৯৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ২০৫-২০১৬ অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৭০১ কোটি ৯ লাখ টাকা। ব্যয় করতে পেরেছে ৬৯৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, শতকরা হারে ৯৯ দশমিক ১০ শতাংশ। চলতি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছর বরাদ্দ দেওয়া হয় ৭৯৫ দশমিক ৩২ লাখ টাকা। গম জানুয়ারি পর্যন্ত মন্ত্রণালয়টি ব্যয় করতে পেরেছে ২৪৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অর্থৎ জানুয়ারি বরাদ্দকৃত অর্থের ৩১ দশমিক ২৪ শতাংশ ব্যয় হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারের ভিশন-২০২১ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশের ৮৫ ভাগ জনগোষ্ঠীর পু্ষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে  মোট ৮৪টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে চলতি ৪৩টি এবং নতুন প্রকল্প রয়েছে ৪১টি। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে মোট ২১টি প্রকল্প আগামী জুনে শেষ হবে। নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পগুলো সমাপ্ত করার এবং এ প্রকল্পগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডিপিপির সংস্থান মোতাবেক অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে চলমান এবং প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্পগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উন্নয়ন খাতে মোট ১১০৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন।

সূত্র জানায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে এ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাতে মোট বরাদ্দ সিলিং দেওয়া হয়েছে ১৯৮২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এ বরাদ্দ সিলিং থেকে বেতন-ভাতাসহ একান্ত অপরিহার্য বাবদ অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১৩৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। অবশিষ্ট (১৯৮২.২৯-১১৩৭.৫২)=৮৪৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা উন্নয়ন বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে। গৃহীত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে চাহিদার তুলনায় উন্নয়ন বরাদ্দ সিলিং (১১০৪.১৬-৮৪৪.৭৭)=২৫৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা কম। উন্নয়ন প্রকল্পসমূহে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন খাতে চাহিদা অনুযায়ী অতিরিক্ত ২৫৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন রয়েছে। একই ভাবে অনুন্নয়ন খাতে মোট ১১৫৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে অনুন্নয়ন খাতে চাহিদা অনুযায়ী (১১৫৮.৯৪-১১৩৭.৫২)=২১ কোটি ৪২ লাখ টাকা কম। তাই অনুন্নয়ন খাতে ২১ কোটি ৪২ লাখ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন।

অর্থমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, যে বরাদ্দ নির্ধারণ  করা হয়েছে তা দিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার সমন্বয়ে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুযায়ী কাংক্রম তথা সরকারের ভিশন-২০২১, ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ মার্চ ২০১৭/হাসনাত/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়