ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

অর্থনীতির ভারসাম্যে তিন ধরনের সংস্কার চায় সিপিডি

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৯, ২৭ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অর্থনীতির ভারসাম্যে তিন ধরনের সংস্কার চায় সিপিডি

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : অর্থনীতিতে ভারসাম্য রক্ষায় তিনটি সংস্কার করা দরকার বলে মনে করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। একইসঙ্গে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে অর্থপাচার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছে সংস্থাটি। 

শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত বাংলাদেশের অর্থনীতি (তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা) শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানায় সংস্থাটি। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান।

সিপিডি মনে করে, অর্থনীতিতে ভারসাম্য রাখতে তিনটি সংস্কার দ্রুত করা দরকার। এগুলো হলো সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয় করা, মুদ্রা বিনিময় হার সামঞ্জস্যপূর্ণ করা এবং জ্বালানি তেলের দাম কমানো। সিপিডি মনে করে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংকিং খাতে সংস্কার ও রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের গুণগত মান নিশ্চিত করা দরকার। যা করতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত লাগবে।

রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৬ শতাংশ কমে যাওয়া উদ্বেগ প্রকাশ করে সিপিডির প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল মেয়াদে ১ হাজার ২২৫ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। ওই অর্থবছরের তুলনায় চলতি বছরে এখন পর্যন্ত বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের হার ৩৪ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। এর বিপরীতে রেমিট্যান্স ১৬ দশমিক ২ শতাংশ কমে ১ হাজার ২৮ কোটি ৭২ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে বিদেশে বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওসব দেশ থেকে প্রবাসী আয়ও বেড়েছে। তবে ব্যাংকের মাধ্যমে না আসায় তা রেমিট্যান্সের সঙ্গে যোগ হচ্ছে না। 

এক প্রশ্নের জবাবে সিপিডির রিচার্জ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান অর্থবছরে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে রেমিট্যান্স কমেছে। গত অর্থবছরের তুলনায় ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ রেমিট্যান্স কমেছে। যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি কমেছে।

তিনি বলেন, বিভিন্নভাবে অবৈধ পথে রেমিট্যান্স আসার প্রবণতা বাড়ার কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক ধারা চলছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যার প্রভাব পড়া শুরু করেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে অর্থ আসায় হয়ত ব্যক্তি লাভবান হতে পারে কিন্তু সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে। অন্যদিকে যাত কম সময়ে প্রবাসীর দেশে টাকা পাঠাতে পারে সেই পথটা সুগম করতে হবে।

সঞ্চয়পত্রের হার কমানের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সঞ্চয়পত্র সামাজিক নিরাপত্তার একমাত্র সমাধান হতে পারে না। সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। সরকারকে এর বাইরে ব্যক্তি খাতে বিমা ও পেনশন দেওয়ার মাধ্যমে সামিজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। এর পাশাপাশি সঞ্চয়ত্রের সিলিং ও হার কমিয়ে দেওয়া উচিত। সিপিডির প্রতিবেদন অনুসারে অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি (প্রথম ৮ মাসে) মেয়াদে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।

সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে যে স্ফুলিঙ্গ দেখতে পাচ্ছি, তা থেকে আগুন জ্বলবে কি না, সেটাই দেখতে চাচ্ছি। এজন্য সঞ্চয়পত্র সুদের হার, মুদ্রা বিনিময় হার সামঞ্জস্যপূর্ণ করা এবং জ্বালানি তেলের দাম হ্রাস করা উচিত। চলতি অর্থবছরে বাজেটে বড় ধরনের সংশোধনীর প্রয়োজন হবে।

ব্যাংকিং সেক্টরে অরাজকতা থামাতে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, অনেকে ব্যাংকিং কমিশন গঠনে নতুন করে জটিলতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আসলে ব্যাংকিং কমিশন কোনো স্থায়ী কমিশন নয়। অতীতেও এ ধরনের কমিশন গঠন হয়েছে। এই কমিশন মূলত ব্যাংকের স্বাস্থ্যগত সমস্যা পরীক্ষা করে সমাধানের বিষয়ে সুপারিশ করবে। তাদের সুপারিশের আলোক সরকার তা বাস্তবায়ন করবে। এখানে লাল ফিতার দৌরাত্ব হওয়ার সুযোগ নেই।

নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিপিডির তৌফিক বলেন, ভ্যাট হার ১২ শতাংশ হলে সরকার রাজস্ব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা করছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সম্পূরক শুল্ক বসানোর তালিকা বৃদ্ধি, রপ্তানি কর বৃদ্ধি এবং প্রত্যক্ষ করসহ অন্যান্য কর বৃদ্ধি করতে পারে সরকার। কিন্তু সিপিডি মনে করে করের হার না বাড়িয়ে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সরকারের মনোনীবেশ করা দরকার। অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একইসঙ্গে নীতি নির্ধারণ ও রাজস্ব আহরণের কাজ করে থাকে। কিন্তু আমরা দেখেছি এনবিআর নীতি বাস্তবায়নের চেয়ে রাজস্ব আদায়ে জোর দেয়।

ইসলামী ব্যাংকের সাম্প্রতিক জটিলতা প্রসঙ্গে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, ব্যক্তি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক অন্যতম ভালো ব্যাংক ছিল। ব্যাংকটির সকল সূচকই ভালো ছিল। জঙ্গিবাদের অর্থায়নে অভিযোগ উঠার পর সরকার ব্যাংকটি পুর্নগঠনের উদ্যোগ নেয়। সরকার ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় যে ব্যবস্থা নিয়েছে তাতে গত ২ বছর থেকে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা বড় বিষয়। ব্যাংকিং লেনদেনের স্বচ্ছতা ও সুশাসনের অভাব দেখা দিয়েছে। আমরা ক্রমশ অধপতনের দিকে যাচ্ছি। আমরা যতটুকু এগিয়েছি, ততটুকু পিছিয়ে যাচ্ছি। আর এজন্যই ব্যাংকিং কমিশনের কথা বলছি।

সিপিডি বলেছে, বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে এ বছর ৪০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরে ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে সরকারি ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু প্রথম প্রান্তিকে সরকারি ব্যয়ে প্রবৃদ্ধি মাত্র ১২ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির পরিচালক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ, অতিরিক্ত পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ও খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ মে ২০১৭/এম এ রহমান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়