ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগবিধি চূড়ান্ত হচ্ছে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ৯ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগবিধি চূড়ান্ত হচ্ছে

কেএমএ হাসনাত : তিন বছর ধরে শূন্য গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের ৯ পরিচালকের পদে নির্বাচন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার।

গ্রামীণ ব্যাংক (পরিচালক নির্বাচন) বিধিমালা ২০১৪ সংশোধনের জন্য আগামী ১৭ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক বসছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এম ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান খন্দকার মোজাম্মেল হোসেন ব্যাংকটির সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের ৯ পরিচালকের পদ খালি থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি পরিচালকের পদ শূন্য থাকার কারণে ব্যাংকটির স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন ওই চিঠিতে।

অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের বাৎসরিক বৈঠকে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগে রাইজিংবিডির এ প্রতিবেদককে এ বিষয়ে বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের ৯ পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি অবহিত আছি। এ বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কাজ করছে। তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগির পরিচালক নির্বাচনের বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে।

গ্রামীণ ব্যাংকে পরিচালকের মোট পদ ১২টি। এর মধ্যে চেয়ারম্যানসহ তিনজন পরিচালক নিয়োগ দেয় সরকার। বাকি ৯টি পদে ব্যাংকটির ঋণগ্রহীতা সদস্যদের মনোনীত করে নিয়োগ দেওয়া হতো। ২০১৪ সালে গ্রামীণ ব্যাংক (পরিচালক নির্বাচন) বিধিমালা জারি করে সরকার। ওই বিধিমালা অনুযায়ী ব্যাংকটির সব সদস্যের সরাসরি ভোটে ওই ৯ জন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটির মোট ঋণগ্রহীতা সদস্যের সংখ্যা ৮৯ লাখ ১৫ হাজার। এই বিপুলসংখ্যক সদস্যের সরাসরি ভোটে ৯ জন পরিচালক নির্বাচন করতে গেলে প্রার্থীদের সঙ্গে রাজনীতি সম্পৃক্ত হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।

সূত্র জানায়, সদস্যদের সরাসরি ভোটে ৯ পরিচালক নির্বাচনের বিধান রেখে নতুন যে বিধিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে, সেটি কার্যকর করলে গ্রামীণ ব্যাংকে রাজনীতি ঢুকে পড়তে পারে বলে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান খন্দকার মোজাম্মেল হক তার চিঠিতে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা সদস্যদের মধ্য থেকে সরাসরি ভোটে পরিচালক নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তে আগে যেভাবে পরিচালক নির্বাচিত হতো, সেভাবেই দ্রুত পরিচালক নিয়োগের প্রস্তাব করেছেন তিনি।

ব্যাংকের কাজ ব্যাহত হচ্ছে, উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, বিধিমালা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠিত না হওয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের মতো সংবিধিবদ্ধ একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে না, যা আমরা কেউই কামনা করি না। একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময় পূর্ণাঙ্গ বোর্ড না থাকলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ আটকে থাকে এবং সার্বিক কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।

বিদ্যমান বিধিমালার বেশকিছু ধারা-উপধারা সংশোধন করার প্রস্তাব রেখে চেয়ারম্যান চিঠিতে বলেছেন, ‘বিধি, উপ-বিধিগুলো সংশোধনের অনুমোদন দেওয়া হলে দ্রুততম সময়ে পরিচালক নির্বাচন করা যেতে পারে এবং বর্তমান সমস্যার সহজ সমাধান হতে পারে। এর ফলে পরিচালক নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের পূর্ণাঙ্গ পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হবে।

বিষয়টি নিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে ঋণগ্রহীতা সদস্যদের নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের উচ্চ মহলের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। পরিচালক নিয়োগ নিয়ে যাতে কোনো জটিলতা না হয়, সেজন্যই বিধিমালায় সংশোধন আনা হয়েছে। এখন বছরের পর বছর পরিচালক নিয়োগ না হলেও আইনি কোনো জটিলতা নেই। ব্যাংকটি সফলভাবে পরিচালনায় দ্রুত পরিচালক নিয়োগ জরুরি হযে পড়েছে।

তিনি বলেন, পরিচালক নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজের নাম চেয়ে কয়েক দফা আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো সাড়া পাওয়া না পাওয়ায় ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের যে বাধ্যবাধকতা ছিল, সংশোধন করে তা তুলে নেওয়া হয়েছে।

গ্রামীণ ব্যাংকে সর্বশেষ পরিচালক নির্বাচন হয়েছিল ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি। তাদের মেয়াদ ছিল তিন বছর, যা ২০১৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে। তবে ২০১৪ সালে জারি করা বিধিমালায় বলা হয়, ‘এই বিধিমালা প্রবর্তনের ছয় মাসের মধ্যে পরিচালকদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে এবং নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যমান নির্বাচিত পরিচালকগণের পদ শূন্য হইয়াছে বলিয়া গণ্য হবে।’ ওই বিধিমালা অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন না হওয়ায় সরকার ২০১৪ সালের ২৭ অক্টোবর তা আবার সংশোধন করেছে। তবে গ্রামীণ ব্যাংক আইন, ২০১৩ এর ১১(১) উপ-ধারা অনুযায়ী নির্বাচিত ৯ পরিচালকের কার্যকাল সর্বোচ্চ তিন বছর হলেও ২০১৪ সালে জারি করা বিধিমালার ৫(১) উপ-বিধি অনুযায়ী নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা না হওয়ায় এখনো তারা নিজেদের পরিচালক বলে দাবি করছেন। এ ব্যাপারে তারা উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করেছেন, যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

এ অবস্থায় আগামী ১৭ অক্টোবর গ্রামীণ ব্যাংকের ৯ পরিচালক নিয়োগ এবং অন্যান্য বেশকিছু বিধিমাল চূড়ান্ত করতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, আইন ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, অর্থ সচিব, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন বলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ অক্টোবর ২০১৭/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়