ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সময় বাঁচাবে ‘ডিজিটাল মানুষ’

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৫, ৭ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সময় বাঁচাবে ‘ডিজিটাল মানুষ’

ছাইফুল ইসলাম মাছুম: যতই সময় যাচ্ছে নগর জীবনে মানুষের ব্যস্ততা তত বাড়ছে। বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা সোহেল চৌধুরী। তিনি পরিবার নিয়ে ধানমন্ডি থাকেন। সাপ্তাহখানেক হলো বাসার ফ্রিজ নষ্ট। ব্যস্ততার কারণে তিনি ফ্রিজ ঠিক করার সময় পাচ্ছেন না। তিনি জানেনও না, কোথায় গেলে খোঁজ পাওয়া যাবে ফ্রিজ মেকারের। কেবল সোহেল চৌধুরী নন, দৈনন্দিন এমন সংকট রাজধানীর হাজারো মানুষের।

দৈনন্দিন সংকট সমাধানে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী খন্দকার আলিফ ও তার টিম তৈরি করেছে ‘ডিজিটাল মানুষ’ অ্যাপস। রাজধানীর অলিগলিতে আর খুঁজতে হবে না ফ্রিজ মেকার কিংবা এ ধরনের শ্রমজীবী মানুষকে। ডিজিটাল মানুষ অ্যাপসে পাওয়া যাবে সব ধরনের শ্রমজীবী মানুষের খোঁজ। হাতের স্মার্টফোনের পর্দায় কয়েকবার আঙুল ছোঁয়ালেই পাওয়া যাবে সবাইকে। বৈদ্যুতিক, তালা, গ্যাস, রং, গাড়ির মিস্ত্রি থেকে শুরু করে চর্মকার, স্যানিটারি সেবাদাতা, ইন্টারনেট সেবাদাতা, লন্ড্রি, সংবাদপত্রের হকার, ডেকোরেটর, তাঁতি, বাসা বদলের জন্য শ্রমিক- সব মিলবে এক অ্যাপে। তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যাবে স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন ‘ডিজিটাল মানুষ’ -এ। এতে সময় বেঁচে যাবে।

ডিজিটাল মানুষ অ্যাপটি নির্মাণের পেছনে লুকিয়ে আছে উদ্যোক্তা খন্দকার আলিফের জীবনের কিছু মজার ঘটনা। খন্দকার আলিফ রাইজিংবিডিকে জানান, একদিন বাসায় সারা দিন কাজ করে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তার ছোট ভাই আনান স্কুল শেষে বাড়ি আসে এবং দরজার বেল দিতে থাকে। আলিফ ঘুমিয়ে থাকায় শুনতে পাননি। আনান অনেক অপেক্ষা শেষে সিদ্ধান্ত নেয় তালা মিস্ত্রি ডেকে খুলবে। কিন্তু আনান জানে না কোথায় গেলে তালার মিস্ত্রি পাওয়া যাবে। সে খুঁজে খুঁজে আরও ক্লান্ত হয়ে পড়ল। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটতো। একদিন অলি, আলিফ, আনান তিন ভাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল এর কোনো সমাধান কি করা যায় না? ব্যাস হয়ে গেল, আলিফের মাথায় তখন এই অ্যাপ বানানোর ধারণা আসে। অ্যাপ নির্মাণে আলিফকে সহযোগিতা করেন বন্ধু শাজিদ হাসান সজিব।

ব্যাক্তিগত অর্থায়নে তৈরি ডিজিটাল মানুষ অ্যাপ পয়লা মে ২০১৭ সালে উম্মোচন করা হয়। এই অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা পাঁচ মাসে দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার। এখন শুধু ঢাকা সিটিতে অপ্যাটি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই ডিজিটাল মানুষ অ্যাপসকে আরও উন্নত ও সহজতর করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা শহরের ৯০টি এলাকার প্রায় ৬ হাজার শ্রমজীবীর তালিকা করা হয়েছে। এই সুবিধাকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছে ডিজিটাল মানুষ টিমের সদস্যরা। ইতিমধ্যে ঢাকার বাহিরে চট্রগ্রাম, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ ও নারায়নগঞ্জে ডিজিটাল মানুষ অ্যাপসটির ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে।

ডিজিটাল মানুষ অ্যাপটি স্বল্প সময়ে সাড়াও পেয়েছে বেশ। কম সময়ে অর্জন করেছে জাতীয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য। দৈনন্দিন কাজে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এই অ্যাপ নিজেদের ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান দখল করে অর্জন করেছে ‘এমবিলিয়নথ সাউথ এশিয়ান অ্যাওয়ার্ড-২০১৭’। গত ৪ আগস্ট ২০১৭ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের অংশগ্রহণে ওয়ার্ল্ড সামিট এবং ডিজিটাল এম্পাওয়ারমেন্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত ‘এমবিলিয়নথ সাউথ এশিয়ান অ্যাওয়ার্ড-২০১৭’তে তারা এ সম্মান অর্জন করে। ডিজিটাল মানুষ অ্যাপের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন অ্যাপটির উদ্যোক্তা খন্দকার আলিফ ও সাজিদ হাসান সজিব এবং অ্যাপটির উপদেষ্টা আমিন উদ্দিন জীবন। দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের অংশগ্রহণে মোট ২৯৪টি মোবাইল অ্যাপস নির্মাণকারী দল এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। পরে উদ্যোক্তারা ২৯৪টি মোবাইল অ্যাপসের মধ্যে ২৯টিকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।

খন্দকার আলিফ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ায় বাবার মুখে শোনা বাস্তব আত্মত্যাগের গল্পগুলো থেকে দেশ ও মানুষের জন্য কিছু করার স্বপ্ন কাজ করত। সেই স্বপ্ন থেকে আমাদের ‘ডিজিটাল মানুষ অ্যাপস’। শ্রমজীবী বা পেশাজীবী মানুষের পরিশ্রমেই একটি দেশ গড়ে ওঠে। তাদের পরিশ্রমকে লাঘব করতে এবং তাদের উপযুক্ত সম্মান ও সুবিধা প্রদানই এই অ্যাপ-এর লক্ষ্য।

‘ডিজিটাল মানুষ’ অ্যাপ গুগল প্লেস্টোরে পাওয়া যাবে। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম-চালিত স্মার্টফোনে অ্যাপটি ব্যবহার করা যাবে। ডাউনলোডের ঠিকানা: ঠিকানার ওয়েবসাইটেও এই সেবা পাওয়া যাবে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ অক্টোবর ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়