রাইডশেয়ারিং ব্যবস্থায় নীতিমালা আসছে

কেএমএ হাসনাত : রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট গ্রহণ এবং এজন্য বার্ষিক এক লাখ টাকা ফি নির্ধারণসহ বেশ কিছু শর্ত আরোপ করে ‘রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য এখন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে। তার অনুমোদন পেলেই অর্থ বিভাগ পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে ব্যক্তিগত যানবাহন ভাড়ায় চালনার ক্ষেত্রে ‘রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭-এর খসড়া নীতিমালাটি প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই নীতিমালা অনুযায়ী রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে হবে। এক বছর মেয়াদের জন্য এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেটের জন্য এক লাখ টাকা ফি নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট প্রতিবছর নবায়ন করতে হবে আর এজন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট সংশোধন ফি হবে এক হাজার টাকা। আর প্রতিলিপি ফি ধার্যের সুপারিশ করা হয়েছে এক হাজার টাকা। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

উল্লেখ্য, উবার, পাঠাও, বাহনের মতো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বাংলাদেশে রাইডশেয়ারিং করছে। এই তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একমাত্র উবার একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ব্যক্তিগত যানবাহন ভাড়াভিত্তিক চালনা করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন দেশে এ সংক্রান্ত নীতিমালা থাকলেও বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো নীতিমালা নেই। ফলে নিয়মনীতি ছাড়াই এ ব্যবসা পরিচালিত হয়ে আসছে। এখন যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এই ব্যবসাকে একটি নিয়মনীতির মধ্যে নিয়ে আসার জন্য রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা প্রণয়ন করছে। এই নীতিমালা করা হচ্ছে মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩-এর ৫৩ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতা বলে।

সূত্র জানায়, যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রাইভেট মোটরযানের অনুকূলে প্রদত্ত রাইডশেয়ারিং মোটরযান এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো রাইডশেয়ারিং মোটরযানের মালিক বা চালক কোনো মোটরযানের রাইডশেয়ারিং সার্ভিস পরিচালনা করতে পারবেন না। রাইডশেয়ারিং মোটরযানের এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট সর্বোচ্চ তিন বছর হবে। প্রতিবছরের জন্য ফি হবে এক লাখ টাকা। তবে তিন বছর পর এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট নবায়ন করা যাবে। প্রতিবছর রাইডশেয়ারিং মোটরযান এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট ফিস হবে দুই হাজার টাকা।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, রাইডশেয়ারিং মোটরযানের এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে কিংবা নষ্ট হয়ে গেলে এক হাজার টাকা ফিস দিয়ে তার প্রতিলিপি সংগ্রহ করা যাবে।

রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের ভাড়ার হারের বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় চলাচলকৃত ব্যক্তিগত মোটরকারের ভাড়া ‘ট্যাক্সিক্যাব গাইডলাইন, ২০১০’ অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়া অপেক্ষা বেশি হতে পারবে না। তবে, যাত্রী অসন্তোষ সৃষ্টি হলে সে ক্ষেত্রে সরকার ভাড়া নির্ধারণ করতে পারবে।

প্রস্তাবিত নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের নাম এনলিস্টমেন্টের জন্য ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) অনুমোদিত এলাকার জন্য ন্যূনতম ১০০টি, চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য ন্যূনতম ৫০টি গাড়ির প্রয়োজন হবে। দেশের অন্যান্য মহানগর/শহর/এলাকার জন্য ন্যূনতম ২০টি গাড়ির প্রয়োজন হবে যা প্রাইভেট মোটরযানের জন্য প্রযোজ্য নয়।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রাইভেটকার, জিপ, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলের মতো ছোট ছোট মোটরযানের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ফলে দেশের সড়ক, মহাসড়ক ও নগরীতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তদুপরি মহানগরীতে যাত্রী চাহিদার তুলনায় গণপরিবহনের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় স্বাভাবিক যাত্রীসেবা ব্যাহত হয়। এতে সাধারণ মানুষের মূল্যবান শ্রমঘণ্টা এবং বৈদেশিক মুদ্রায় ক্রয়কৃত জ্বালানির অপচয় হয়। বিশ্বের বহু দেশে ইন্টারনেটভিত্তিক সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে রাইডশেয়ারিং সার্ভিস চালু আছে। ব্যক্তিগত মোটরযানের মালিক নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেটভিত্তিক অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে তার মোটরযানকে ভাড়ায় পরিচালনা করতে পারেন। অর্থাৎ ভাড়ার বিনিময়ে একটি ব্যক্তিগত মোটরযানকে বহুব্যক্তি বা পরিবারকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে ব্যক্তিগত মোটরযানের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা রোধ এবং যাত্রীসেবা সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে দেশে রাইডশেয়ারিং ব্যবস্থার সুযোগ সৃষ্টি করতে সরকার এই খাতটিকে একটি নীতিমালার আওতায় আনছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ নভেম্বর ২০১৭/হাসনাত/শাহনেওয়াজ/মুশফিক