ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রিজার্ভ চুরি : যৌথ কিংবা এককভাবে মামলা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৩, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রিজার্ভ চুরি : যৌথ কিংবা এককভাবে মামলা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি নিয়ে নিউ ইয়র্কে মামলা করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ও সুইফটকে সঙ্গে নিয়ে এ মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ও সুইফট রাজি না হলে বাংলাদেশ ব্যাংক একাই এ মামলা করবে। মামলায় বিবাদী করা হবে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনকে (আরসিবিসি)। তবে আরসিবিসির সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও বিবাদী করা হবে, যদিও সেটি তদন্ত সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত হবে।

বুধবার বিকেল ৩টায় রিজার্ভ চুরির মামলার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা রাজী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের পরামর্শক দেবপ্রসাদ দেবনাথ।

এর আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই মামলার বিষয়ে আইনজীবীরা আলোচনা করছেন। আমরা আশা করছি, এই মামলায় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সহযোগিতা করবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হক কিউসি বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের একটি কোর্টে এই মামলা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফিলিপাইন সরকারের সঙ্গে যেন বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট না হয়, সেজন্য নিউ ইয়র্কে মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ও সুইফটের সঙ্গে কথা বলে মামলা করা হবে।

রিজার্ভ চুরির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ জড়িত রয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো সিআইডি তদন্ত করছে। এটি যখন আদালতে জমা দেওয়া হবে তখন সবাই জানতে পারবে। আর তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ জড়িত ছিল কি না, তা বলতে পারব না।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নেয় দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে ২ কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কা এবং ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায় ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে। এই ঘটনার প্রায় এক মাস পর ফিলিপাইনের একটি পত্রিকার সংবাদের মাধ্যমে বিষয়টি বাংলাদেশ জানতে পারে। এ ঘটনা চেপে রাখতে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন ড. আতিউর রহমান। বড় ধরনের রদবদল করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা মানি লন্ডারিং আইনে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরির অভিযোগ এনে ১৫ মার্চ (২০১৬) মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর সিআইডি এ পর্যন্ত ২০ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালতের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিয়েছে।

চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে এখন পর্যন্ত ফেরত এসেছে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার। বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার ফেরত পাওয়া যায়নি। বিশ্বব্যাপী আলোচিত এই ঘটনার জন্য তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাকেই এখন পর্যন্ত শাস্তির আওতায় আনা যায়নি। যদিও এর জন্য দায়ী করা হয়েছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনকে (আরসিবিসি)।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সরকার গঠিত ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখনো প্রকাশ করা হয়নি। একইভাবে রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে রিজাল ব্যাংকের ওপর করা তদন্ত রিপোর্টও প্রকাশ করেনি ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিএসপি (ব্যাংকো সেন্ট্রাল এনজি ফিলিপাইনস)। ফলে বিশ্বব্যাপী আলোচিত এই ঘটনার ভেতরের অনেক তথ্যই প্রকাশিত হচ্ছে না।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/নাসির/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়