ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দুই বছরের পড়তি ভাব কাটিয়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৬, ১৫ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুই বছরের পড়তি ভাব কাটিয়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ

নাসির উদ্দিন চৌধুরী: বিদেশ থেকে অবৈধ পথে দেশে অর্থ প্রেরণসহ বিভিন্ন কারণে কিছুটা ভাটা পড়েছিল রেমিট্যান্স প্রবাহে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ অবৈধ পথে (হুন্ডি) দেশে আসা রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নেয়ার পর গত দুই বছরের পড়তি ভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ।

কেন্দ্রিয় ব্যাংক সূত্র বলছে, রেমিট্যান্স নামে পরিচিত প্রবাসীদের পাঠানো এই অর্থ দেশের অর্থনীতির অন্যতম একটি চালিকাশক্তি। তাই বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়। গত কয়েক মাসের বিভিন্ন কর্মসূচির সুফলও পাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থানীয় বাজারে ডলারের দামসহ আমদানি বৃদ্ধি পাওয়া, প্রবাসীদের অর্থ অবৈধ পথে লেনদেনকারী মোবাইল অ্যাকাউন্টধারীদের বিরুদ্ধে অভিযানের কারণে প্রবাসীরা বৈধ পথে (ব্যাংকিং চ্যানেল) টাকা পাঠাচ্ছেন। এছাড়া বিদেশে জনশক্তি রপ্তানিও বেড়েছে। তাই রেমিট্যান্সের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সেই হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স কিছুটা কমলেও গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৪ কোটি ৭ লাখ ডলার। এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩৮ কোটি (১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন) ডলার। এ অঙ্ক গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে প্রায় ৩৭ শতাংশ বেশি এবং চলতি অর্থবছরের সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আগের মাস ডিসেম্বরের চেয়ে বেড়েছে ১৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ।

এর মধ্যে গত ডিসেম্বরে (২০১৭-১৮ অর্থবছরে) রেমিট্যান্স এসেছিল ১১৬ কোটি ডলার, নভেম্বরে ১২১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১১৬ কোটি ২৭ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার, আগস্টে ১৪১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার এবং জুলাইয়ে ১১৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী সাইদুর রহমান বলেন, ‘রেমিট্যান্স বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ ও হুন্ডি রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এ সকল উদ্যোগ গ্রহণের ইতিবাচক ফলও পেতে শুরু করেছি আমরা। আশা করছি আগামী জুন (২০১৮) নাগাদ অর্থাৎ এই অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্স প্রবাহ একহাজার ৫০০ কোটি বা ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এদিকে ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারি দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১ কোটি ৯ লাখ ডলার ও রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। যার পরিমাণ ২৩ কোটি ডলার। এছাড়া ৩৯টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৮৪ কোটি ৫ লাখ ডলার। ৯টি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ২৬ লাখ ডলার।

বিগত ৬ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এসেছিল গত অর্থবছরে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের রেমিট্যান্সের তুলনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমে এক হাজার ২৭৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসে। তার আগের অর্থবছরেও (২০১৫-১৬) রেমিট্যান্স কমেছিল ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর আগে দীর্ঘ ১৩ বছর পর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছিল ১ দশমিক ৬১ শতাংশ। এভাবে রেমিট্যান্স কমতে থাকায় নড়েচড়ে বসে সরকার। তবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড পরিমাণ এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ (১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স আসে।

প্রসঙ্গত, রেমিট্যান্স বাড়াতে মাশুল না নেওয়াসহ বিভিন্ন ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকও প্রবাসীদের জন্য বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি অবৈধ মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধে কঠোর অবস্থান নেয়। সর্বশেষ হুন্ডিরোধে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। গত ১৪ সেপ্টেম্বর হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স বিতরণের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের ২ হাজার ৮৮৭ জন এজেন্টের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করায় গত ২৯ জানুয়ারি মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির চলতি অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, প্রবাসীদের পাঠানো এই রেমিট্যান্স বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখছে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ মার্চ ২০১৮/নাসির/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়