ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

স্পিনারদের দিনে এগিয়ে বাংলাদেশ

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৫, ২৭ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্পিনারদের দিনে এগিয়ে বাংলাদেশ

শেষ বিকেলে অস্ট্রেলিয়া শিবিরে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছেন সাকিব ও মিরাজ

ইয়াসিন হাসান, মিরপুর থেকে : ঢাকা টেস্ট স্পিনারদের দখলে থাকবে, এটা অনুমিতই ছিল। তবুও রোববার সকালে প্যাট ক্যামিন্সের গতির ঝড় হিসাব পাল্টে দিচ্ছিল। কিন্তু দিনের খেলা যতই গড়িয়েছে, স্পিনারদের দাপট ততই বেড়েছে। ১৩ উইকেটের দিনে স্পিনাররা পেয়েছে ৯ উইকেট। দিন শেষে ব্যাট-বলের পারফরম্যান্সে বাংলাদেশই কিছুটা এগিয়ে।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মিরপুর শের-ই-বাংলায় ২৬০ রানে অলআউট হয়ে যায় মুশফিকুর রহিমের দল। জবাবে প্রথম দিন শেষে ১৮ রান তুলতেই ৩ উইকেট নেই অস্ট্রেলিয়ার। ২৪২ রানে পিছিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন চ্যালেঞ্জ।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের কথা উঠলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে শাহরিয়ার নাফীসের কথা। ২০০৬ সালে  ফতুল্লায় ব্রেট লি, জেসন গিলেস্পি, শেন ওয়ার্নদের বিপক্ষে শাহরিয়ারের করা সেঞ্চুরি ধ্রুবতারার মতো এখনো উজ্জ্বল। আজও শাহরিয়ার দৃশ্যমান শক্তি হয়ে ছিলেন বাংলাদেশ দলে!



তবে মাঠে লড়াই করেননি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান। ধারাভাষ্য কক্ষে বসে লড়েছেন বাংলাদেশের হয়ে। সেই লড়াইয়ে তামিম-সাকিব উদ্বুদ্ধ হয়ে সেঞ্চুরি না পেলেও শাহরিয়ারের মন জয় করেছেন,‘ওরা তো দারুণ খেলেছে। সেঞ্চুরি পেলে অবশ্যই ভালো হতো। কিন্তু এ ধরনের উইকেটে যে চাপ নিয়ে ওরা ব্যাটিং করেছে, সেটা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।’

ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের ১০ রানে নেই ৩ উইকেট! গত ১৩ বছরেও ইনিংসের এমন শুরু দেখেনি বাংলাদেশ। ২০০৪ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ রানে হারিয়েছিল ৩ উইকেট। এরপর আজ আবার! নিঃসন্দেহে দিনের প্রথম ২০ মিনিটেই পিছিয়ে টাইগাররা।

এরপর দলের দায়িত্ব বুঝে নিলেন তামিম ও সাকিব, যারা নেমেছিলেন নিজেদের ৫০তম টেস্ট খেলতে। মাইলফলকের ম্যাচ স্মরণীয় করে রাখতে অসি বোলারদের কড়া শাসন শুরু করেন ‘দুই বন্ধু।’ পঞ্চমবারের মতো একসঙ্গে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৫৫ রানের জুটি গড়েন তারা। খাদের কিনারা থেকে দলকে তুলে চালকের আসনে নিয়ে যান।



দুজনেরই সুযোগ ছিল তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছানোর। কিন্তু নিজেদের ভুলেই পারেননি। মধ্যাহ্ন বিরতির পর তামিম ৭১ রানে ম্যাক্সওয়েলের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ওয়ার্নারের হাতে ক্যাচ দেন। ২৩ রান যোগ হতেই সাকিবও সাজঘরে। ৮৪ রান করা সাকিবের উইকেট নেন স্পিনার নাথান লায়ন।

দ্রুত দুই ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরলেও তাদের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে ছিলেন স্টিভেন স্মিথ। অসিদের সেরা স্পিনার লায়নকে তিনবার ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছয় মেরেছেন তামিম। সেরা পেসার জশ হ্যাজেলউডের বলেও সাকিব-তামিম ছিলেন সাবলীল। তাদের ইনিংস লেটার মার্কস পেলেও জোড়া সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ একটু আছেই। সেঞ্চুরি না পেলেও তামিম একটি মাইলফলক ছুঁয়েছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৬ হাজার রান ছুঁয়েছেন দেশসেরা ওপেনার।

সাকিব ও তামিম চতুর্থ উইকেট জুটিতে তোলেন ১৫৫ রান। বাকি ১০৫ রান আসে অন্যান্য ‍জুটি থেকে। পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, অন্য ব্যাটসম্যানরা কতটুকু দায়িত্বশীল ছিলেন! তবে ব্যতিক্রম মেহেদী হাসান। আম্পায়ার আলীম দারের ভুলে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। দুই বছর পর জাতীয় দলে আসা নাসির হোসেন ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। তবে ২৩ রানের বেশি করতে পারেননি।



দিনের শুরুটা যতটা বেদনাদায়ক ছিল, দিনের শেষটা ছিল ততটাই আনন্দের। বাংলাদেশের করা ২৬০ রানের জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে পড়ন্ত বিকেলে অস্ট্রেলিয়া তোলে ১৮ রান। এ রান তুলতেই সফরকারীদের ৩ ব্যাটসম্যান সাজঘরে। অসি শিবিরে প্রথম আঘাতটি করেন স্পিনার মেহেদী হাসান। ডানহাতি এ অফ স্পিনারের বল ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউর শিকার হন ডেভিড ওয়ার্নার। আগের বলেই রিভিউ নিয়ে বেঁচেছিলেন ওয়ার্নার। কিন্তু পরের বলে মিরাজের শিকার হতেই হয় তাকে।

দলে ফেরা উসমান খাজা নিজের ভুলে রানআউটের শিকার হন মুশফিক ও সৌম্যর দূর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে। শেষ ওভারের এক ওভার আগে বাংলাদেশকে তৃতীয় সাফল্য দেন সাকিব। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা লায়ন সাকিবের বলে এলবিডব্লিউ হন। দলের ব্যর্থতায় অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ দিনের ১২ বল বাকি থাকতেই মাঠে নামেন। ম্যাথু রেনশকে নিয়ে শেষ ১২ বল কোনোরকমে পার করেন স্মিথ।

পড়ন্ত বিকেলের রোমাঞ্চকর পারফরম্যান্স বাংলাদেশকে এগিয়ে দিয়েছে। অসি শিবিরে যে দাপট দেখানো শুরু করেছেন সাকিব-মিরাজরা, সেটা অব্যাহত থাকলে ভালো কিছু্র প্রত্যাশা করতেই পারে পুরো বাংলাদেশ! 




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ আগস্ট ২০১৭/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়