ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক করিডোর উন্নয়নে ৯৬০০ কোটি টাকা দিচ্ছে এডিবি

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৪, ২১ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আন্তর্জাতিক করিডোর উন্নয়নে ৯৬০০ কোটি টাকা দিচ্ছে এডিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (সাসেক) জোটের আওতায় এলেঙ্গা থেকে হাটিকামরুল হয়ে রংপুর পর্যন্ত মহাসড়ক উন্নয়নে অর্থ সহায়তা দিতে যাচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

১৯০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেবে সংস্থাটি। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে বুধবার দুপুর ২টায় শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষ-২ তে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হবে।

এডিবির ঢাকা আবাসিক মিশনের মুখপাত্র গোবিন্দ বার মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আজম এবং বাংলাদেশে এডিবির আবাসিক মিশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন পারকাস নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন।

এডিবির ঢাকা আবাসিক মিশন সূত্র জানিয়েছে, এর আগে গত ২৪ অক্টোবর এ বিষয়ে ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করে সংস্থাটির পরিচালনা পরিষদ। ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় এডিবির সদর দপ্তরে পরিচালনা পরিষদের সভা হয়।

এ বিষয়ে এডিবির দক্ষিণ এশিয়ার প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান দোং কিউ লি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে বাংলাদেশ। তবে এজন্য দেশটির পরিবহন অবকাঠামোর উন্নতি করতে হবে। তা করতে পারলে পরিবহনের ব্যয় কমে আসবে। এ লক্ষ্যে নেওয়া প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বাণিজ্য ও সমৃদ্ধি যথেষ্ট বাড়বে।

সংস্থা সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়িয়ে অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করতে দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (সাসেক) জোটের আওতায় সহায়তা দিয়ে আসছে এডিবি। ২০০১ সাল থেকে সাসেক সদস্য দেশগুলো এ খাতে ৯১৭ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে পরিবহন খাতের ৩১ প্রকল্পে বিনিয়োগ হয়েছে ৭৩০ কোটি ডলার।

এডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাসেক আন্তঃসংযোগে বাংলাদেশের সড়ক পরিবহনকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশটিতে মোট যাত্রীর ৭০ শতাংশই সড়ক পথে যাতায়াত করেন। পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সড়ক পথের ব্যবহার হয় প্রায় ৬০ শতাংশ। দেশটিতে প্রতিবছর যাত্রী ও প্যণ পরিবহণ ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে।

এডিবি জানায়, দেশের উত্তর-পশ্চিম করিডোরের সঙ্গে সংযোগ উন্নয়নের লক্ষ্যে এডিবি দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। ১৯৯৪ সালে যমুনা সেতু প্রকল্পের অনুমোদনের সময় সংস্থাটি অর্থ সহায়তা দিয়েছে। সাসেক আন্তসংযোগ প্রতিষ্ঠায় এডিবি প্রথম দফায় ২০১২ সালে ১৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার ঋণ দেয়। এ অর্থ ব্যয় করে জয়দেবপুর-এলেঙ্গা মহাসড়কের উন্নয়ন করা হয়েছে। তাছাড়া ভুটানের সঙ্গে সংযোগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বুড়িমারি ও বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালন দক্ষতা বাড়ানো হয়েছে এডিবির প্রথম অর্থায়নে।

এডিবি জানায়, সংস্থাটির দ্বিতীয় দফার অর্থায়নে এলেঙ্গা থেকে হাটিকামরুল হয়ে রংপুর পর্যন্ত মহাসড়কের উন্নয়ন করা হবে। প্রশস্থতা বাড়িয়ে মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হবে। তাছাড়া সড়কের দুই পাশে ধীরে চলাচল করা গাড়ির জন্য একটি করে লেন নির্মাণ করা হবে। পথচারীদের জন্য নির্মাণ করা হবে ফুটওভার ব্রিজ ও ফুটপাথ। তাছাড়া সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সক্ষমতা বাড়াতেও এ তহবিল থেকে অর্থ ব্যয় করা হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৭ কোটি ডলার। এডিবির ঋণের বাইরে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নে ৪৭ কোটি ২৬ লাখ ডলার ব্যয় করা হবে। এডিবির তহবিল থেকে কয়েক দফায় অর্থ ছাড় করা হবে। প্রথম দফায় তুলনামূলক কঠিন শর্তের অরডিনারি ক্যাপিটাল রিসোর্স (ওসিআর) তহবিল থেকে ২৫ কোটি ও সহজ শর্তের এশীয় উন্নয়ন তহবিল (এডিএফ) থেকে ৫ কোটি ডলার দেবে এডিবি। এ হিসেবে প্রথম পর্বে সহায়তা হিসেবে আসবে ৩০ কোটি ডলার।

২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে মোট চার কিস্তিতে অর্থ ছাড় করবে এডিবি। তা ছাড়া এ প্যাকেজের আওতায় সড়ক পরিবহণ মহাপরিকল্পনা হালনাগাদ করতে কারিগরি সহায়তা হিসেবে ২০ লাখ ডলার দেবে এডিবি।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, গত বছরের শেষের দিকে ১২ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা ব্যয় ধরে। প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ১০ হাজার ১৩৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার বিদেশি সহায়তা পাওয়া যাবে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জানা যায়, সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশনের (সাসেক) বাংলাদেশে ৬০০ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে এ সড়কটি রয়েছে। চার দেশীয় অর্থনৈতিক করিডোর বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারের (বিসিআইএম) তালিকায় রয়েছে সড়কটি। উত্তরবঙ্গে শিল্পের প্রসারসহ বুড়িমারি ও বাংলাবান্ধা হয়ে ভারত ও নেপালের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় এ মহাসড়ক ভূমিকা রাখবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ নভেম্বর ২০১৭/হাসান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়