ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া আবার পেছালো

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৪, ২৬ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া আবার পেছালো

বিশেষ প্রতিবেদক : সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়ার প্রক্রিয়া আবার এক বছর পেছালো। তবে এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলোকে লাভজনক অবস্থায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

এর আগে কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনার জন্য অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসলেউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সরকারি শেয়ার বাজারে ছাড়া সংক্রান্ত বিষয়ে বুধবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর চেয়ারম্যান, সরকারি কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সরকারি কোম্পানিগুলোর অসহযোগিতার কারণে এসব কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে। ২০০৮ সাল থেকে সরকারি ২৬ কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে বর্তমান সরকারের সময়ও একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এমনকি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেশ কয়েকবার সংশ্লিষ্টদের সময়ও বেঁধে দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি। বুধবারের বৈঠকে এ প্রক্রিয়া আরো এক বছরে জন্য পিছিয়ে গেল।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিকে চার মাসের মধ্যে তাদের পর্যালোচনা প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এরপর আগামী বছর জুনের মধ্যে প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার ছাড়া নিয়ে দেরি হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে তিনি সরকারি মালিকানাধীন প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজকে অপদার্থ প্রতিষ্ঠান বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ৬০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও তেমন দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। একমাত্র ১৯৭২ সালে একটি গাড়ি তৈরি করে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে উপহার দিয়েছিল। এ ছাড়া তাদের আর কোন সাফল্য নেই।’

তিনি বলেন, ‘মিৎসুবিসির সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ গাড়ি সংযোজন  করছে। প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ গাড়ি রং করা ছাড়া আর কোন দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। মিৎসুবিসির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ২০১৮ সালে শেষ হওয়ার পর নতুন করে কি করা যায় তা দেখতে হবে।’

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সবগুলো প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান বলে বৈঠকে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাজারে শেয়ার ছাড়তে হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হতে হবে। কিন্তু শিল্প মন্ত্রণালয়ের সবগুলো প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্ত। একমাত্র ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরির সঙ্গে সৌদি আরবের একটি কোম্পানির কথা চলছে। তারা যৌথভাবে সিমেন্ট উৎপাদন করতে সম্মত হলে প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখতে পারে। তখন দেখা যাবে কি করা যায়।’

বৈঠকে ইউনিলিভার প্রসঙ্গে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি লিস্টেট হতে চাচ্ছে না। একারণে তারা পরিশোধিত মূলধনও বাড়াচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করবো সরকারি শেয়ারের ১০ শতাংশ বাজারে ছাড়া যায় কিনা। তবে কৌশলগত কারণে অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগস- এর শেয়ার আপাতত ছাড়া হচ্ছে না বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জানা গেছে, অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগসের উৎপাদিত ওষুধের দাম অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম পড়ে। সাধারনত সরকারি হাসপাতালগুলোতেই অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগসের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। ওষুধ প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগসের ওষুধের দামের সঙ্গে পার্থক্য থাকায় অন্যান্য ওষুধ কোম্পানির ওষুধের দাম নির্ধারনে এক ধরনের চাপ থাকে ফলে সাধারন মানুষ ন্যায্য দামে ওষুধ পেতে পারেনা। কোম্পানিটির শেয়ার বাজারে ছাড়া হলে এতে বেসরকারি শেয়ার যুক্ত হবে। ফলে সে সুবিধা আর পাওয়া যাবে না। তাউ কৌশলগত কারণে অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগসের শেয়ার আপাতত বাজারে ছাড়া হচ্ছে না।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ জুলাই ২০১৭/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়